মুহাম্মদ মিজানুর রহমান
একসময় কোরবানির ঈদ মানেই ছিল গরুর হাটে ভীষণ ভিড়ে চিড়ে-চ্যাপ্টা, দামাদামি আর পছন্দের পশু বাছাইয়ের উত্তেজনা। গরুর গোবর আর কাদায় মাখামাখি হবার ভয়তো আছেই! কিন্তু সময় বদলেছে। প্রযুক্তির ছোঁয়ায় বদলে গেছে গরু কেনার ধরণ। এখন মোবাইল কিংবা ল্যাপটপেই ঘরে বসে পছন্দের কোরবানির পশু বেছে নেওয়া যাচ্ছে অনলাইন হাট থেকে।
বিশেষ করে করোনাকালীন পরিস্থিতির পর এ ধরণের ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় অনলাইন কোরবানির পশু বিক্রির উদ্যোগ নেয় সরকার ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো। বর্তমানে এটি একটি স্বাভাবিক এবং দ্রুত বিস্তৃত হওয়া বিকল্প বাজারে পরিণত হয়েছে।
অনলাইন হাটের সুবিধা-অসুবিধা
ব্যস্ত এই শহরে মানুষ আরও ব্যস্ত! দুদন্ড সময় নেই কারও। অনলাইন হাট থেকে গরু কেনার সবচে বড় সুবিধা হচ্ছে, এতে আপনার সময় বাঁচবে। গরুর হাটে যাওয়ার অভিজ্ঞতা যাদের আছে তারা জানেন প্রচন্ড ভিড়ের মধ্যে পছন্দমতো একটি গরু কেনা কতোটা কষ্টসাধ্য! এবং কত সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। তাছাড়া ভিড়-বাট্টাতো আছেই! এর উপর আছে পকেটমার, দালালের উটকো উপদ্রব! অনলাইনে গরু কেনার আরেকটি বড় সুবিধা হচ্ছে—মহিলারা গরুর হাটে যেতে পারেন না। তাই গরু কেনায় তাদের কোনো অংশগ্রহণ থাকে না। কিন্তু অনলাইনে—পরিবারের সবাই ঘরে বসেই পশু দেখা, বাছাই ও কেনার সুযোগ পান। তাছাড়া অনলাইনে পশুর ওজন, বয়স, জাত, স্বাস্থ্য তথ্য ও ভিডিওসহ বিস্তারিত বিবরণও আপনি পাবেন। অনেক প্ল্যাটফর্মে সরবরাহকারী যাচাই করার সুযোগ রয়েছে এবং অগ্রিম অর্থ দিয়ে বুকিংও করা যায়। পাশাপাশি হোম ডেলিভারির সুবিধাতো পাবেনই। কেউ কেউ কোরবানি দিয়ে মাংস প্যাকেট করে বাসায়ও পৌঁছে দিচ্ছে। অনলাইনে কেনাকাটার সবচে বড় অসুবিধা হচ্ছে, ভিডিও বা ছবিতে গরুটিকে সুদর্শন এবং নাদুস-নুদুস দেখালেও বাস্তবে সেরকম নাও হতে পারে। হতে পারেন প্রতারণার শিকারও। ইদানীং ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ছাড়াও বিভিন্ন খামার অনলাইনে সরাসরি পশু বিক্রি করছে।
‘সিটিসেল গরুর হাট’, ‘এগরো’, ‘ফার্মহাউজ বাংলাদেশ’, ‘ধারাবাহিক খামার’ ইত্যাদি অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ক্রেতাদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।
গরুর হাটের এই ডিজিটাল রূপান্তর শুধু সময়ের দাবি নয়, বরং ভবিষ্যতের কোরবানির কেনাকাটায় এক নতুন দিগন্ত। নিরাপদ, স্বচ্ছ ও আধুনিক ব্যবস্থায় অনলাইন কোরবানি হাট দিন দিন মানুষের আস্থা অর্জন করছে। তাই প্রযুক্তিকে পাশে রেখে ঈদের আনন্দ আরও সহজ ও নিরাপদ করে তুলছে এই ডিজিটাল পশুর হাট।
এমএইচ/