সোমবার, ২০ অক্টোবর ২০২৫ ।। ৩ কার্তিক ১৪৩২ ।। ২৮ রবিউস সানি ১৪৪৭

শিরোনাম :
ওমরায় গেলেন জামায়াতে ইসলামীর আমির ইসলামী আন্দোলন ক্ষমতায় গেলে এক টাকাও লুটপাট হবে না: শায়খে চরমোনাই কোরআন অবমাননার দায় স্বীকার সেই অপূর্ব পালের জামায়াত-ইসলামী আন্দোলনসহ সমমনা দলগুলোর কর্মসূচি ঘোষণা তুরস্কে স্কলারশিপ পেলেন ৫ শিক্ষার্থী, এমবিএম ফাউন্ডেশনের সংবর্ধনা পাকিস্তানের শীর্ষ আলেম মাওলানা ফজলুর রহমান সিলেটে আসছেন ১৭ নভেম্বর জামায়াতের নির্বাচনি সভা ভণ্ডুল করে দিলেন বিএনপির নেতাকর্মীরা মিথ্যা মামলায় দুই মাদরাসা শিক্ষককে হয়রানি, মুক্তির দাবিতে মানববন্ধন চাঁদা না পেয়ে মসজিদের ইমামকে মারধর, স্ত্রীকে শ্লীলতাহানি ৫ দফা দাবিতে আন্দোলনরত দলসমূহের যৌথ সংবাদ সম্মেলন

'দীর্ঘ মেয়াদে শিক্ষার ধারাবাহিকতা না থাকা করোনার মতোই আরেক বিপর্যয়!'

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

করোনা পরিস্থিতি উন্নতি না হলে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার ঘোষণা দিয়েছেন দেশের প্রধানমন্ত্রী। এ নিয়ে তিনি বলেন, আমরা কোনো ধরনের ঝুঁকি নেব না। এখন আমরা আর স্কুল-কলেজ খুলছি না। সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বন্ধ থাকবে। দেখা যাক করোনাভাইরাস কী হয়। যখন এটা থামবে তখন আমরা খুলব।

এ পরিস্থিতিতে দেশের কোটি কোটি শিক্ষার্থীর ভবিষ্যত অজানা এক অন্ধাকারের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। একদিকে মনঘাতী করোনা। আর অন্য দিকে অশিক্ষার ভয়। সব মিলিয়ে দুশ্চিন্তায় গবেষকরা। এ বিষয়ে খ্যাতিমান আলেম গবেষক ও কবি মুসা আল হাফিজ’র সাথে কথা বলেছেন আওয়ার ইসলামের ডেপুটি এডিটর আবদুল্লাহ তামিম


আওয়ার ইসলাম: করোনাকালে বাংলাদেশে শিক্ষা পরিস্থিতি নিয়ে কী ভাবছেন?

মুসা আল হাফিজ: বাংলাদেশ এখন এক ক্রান্তিকালে আছে। শিক্ষা এখানে পরিবর্তনের চালিকাশক্তি। আমাদের অর্থনীতি কিংবা জীবন ও জীবনমান গভীরভাবে শিক্ষার সাথে যুক্ত।

শিক্ষাই এদেশে সবচে' সম্ভাবনার জায়গা এবং প্রয়োজনের জায়গা। কিন্তু করোনাকাল শিক্ষার মধ্যে যে বিপর্যয় নিয়ে এসেছে, সেটা অপূরণীয়। কারণ দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষার মধ্যে ধারাবাহিকতা না থাকা একটি বড় বিপর্যয়। কিন্তু করোনায় আমরা এ বিপর্যয় মেনে নিচ্ছি। এটা এক ধরণের পরাজয়।

আওয়ার ইসলাম: এটাকে বিপর্যয় বলছেন কেন?

