বুধবার, ০২ জুলাই ২০২৫ ।। ১৮ আষাঢ় ১৪৩২ ।। ৭ মহর্‌রম ১৪৪৭

শিরোনাম :
আজকের পত্রিকার গুরুত্বপূর্ণ সব খবর ০২ জুলাই ২০২৫ তিন বছরে ৫ লাখ শ্রমিক নেবে ইতালি, বাংলাদেশিদের জন্য বড় সুযোগ আয়না দেখার সময় রাসূল (সা.)-এর দোয়া জুলাই আন্দোলন দমাতে ছোড়া হয় ৩ লাখ রাউন্ড গুলি বরিশালে গতি ফিরছে নূরানী বোর্ডের কাজে বাংলাদেশ খেলাফত যুব মজলিস খারুয়া ইউনিয়নের দাওয়াতি মজলিস অনুষ্ঠিত ফ্যাসিবাদ বন্ধে পিআর পদ্ধতির নির্বাচন সর্বোত্তম পন্থা: চরমোনাই পীর দ্রুত গুম-খুনের বিচার ও শহীদদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দাবি খালেদা জিয়ার জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে খেলাফত মজলিসের ৩৬ দিনব্যাপী কর্মসূচি  জুলাই স্মরণে ইসলামী ছাত্র আন্দোলন-এর দেশব্যাপী কর্মসূচি ঘোষণা

হাদিসের একজন বিদগ্ধ পন্ডিত মুফতি আব্দুল বারী ওয়াদুদী রহ.

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

ইসহাক ফরিদী ।।

আকাবিরে আসলাফ ও ওলামায়ে দেওবন্দের প্রতিচ্ছবি শায়খুল হাদিস আল্লামা মুফতি আব্দুল বারী ওয়াদুদী রহ. মুসলিম উম্মাহর চেতনার এক বাতিঘর। মানুষের আলম ও ইলমের বড় খেদমতে তিনি আজীবন লিপ্ত ছিলেন।

সমকালের নন্দিত পুরোধা এ ব্যক্তিত্ব ইলম, হিকমাহ, তাকওয়া, লেখনী ও হেকীম শাস্ত্র জ্ঞানে অনন্য ছিলেন। তিনি দেশে ও দেশের বাইরে তার অসংখ্য হাদিসের ছাত্রের কাছে “শায়েখ” উপাধিতে পরিচিত। এছাড়াও তিনি একজন খ্যাতিমান লেখক ও ইসলামি গবেষক হিসেবে সুপরিচিত ছিলেন।

শায়খুল হাদীস আল্লামা মুফতী আব্দুল বারী ওয়াদুদী রহ. ১৯৫৩ সনের ১ আগষ্ট যশোর জেলার কেশবপুর থানার খুলনার কোল ঘেষা আগরহাটি গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম ফকির আহমাদ মোল্যা এবং মাতার নাম মধুমতী বিবি।

শৈশবে তিনি গম্ভীর স্বভাবের ছিলেন। ভদ্র ও সৌজন্যতাবোধ ছিল তার ভূষণ। সুশ্রী চেহারা আর উত্তম ব্যবহারে অতি সহজে যে কারও মন জয় করতে পারতেন। শৈশবে গ্রামের ছেলেদের সাথে বিভিন্ন জ্ঞানগর্ভ প্রতিযোগিতা করতেও পছন্দ করতেন তিনি।

মুফতি আব্দুল বারী ওয়াদুদী রহ.-এর পড়ালেখার হাতেখড়ি নিজ জেলাতে। এরপর নওয়াপাড়া মাদরাসা, বরিশালের মাহমুদিয়া মাদরাসা ও মেখল ও পটিয়া মাদরাসায় পড়াশোনা করেন। তারপর হাটহাজারী থেকে দাওরায়ে হাদীস শেষ করেন। এখানেই তিনি থেমে থাকেননি। ইলমের পিপাসায় পাড়ি জমিয়েছেন ঐতিহ্যবাহি আকাবিরদের নগরী দেওবন্দে। দারুল উলুম দেওবন্দ থেকে হাদিসের উপর তাখাচ্ছুছ শেষ করেছেন। এছাড়াও তিনি বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে স্নাতকোত্তর চারটি ডিগ্রী যথা- তাখাসসুস ফিল ফিকহ, হাদীস, তাফসীর ও আদব অর্জন করেছেন।

অত্যন্ত সুনামের সাথে শিক্ষাজীবন শেষ করে তিনি কর্মজীবনের যশোর রেলষ্টেশন মাদরাসা ও নওয়াপাড়া পীরর বাড়ি মাদরাসায় কয়েক যুগ হাদিসের দরস প্রদানসহ বিভিন্ন কিতাব পড়ান। পরে এ,বি,জি,কে,ফাজিল ড্রিগ্রী মাদরাসার সহকারী অধক্ষ্যের দ্বায়িত্ব পালন করেন দীর্ঘ ৩০ বছর। আর এই আলিয়া মাদরাসার পূর্বের নাম দারুল উলুম মাজহারুল ইসলাম মাদরাসা। এটি পূর্বে কওমি মাদরাসা ছিল যা তিনি নিজেই প্রতিষ্ঠা করেন পরবর্তিতে তার ছোট ভাই আলিয়া মাদরাসাতে রুপ দেন।

