 আওয়ার ইসলাম : ফিলিস্তিন ইস্যুকে কেন্দ্র করে  যুক্তরাষ্ট্রের বিদায়ী প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার প্রশাসন ও নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন এর মধ্যে চলছে উত্তেজনা।  ক্রমেই তারা   জড়িয়ে পড়ছেন দ্বন্দ্বে ।
আওয়ার ইসলাম : ফিলিস্তিন ইস্যুকে কেন্দ্র করে  যুক্তরাষ্ট্রের বিদায়ী প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার প্রশাসন ও নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন এর মধ্যে চলছে উত্তেজনা।  ক্রমেই তারা   জড়িয়ে পড়ছেন দ্বন্দ্বে ।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি অধিকৃত ফিলিস্তিনে ইসরাইলের অবৈধ বসতি স্থাপন বন্ধ না হলে সংকট সমাধান সম্ভব নয় বলে ইসরাইলের প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন। অন্যদিকে ট্রাম্প তার ক্ষমতা গ্রহণের আগ পর্যন্ত ইসরাইলকে ‘শক্ত’ থাকতে বলেছেন।
গত ২৩ ডিসেম্বর (শুক্রবার) দীর্ঘদিনের রীতি ভেঙ্গে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে ইসরায়েলি বসতিবিরোধী প্রস্তাবে ভেটো না দিয়ে নীরব ভূমিকা পালন করে যুক্তরাষ্ট্র। এদিন ভেটো দেওয়ার পরিবর্তে ভোটদান থেকে বিরত থাকার সিদ্ধান্ত নেয় ওবামা প্রশাসন। এ ধরনের প্রস্তাব থেকে ইসরায়েলকে বাঁচিয়ে দিতে যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘদিনের প্রথা থেকে সরে আসে তারা।
বুধবার এক টুইটে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্ষমতা গ্রহণ করা পর্যন্ত ইসরায়েলকে ‘শক্ত থাকতে’ বলেছেন। তিনি বলেছেন, ইসরায়েল একসময় ঘণিষ্ঠ মিত্র হলেও এখন আর নেই। ইসরায়েলকে ‘তুচ্ছতাচ্ছিল্য ও অসম্মান’ করা হচ্ছে। এ অবস্থার অবসান হবে।
ট্রাম্পের এই টুইটের কিছুক্ষণ পর ৭০ মিনিটের দীর্ঘ একটি ভাষণে ইসরায়েলের বসতি স্থাপনের সমালোচনা করে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি। ভাষণে তিনি নিন্দা প্রস্তাবে ভেটো না দেওয়ার কারণও তুলে ধরেন। কেরি বলেন, ‘অধিকৃত ফিলিস্তিন অঞ্চলে ইসরায়েলের অব্যাহত বসতি স্থাপনের নিন্দা করে নিরাপত্তা পরিষদে যে প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র তাতে বাধা দেয়নি।
কারণ, দুই রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা অর্জনে এ ছাড়া ভিন্ন কোনও উপায় ছিল না। আমাদের লক্ষ্য ছিল গণতান্ত্রিক ও ইহুদি রাষ্ট্র হিসেবে ইসরায়েল যাতে প্রতিবেশীদের সঙ্গে শান্তি ও নিরাপদে টিকে থাকতে পারে, তা নিশ্চিত করা। এই ভেটো ছিল ইসরায়েল ও আমাদের স্বার্থে। ’
কেরি আরও বলেন, ‘এখন যে অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে তা চলতে দেওয়ার মানে হলো, একদিকে ফিলিস্তিনে ইসরায়েলি দখল অব্যাহত রাখা, অন্যদিকে দুই রাষ্ট্রের বদলে একটি রাষ্ট্রকে টিকে থাকতে দেওয়া। আরব জনসংখ্যা যে দ্রুতগতিতে বাড়ছে তাতে ইসরায়েলের পক্ষে একই সঙ্গে ইহুদি ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে টিকে থাকা অসম্ভব। ’ অ্যাজেন্ডার ভিত্তিতে ইসরায়েলের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করতে চাইছেন। ’
কেরি বলেন, দুই রাষ্ট্র নীতির জন্য কয়েক বছর ধরে আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টার পরও তা এখন জটিলতায় পড়েছে। শান্তি প্রতিষ্ঠার আশাবাদ মুঠো ফসকে বেরিয়ে যাচ্ছে তখন সচেতনভাবে আমরা নীরব থেকে ও কিছু না করে থাকতে পারি না। ’