মুসা আল হাফিজ: দেখেন, বাংলাদেশে যত শিক্ষার্থী আছে, তাদের সংখ্যাটা গুরুত্বপূর্ণ। পৃথিবীর ২০০ টি দেশে মোট নাগরিকের সংখ্যা বাংলাদেশের মোট শিক্ষার্থীদের সংখ্যার চেয়ে কম।

এতো বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী আছে, এটা এক দিক। আরেক দিক হলো, বাংলাদেশে দক্ষ জনশক্তির অভাব। বিশেষজ্ঞ ও প্রাজ্ঞদের অভাব। যদি তা না হবে, তাহলে দক্ষ বিদেশীরা কেন আমাদের দেশের কাজ নিয়ে নিচ্ছেন? প্রতি বছর শুধু বিদেশী বিশেষজ্ঞ ও পরামর্শদাতাদের ফি বাবদ দিতে হয় ৩৫ হাজার কোটি টাকা। শুধু এই টাকা দিয়ে এ দেশের ১৫ লাখ বেকারকে মাসে ২০ হাজার টাকা বেতনের চাকুরি দেয়া যায়।

তাহলে দেখা যাচ্ছে, বেকারত্ব যতটা সমস্যা, তার চেয়ে বড় সমস্যা হলো জ্ঞানদক্ষতা। ওটার অভাব দেশীয়দের মধ্যে আছে বলেই বিদেশীরা সবকিছুতে জেকে বসছেন, তা আমি বলছি না। কিন্তু জ্ঞানদক্ষতার অভাবটাকেই সামনে আনছেন পণ্ডিতরা।

সামনে বাংলাদেশের অর্থনীতি আরো বড় হতে যাচ্ছে। দক্ষ লোকবলের প্রয়োজন আরো তীব্র হচ্ছে। এ প্রেক্ষাপটে দেশীয় দক্ষ জনবল তৈরী করে উন্নয়নের ফসল দেশবাসীকে ভোগ করতে দেবেন না নিজেদের বেকার রেখে বিদেশীদের পেছনে অর্থ ঢালবেন, সেটা একটা গুরুত্বপূর্ণ সওয়াল।

কিন্তু এর গোড়ায় নিহিত আছে আরেকটি ইস্যু। সেটা হলো,আপনি জ্ঞানদক্ষ জনশক্তি তৈরী করছেন কী না! যদি সেটা তৈরী করতে চাই, তাহলে মনে রাখতে হবে, দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষার ধারাবাহিকতা না থাকলে জ্ঞানদক্ষ একটি প্রজন্ম অসম্ভব। এর মানে উন্নত ও নিয়মিত শিক্ষা জারি রাখা না রাখার সাথে আরেকটি ব্যাপার জড়িত।সেটা হচ্ছে, উন্নয়নের সুফল আপনি কতটা দেশকে ভোগ করাতে চান? যদি শিক্ষায় আজ বিপর্যয় আসে,অর্থনীতিসহ অন্যান্য সবজায়গায় এর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব পড়বেই।

অন্তত নিজের দেশের কাজ নিজেদের আয়ত্তে রাখার জন্য আমাদের নিরবচ্ছিন্ন ও মানসম্মত শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই। করোনাকালে এ জায়গায় গুরুতর ধাক্কা লেগেছে। শিশু- কিশোর,তরুণদের মাসের পর মাস শিক্ষা থেকে দূরে রেখে তাদের থেকে দক্ষতা আশা করা হবে ভুল । এটা তাদের মানসিক বিকাশকে প্রবলভাবে প্রভাবিত করবে।

আওয়ার ইসলাম: কিন্তু অন্যান্য দেশেও তো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করা হয়েছে!

মুসা আল হাফিজ: শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করা আর শিক্ষা বন্ধ করা এক কথা নয়। শিক্ষা চালিয়ে নিচ্ছে উন্নত দেশগুলো। অনলাইনকে কাজে লাগিয়ে ক্লাস চলমান আছে। অনেক দেশে আবার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়নি। আমাদেরকে দেশীয় বাস্তবতার বিচারে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। ইউরোপের বা আমেরিকার বাস্তবতা দিয়ে আমাদের পরিস্থিতি বিচার করলে চলবে না।

তারা তাদের শিক্ষার ধারাবাহিকতা ভিন্নভাবে ধরে রেখেছে।যার সক্ষমতা ও প্রস্তুতি তাদের ছিলো। আমাদের দেশে শিক্ষার ধারাবাহিকতা বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়াকেই সমাধান যদি ভাবা হয়, সেটা তো মানা যায় না। আমি মনে করি,এই বন্ধ হওয়াটাই এক সমস্যা, সমস্যার সমাধান নয়।সরকারের উচিত,বাংলাদেশী বাস্তবতায় বিকল্প উপায় নিয়ে কাজ করা।

