রবিবার, ০২ নভেম্বর ২০২৫ ।। ১৬ কার্তিক ১৪৩২ ।। ১১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৭

শিরোনাম :
জাকির নায়েক ইস্যুতে ভারত সরকারের মন্তব্যের জবাব দিল ঢাকা ৭২-এর সংবিধান বাতিল করতে হবে : ইবনে শায়খুল হাদিস রিটার্নিং কর্মকর্তারা ভোটগ্রহণ স্থগিত করতে পারবেন: ইসি আনোয়ারুল গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে ভারতীয় জেলে আটক করেছে পাকিস্তান জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি ছাড়া নির্বাচন মানবে না জনগণ : মামুনুল হক ইসলামিক দলগুলো ছাড়া অন্য দলগুলোর মধ্যে সমন্বয় নেই : হাসনাত আবদুল্লাহ খতমে নবুওয়ত মহাসম্মেলন সফল করতে গোপালগঞ্জে ওলামা-মাশায়েখ  সম্মেলন অনুষ্ঠিত সৌদির শাসকদের নিয়ে যা বললেন গ্র্যান্ড মুফতি কওমি শিক্ষার্থীদের দেশ-জাতির সেবায় নিয়োজিত করার বিষয়টি কোথায় আটকে আছে? ৪ দিনের কর্মসূচির ঘোষণা প্রাথমিক শিক্ষকদের

মুসলিমদের বিপদে এগিয়ে না আসলে আল্লাহর ধমক

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আবদুল্লাহ তামিম ♦ একজন মুসলিমের বিপদে আরেকজন এগিয়ে আসবে এটাই ইসলামের সৌন্দর্য। মানুষের দুঃখ কষ্ট, দারিদ্রতার সময় তার উপকার করতে হবে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য।

রাসুল সা. বলেন, কোনো মুসলিম যদি অপর মুসলিমকে এমন স্থানে অপদস্থ ও লাঞ্ছিত করে যেখানে সে তাকে সাহায্য করতে পারত; তাহলে আল্লাহ তায়ালা তাকে এমন স্থানে অপদস্থ ও লাঞ্ছিত করবেন যেখানে সে আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করে।

হজরত ইবনে ওমর রা থেকে বর্ণিত, রাসুল সা. বলেন, কোনো ব্যক্তি যদি মুসলমানের সাহায্যে পা বাড়ায় তাহলে বিনিময়ে আল্লাহ তার কদমকে সেই দিন (অর্থাৎ হাশরের মাঠে) স্থির রাখবেন, যেদিন সব পা স্থির থাকতে পারবে না। হজরত ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, রাসুল সা. বলেন, আল্লাহ তায়ালা তৃষ্ণার্তকে সাহায্য করা পছন্দ করেন।

উপকার করার পন্থা যা ই হোক না কেন অবশ্যই নিয়্যাত ঠিক করে নিতে হবে অর্থাৎ আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলার সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে করা এবং পার্থিব কোনও উদ্দেশ্য যেমন, যার উপকার করা হলো তার কাছ থেকে কোন প্রতিদান কিংবা সামাজিক মর্যাদা পাওয়া এমন কোন পার্থিব উদ্দ্যেশে উপকার করা যাবেনা তাহলে সেটা আল্লাহ্‌ গ্রহণ করবেন না।

উপকার কেমন মানসিকতা নিয়ে করা উচিত আল্লাহ্‌ তাআলা তা বলে দিয়েছেন, আমরা তো তোমাদেরকে খাওয়াই কেবল আল্লাহর সন্তষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে। আমরা তোমাদেরকাছে কোনও প্রতিদান চাই না এবং কৃতজ্ঞতাও না। সূরাহ আল-ইনসান-৯।

কেউ যখন আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই কারো উপকার করে তখন আল্লাহ্‌ নিজেই তার প্রতিদান দিয়ে দেন দুনিয়া ও আখিরাতে।
সে আল্লাহর প্রিয় হয়ে যায়।

হাদিসে এসেছে, যে ব্যক্তি কোনো মুমিনের দুনিয়াবি সংকটগুলো থেকে একটি সংকট মোচন করে দেয়, আল্লাহ তা'আলা তার আখিরাতের সংকটগুলোর একটি সংকট মোচন করবেন।

যে ব্যক্তি কোনো অভাবগ্রস্তের অভাব মোচনে সাহায্য করবে, আল্লাহ তাআলাও তাকে দুনিয়া ও আখিরাতে স্বাচ্ছন্দ্য দান করবেন। যে ব্যক্তি কোনো মুসলিমের দোষ-গুণ গোপন করবে, আল্লাহ তাআলা দুনিয়া ও আখিরাতে তার দোষ গোপন করবেন। আল্লাহ বান্দার সাহায্যে থাকেন, যতক্ষণ বান্দা তার ভাইয়ের সাহায্যে নিয়োজিত থাকে। সহিহ মুসলিম-২৬৯৯।

এজন্য কোন উপকার করলে তা হতে হবে কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই। উপকার করার পর খোঁটা দেয়া নিকৃষ্ট কাজ গুলোর একটি।
এতে উপকার করার সাওয়াব নিষ্ফল তো হয়েই যায় এবং আল্লাহও অসন্তুষ্ট হন।

আল্লাহ্‌ এ সম্পর্কে কুরআনে বলছেন – উত্তম কথা ও ক্ষমা প্রদর্শন শ্রেয়, যে দানের পর কষ্ট দেয়া হয় তার চেয়ে, আর আল্লাহ অভাবমুক্ত, সহনশীল। সূরাহ আল-বাকারাহ-২৬৩।

দানের পর খোঁটার মাধ্যমে কষ্ট দেয়া অত্যন্ত জঘন্য কাজ। এরচেয়ে উত্তম কথা বলে ক্ষমা চেয়ে নেয়াও উত্তম। এবং খোঁটা দেয়ার মত নিকৃষ্ট কাজটি ঈমানের সাথে সংঘর্ষপূর্ণ!