কেরির এ ভাষণের কয়েক মিনিট পরেই এক বিবৃতিতে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু সমালোচনা করেছেন। তিনি কেরির ভাষণকে ইসরায়েলবিরোধী হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।
বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের খবর অনুসারে,  নিরাপত্তা পরিষদে নিন্দা প্রস্তাবে ভোট গ্রহণের আগে ওবামা প্রশাসনের কাছে ‘ভেটো’ দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছিলেন ট্রাম্প। তা সত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট্রের ভোট দেওয়া থেকে বিরত থাকার ঘটনায় টুইটারে ট্রাম্প লিখেছেন, অবস্থা বদলাবে ২০ জানুয়ারির পর। সেদিন ওবামার শেষ দিন ও ট্রাম্পের প্রথম দিন।
এর আগে মঙ্গলবারও এক টুইটে ট্রাম্প জাতিসংঘের সমালোচনা করেন ট্রাম্প। তিনি বলেন, জাতিসংঘের অনেক সম্ভাবনা আছে, কিন্তু এখন এই সংস্থা একটি ক্লাব ছাড়া আর কিছু নয়। কিছু লোক এখানে গল্পগুজব করে এবং ভালো সময় কাটায়, তার চেয়ে বেশি কিছু নয়।
ফিলিস্তিন ও ইসরায়েল বিষয়ক পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে ওবামা ও ট্রাম্প প্রশাসনের অবস্থান একেবারেই পরস্পরের বিপরীত। ওবামা প্রশাসন চায় দুই দেশের মধ্যকার সমস্যার দ্বিরাষ্ট্রভিত্তিক সমাধান হোক। অধিকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ইসরায়েলি বসতি স্থাপন বন্ধের পাশাপাশি ১৯৬৭ সালের প্রস্তাবিত সীমানা অনুযায়ী স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের পক্ষেই ওবামা প্রশাসনের বর্তমান অবস্থান। বিপরীতে ট্রাম্প প্রশাসনের ঘোষণা অনুযায়ী তারা দ্বিরাষ্ট্রভিত্তিক সমাধান নীতির বিরোধী। জেরুজালেমে মার্কিন দূতাবাস সরিয়ে নেওয়ার ঘোষণা এবং ইসরায়েলে একজন কট্টরপন্থী রাষ্ট্রদূত নিয়োগের মধ্য দিয়ে ট্রাম্প সাম্প্রতিক সময়গুলোতে আদতে আগ্রাসী জায়নবাদী প্রকল্পকেই সমর্থন দিয়ে আসছেন।
ইসরায়েলর তরফ থেকেও ট্রাম্পের প্রতি নরিঙ্কুশ আস্থার বহিপ্রকাশ দেখা গছে। জাতিসংঘে প্রস্তাব পাশের জন্য প্রথম থেকে ওবামা প্রশাসনের বিরুদ্ধে সরাসরি দোষারোপ করছেন নেতানিয়াহু। যুক্তরাষ্ট্রের এই ভূমিকার নেপথ্যে এবং ইসরায়েলবিরোধী ওই প্রস্তাব পাসে ব্যক্তি ওবামা কলকাঠি নেড়েছেন, এমন স্পষ্ট প্রমাণ হাজির থাকার কথাও বলছে ইসরায়েল। জাতিসংঘে পাস হওয়া ওই প্রস্তাবের প্রসঙ্গ ধরে নেতানিয়াহু রবিবার মন্ত্রী পরিষদের এক সভায় বলেন, ‘তারা আমাদের মুখের গ্রাস কেড়ে নিতে চায়। ’ সূত্র: বিবিসি, রয়টার্স।
ডিএস
 
                              
                           
                              
                           
                         
                              
                           
                        
                                                 
                      
                                                  
                                               
                                                  
                                               
                                      
                                         
                                      
                                         
                                      
                                        