|| মাওলানা মামুনুল হক ||
ঘড়ির কাটায় হয়ত তখন বেলা ১২টা বাজে। হজের পর আজ একটু সুযোগ করে গিয়েছিলাম তাওয়াফ করতে। প্রচণ্ড রোদ থাকলেও দিনের অন্য সময়ের তুলনায় ভিড় একটু কম থাকে এই সময়ে।
হজের পর ঘরফেরত হাজী সাহেবান কেউ নফল তাওয়াফ করছেন। কেউ করছেন উমরাহ মসজিদে আয়শা থেকে। আবার অনেকে করছেন বিদায়ি তাওয়াফ। তাই এখন দিনের অধিকাংশ সময় মাতাফ, দ্বিতীয় তলা ও ছাদ সব জায়গাতেই তাওয়াফের ভিড় লেগে থাকে।
একা থাকায় বায়তুল্লাহ শরিফের কাছাকাছি থেকেই তাওয়াফ করছিলাম। আমি তখন তাওয়াফের শেষ চক্কর শুরু করেছি। হামিম পর্যন্ত যেতেই পেছন থেকে কাঁধের উপর কারো হাতের ভার অনুভব করলাম। পেছন ফিরে দেখি, এক বৃদ্ধা আরব মা আমার ওপর একটু ভর দিতে চাচ্ছেন। ঘাড় ফিরিয়ে তাকাতেই তিনি আমাকে দরদমাখা কণ্ঠে বলে উঠলেন, ইয়া ওয়ালাদ, আনা উম্মুক ! (বৎস, আমি তোমার মা)
বৃদ্ধার কথাগুলো যেন আমার হৃদয় ছুঁয়ে গেল। বায়তুল্লাহর ছায়ায় রহমতে এলাহির আশ্রয় খুঁজতে থাকা আমি যেন পরম মমতায় মাতৃস্নেহের পরশ অনুভব করলাম। আমাকে যথেষ্ট সবল মনে হওয়াতেই তিনি আমার ওপর ভর দিলেন। আমি আমার কাঁধটা আরেকটু নুইয়ে দিলাম। তিনি কিছুক্ষণ এভাবেই চললেন। চলতে চলতে এক সময় হয়ত কিছুটা শক্তি ফিরে পেলেন। দুর্বল কাঁপা হাতটি ধীরে ধীরে সরিয়ে নিলেন আমার কাঁধের ওপর থেকে। এর কয়েক লমহা পরে হারিয়ে গেলেন তাওয়াফকারীদের ভিড়ে। তিনি হারিয়ে গেলেও আমার কানে যেন এখনো ভেসে বেড়াচ্ছে সেই সুমধুর ডাক, ইয়া ওয়ালাদ আনা উম্মুক!
ভূপৃষ্ঠের সবচেয়ে আপন আম্মাকে হারিয়েছি আজ প্রায় ছয় বছর হতে চলেছে। অনেক স্বপ্ন ছিল, আম্মাকে নিয়ে হজ করব। প্রথম যেবার হজ করি, আম্মাসহ হজের আবেদন করেছিলাম । কিন্তু ঘটনাচক্রে ভিসা জটিলতার কারণে আম্মাকে নিয়ে আসতে পারিনি। এরপর করি করছি করে আর আম্মার সাথে হজ করা হয়ে উঠেনি। হঠাৎ একসময় মা আমার চলে গেলেন না ফেরার দেশে ।
আমার সে ইচ্ছা অপূর্ণই থেকে গেল। আজ এই আরব মায়ের মধুর ডাক আমাকে আবার স্মরণ করিয়ে দিল মাতৃস্নেহের মমতার পরশে বায়তুল্লাহয় তাওয়াফ করার অপূর্ণ স্বপ্নের কথা…!
পৃথিবীর সব মায়েরা সুখে থাকুক । থাকুক সন্তানের মমতার চাদরে ঢাকা। আমার মায়ের ওপর বর্ষিত হোক রব্বে কাবার অফুরান রহমত !! আমিন ইয়া রাব্বাল আলামিন।
লেখক: আমির, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস; যুগ্ম মহাসচিব, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ|
এমএম/