তার জীবনের শেষ অংশে প্রায় এক যুগের বেশি সময়ে তিনি জামি’আ রশীদিয়া গোয়ালখালী খুলনায় শাইখুল হাদিসের মহান দ্বায়িত্বে ছিলেন। তিনি খুলনার দৌলতপুর বেব ষ্টান্ড মসজিদ ও যশোর সিটি কলেজ মসজিদের খতিবের দ্বায়িত্বে ছিলেন বহুদিন।

চরমোনাই মরহুম পীর সাহেব হুজুর প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ মুজাহিদ কমিটির খুলনা বিভাগ ও জেলার দ্বায়িত্বে ছিলেন। তিনি অত্যান্ত তুখোড় ও হৃদয়গ্রাহী যুক্তিবাদী দালিলিক আলোচক ও ওয়ায়েজ ছিলেন। বার্ধক্যে এসেও তার কন্ঠে মুখরিত হত সবাই।

যশোর-খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ইসলামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা, উন্নয়ন ও পরিচালনার দায়িত্ব অত্যন্ত নিষ্ঠার সাথে পালন করেছেন। তিনি আল্লামা আব্দুল কাইয়ুম, আব্দুল ওয়াদুদ সন্দীপি রহ. প্রমুখ মনীষীদের থেকে হাদিসের সনদ লাভ করেছেন। আল্লামা মুফতী ফয়জুল্লাহ রহ. এর অন্যতম ছাত্র তিনি।

জাহেরি জ্ঞানের পাশাপাশি আধ্যাত্মিক জ্ঞানের প্রতিও ছিল প্রবল ঝোঁক। তিনি আধ্যাত্মিক বিষয়ে হাটহাজারির আল্লামা আব্দুল ওয়াদুদ রহ.,আল্লামা মাহমুদ মাদানি রহ. ও আল্লামা আমজাদ হোসাইন (মাগুরা পীর সাহেব) থেকে খেলাফত লাভ করেছেন। তিনি জীবদ্দশায় দেশ ও দেশের বাহিরের বহু শাইখে তরিকতের হাতে বাইআত গ্রহণ করেছেন।

শায়খুল হাদীস আল্লামা মুফতী আব্দুল বারী ওয়াদুদী রহ. বহুরৈখিক প্রতিভার জীবন্ত প্রতিচ্ছবি। তিনি প্রায় অর্ধশত বই লিখেছেন। তার রচিত ‘আহকামে কুরবানি ও মাসায়েলে জবাহ’, জিকির সমস্যার সমাধান,অসতী নারীর দুর্গতিসহ প্রকাশিত-অপ্রকাশিত ৫০-এর অধিক সাড়া জাগানো কিতাব রয়েছে।

কুরআন, হাদিস ও তাফসিরের জ্ঞানে গভীর পাণ্ডিত্যের পাশাপাশি আরবি ও উর্দু ভাষার কাব্যচর্চায় শায়খুল হাদীস আল্লামা মুফতী আব্দুল বারী ওয়াদুদী রহ.-এর দক্ষতা ছিল অন্যতম। একবার তিনি হাজ্বী সাহেবদের সন্মানে আরবী কাব্য রচনা করে প্রচুর প্রসংশা অর্জন করেছিলেন।

বাংলাদেশের বাইরেও তার রয়েছে প্রশংসনীয় অবস্থান। তিনি দক্ষিনবঙ্গে সবচেয়ে প্রবীন-প্রসিদ্ধ ও শীর্ষ আলেম ছিলেন।শায়খুল হাদীস আল্লামা মুফতী আব্দুল বারী ওয়াদুদী রহ. দীনের বিভিন্ন অঙ্গনে দীর্ঘ দিনের সাধনা অবদানে দেশবাসীর নিকট বরেণ্য ও সমাদৃত। জাতীয় পর্যায়ের ওলামা-মাশায়েখ ও বুযুর্গানে দীনের নিকট তিনি বিশেষ সম্মান ও মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত। আল্লামা সৈয়দ ফজলুল করিম রহ., আল্লামা মুফতী সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করিম ও আল্লামা মুফতী সৈয়দ ফয়জুল করিম তাকে অত্যান্ত ভালবাসার নজরে দেখতেন।

বাংলাদেশে গণমুখী দ্বীনি দাওয়াতের বহুবিধ কর্মতৎপরতার পাশাপশি তার সুন্নতি অনুশীলন, দরস-তাদরিস, ও মসজিদ-মাদরাসা, ওয়াজ-মাহফিলে তার জ্ঞানগর্ভ ও অধ্যাত্মপূর্ণ বয়ান সমাজকে করছে নির্মল আলোকিত।
তিনি ব্যক্তিজীবনে দুই মেয়ে ও নয় ছেলের জনক। তার দুই স্ত্রীর ছিল, যার একজন তার পূর্বেই ইন্তেকাল করেন।

তিনি ২৫ অক্টোবর ২০১৯ রোজ শুক্রবার সকাল ১০.২০ মিনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় কালেমা পড়তে পড়তে মহান প্রভুর সান্নিধ্যে গমন করেন।

আমরা সমকালীন বিশ্বের নন্দিত পুর ও মুসলিম উম্মাহর অনন্য রাহাবর শায়খুল হাদীস আল্লামা মুফতী আব্দুল বারী ওয়াদুদীকে হারিয়ে নির্বাক। ইলম ও হাদীসের অনন্য এ রাহবারের মৃত্যূতে চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিমসহ দেশ বরেণ্য আলেমরা শোক প্রকাশ করেন।

আল্লাহ তায়ালা প্রিয় শায়েখের মাকবারাকে জান্নাতে উচ্চু মাকামে রুপান্তরিত করুন। আমীন।

আরএম/


সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