যার হাত ও মুখ থেকে কোন মুসলিম নিরাপদ থাকেনা সে তো মুমিন ই নয়। কারন হাদিসে আছে, আর মু’মিন সেই, যার ক্ষতি থেকে সকল মানুষ নিরাপদ থাকে। মুসনাদে আহমাদ- ১২৫৬১।

এজন্যেই খোঁটা দেওয়াকে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা কুরআন মাজীদে কাফের-বেঈমানের কাজ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

আল্লাহ্‌ বলছেন–হে মুমিনগণ, তোমরা খোঁটা ও কষ্ট দেয়ার মাধ্যমে তোমাদের সদাকা বাতিল করো না। সে ব্যক্তির মত, যে তার সম্পদ ব্যয় করে লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে এবং বিশ্বাস করে না আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি।

অতএব তার উপমা এমন একটি মসৃণ পাথর, যার উপর রয়েছে মাটি। অতঃপর তাতে প্রবল বৃষ্টি পড়ল, ফলে তাকে একেবারে পরিষ্কার করে ফেলল। তারা যা অর্জন করেছে তার মাধ্যমে তারা কোন কিছু করার ক্ষমতা রাখে না। আর আল্লাহ কাফির জাতিকে হিদায়াত দেন না।" সূরাহ আল-বাকারাহ-২৬৪।

এভাবে খোঁটা দেয়ার মাধ্যমে সকল সাওয়াব ধুয়ে মুছে যায়! এই আয়াত থেকে বুঝা যায়। আল্লাহর জন্য কাউকে সাহায্য করার করার শর্ত হল, পরবর্তীতে সেই সাহায্যকারীকে কোন রূপ খোঁটা বা কষ্ট না দেওয়া।

যে সাহায্য,দান খয়রাত আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টির জন্য হয় না, তার পরিণাম সম্পর্কে হাদীসে ইরশাদ হয়েছে– তিন ব্যক্তি এমন, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তা‘আলা যাদের সংগে কথা বলবেন না, তাদের দিকে রহমতের দৃষ্টিতে তাকাবেন না, তাদেরকে পরিশুদ্ধ করবেন না এবং তাদের জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তি।

আবূ যর রাযি. বলেন – রাসূলুল্লাহ সা. এ কথাটি তিন-তিনবার বললেন। আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! তারা কারা, তারা তো সর্বস্বান্ত ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে গেল? তিনি বললেন,

যে ব্যক্তি পরিধেয় কাপড় টাখনুর নিচে ঝুলিয়ে রাখে;। যে ব্যক্তি উপকার করার পর খোঁটা দেয় এবং। যে ব্যক্তি মিথ্যাশপথের মাধ্যমে পণ্য চালায়। সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১০৬।

কী ভয়ানক অপরাধ! আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা রহমতের দৃষ্টিতে তাকাবেন পর্যন্ত না। তাই আমাদেরকে এই ব্যাপারে সচেতন হতে হবে। সাদাকা বা কাউকে সাহায্য করার আগে নিয়্যাত ঠিক করে নিতে হবেন, তা জন্য শুধু আল্লাহর জন্যই হয়। যারা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য আল্লাহর রাহে ব্যয় করবেন তাদের জন্য রয়েছে উৎকৃষ্ট প্রতিদান, এবং এই প্রতিদান তিনি বৃদ্ধি করে দেন।

কুরআনুল কারিমে আছে – যারা আল্লাহর পথে তাদের সম্পদ ব্যয় করে, তাদের উপমা একটি বীজের মত, যা উৎপন্ন করল সাতটি শীষ, প্রতিটি শীষে রয়েছে একশ’ দানা। আর আল্লাহ যাকে চান তার জন্য বাড়িয়ে দেন। আর আল্লাহ প্রাচুর্যময়, সর্বজ্ঞ। সূরাহ আল-বাকারাহ, আয়াত : ২৬১।

দান করে খোঁটা দেয়া ব্যক্তিকে যেমন,কাফের ব্যক্তির সাথে তুলনা করে উপমা দিয়েছে সূরা বাকারায়, ঠিক তেমনি যে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য দান করে তার ক্ষেত্রেই উপমা উল্লেখ করে আল্লাহ্‌ বলছেন আর যারা আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ ও নিজদেরকে সুদৃঢ় রাখার লক্ষ্যে সম্পদ ব্যয় করে, তাদের উপমা উঁচু ভূমিতে অবস্থিত বাগানের মত, যাতে পড়েছে প্রবল বৃষ্টি।

ফলে তা দ্বিগুণ ফল-ফলাদি উৎপন্ন করেছে। আর যদি তাতে প্রবল বৃষ্টি নাও পড়ে, তবে হালকা বৃষ্টি (যথেষ্ট)। আর আল্লাহ তোমরা যা আমল কর, সে ব্যাপারে সম্যক দ্রষ্টা। সূরাহ আল-বাকারাহ, আয়াত : ২৬৫।

আল্লাহ্‌ আমাদেরকে সকল প্রকার পাপ থেকে, নিফাক থেকে বাঁচার তৌফিক দান করুন।আল্লাহর সন্তুষ্টিপ্রাপ্ত বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত করুন।

-এটি


সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