অনলাইনভিত্তিক ক্লাশ চলমান আছে কোথাও কোথাও।কিন্তু এর জন্য প্রতিষ্ঠানগুলো কতটা প্রস্তুত বা সক্ষম, সেটাও মাথায় রাখতে হবে।বলা হচ্ছে টেলিভিশনে ক্লাসের কথা। বাংলাদেশী বাস্তবতায় সেটা কতটা টেকসই,সে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে লাখ লাখ শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার ঝুকি বাড়ছে। সরকার ও চিন্তাবিদ নাগরিকদের তাই উত্তম বিকল্পগুলোকে যাচাই করে দেখতে হবে। এমনকি শক্ত ও যথোচিত স্বাস্থ্য বীধি আরোপ করে সীমিত পর্যায়ে হলেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া যায় কি না, ভেবে দেখতে হবে। মনে রাখতে হবে, প্রয়োজনই উদ্ভাবনের জননী!

আওয়ার ইসলাম: কওমী মাদরাসার ব্যাপারে কী ভাবছেন?

মুসা আল হাফিজ: কওমী মাদরাসা দীর্ঘ মেয়াদে বন্ধ থাকার ফলাফল হবে গুরুতর। কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে সরকারী উদ্যোগ ও দায়িত্বে নানা মুখি বিকল্প থাকতে পারে। কিন্তু কওমী মাদরাসার সামনে বিকল্প থাকে না বললেই চলে।

অনলাইনে ক্লাস বা অন্য বিকল্পগুলোর প্রস্তুতি ও উপকরণ নিতান্তই সীমিত। এখানকার শিক্ষার ধারাটাই তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি ধারাবাহিকতা দাবি করে। এতে দীর্ঘমেয়াদী ছেদ পড়ার প্রভাব কওমী শিক্ষার জন্য মারাত্মকভাবে হুমকি তৈরী করবে।একজন হাফিজ কয়েক বছরে যা মুখস্ত করেন, তা ভুলিয়ে দেয়ার জন্য শিক্ষার ধারাবাহিকতাহীন কয়েকটি মাসই যথেষ্ট!

আওয়ার ইসলাম: সামগ্রিকভাবে কওমির জন্য সমস্যার ধরণটা কেমন হবে?

মুসা আল হাফিজ: দেখেন, বাংলাদেশ শিক্ষা ও তথ্য পরিসংখ্যান ব্যুরো বা ব্যানবেইসের জরিপে
সারা দেশে আছে ১৩ হাজার ৯০২টি কওমি মাদ্রাসা। শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ১৪ লাখ। এই যে সংখ্যাটা, সেটা আর থাকবে না।

কারণটা একটু ভালোভাবে লক্ষ্য করলেই ধরতে পারবেন। মাদরাসা প্রধানত ঢাকায়। বরিশাল বিভাগে যেখানে এক হাজার চল্লিশটি মাদরাসা,সেখানে ঢাকা বিভাগে আছে, ৪ হাজার ৫৯৯টি। ব্যানবেইসের তথ্য মতে, ঢাকার পরেই চট্টগ্রামে মাদ্রাসা বেশি, সেখানে আছে ২ হাজার ৯৮৪টি মাদরাসা। রাজশাহীতে ১ হাজার ৭০২টি, সিলেটে ১ হাজার ২৪৬টি, রংপুরে ১ হাজার ১৭৬টি, খুলনায় ১ হাজার ১৫৫টি।

ব্যানবেইসের তথ্য বলছে, মোট কওমি মাদ্রাসার মধ্যে ১২ হাজার ৬৯৩টি পুরুষ ও ১ হাজার ২০৯টি মহিলা মাদ্রাসা রয়েছে।

এই যে ঢাকা বা চট্টগ্রামের মাদরাসার সংখ্যা, এর প্রধান একটি অংশ কিন্তু স্থায়ী জায়গায় প্রতিষ্ঠিত নয়।
শহরাঞ্চলের মাদরাসাগুলোর সত্তর ভাগই ভাড়াটিয়া এবং অধিকাংশই হাফেজী, প্রাইভেট, মহিলা মাদরাসা ইত্যাদি।

ওআই/আবদুল্লাহ তামিম


সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