|| মুহাম্মদ মিজানুর রহমান ||
প্রতি বছর প্রায় ১০ লাখ পশু কুরবানী হয় হজের সময়। অনেকের মনেই হয়তো প্রশ্ন জাগে, এত পশুর গোশত কী হয় বা কোথায় যায়? এ প্রতিবেদনে সেই প্রশ্নের উত্তরই খুঁজবো আমরা।
প্রতি বছর ২৫ লাখের ওপর মানুষ মক্কায় হজ ও ওমরা পালন করেন। হজের গুরুত্বপূর্ণ আনুষ্ঠানিকতা হাদি বা কুরবানি। প্রতিবছর লক্ষ লক্ষ হজযাত্রীকে এ নির্দেশ পালনে অংশ নিতে হয়। কিন্তু এত বিপুলসংখ্যক পশু জবাই, স্বাস্থ্যবিধি রক্ষা, পরিবেশের ভারসাম্য ও ন্যায্য বণ্টন নিশ্চিত করা—এ এক বিশাল চ্যালেঞ্জ। আর এই চ্যালেঞ্জকেই সুযোগে রূপ দিয়েছে সৌদি আরবের ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক পরিচালিত আদাহি প্রকল্প। প্রকল্পটি ১৯৮৩ সালে চালু হয়।
এই প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য হলো—হজযাত্রীদের পক্ষে শরিয়তসম্মত ও স্বাস্থ্যসম্মতভাবে পশু কুরবানি সম্পন্ন করে তা বঞ্চিত মানুষের মাঝে বণ্টন করা। হজযাত্রীরা অনলাইনে বা নির্ধারিত বিক্রয়কেন্দ্র থেকে কুপন কিনে কুরবানির জন্য নিবন্ধন করতে পারেন। বাকিটা সম্পন্ন করবে আদাহির বিশেষায়িত টিম। পশু কুরবানির পর, হজযাত্রীদের এসএমএস বা ইমেইলের মাধ্যমে নিশ্চিতকরণ পাঠানো হয়।
প্রতিবছর প্রায় ১০ লাখেরও বেশি পশু কুরবানির ব্যবস্থা করা হয় এই প্রকল্পের মাধ্যমে। অত্যন্ত দক্ষতা ও প্রযুক্তিনির্ভর ব্যবস্থাপনায় নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই সব কিছু সম্পন্ন করা হয়। প্রকল্পটিতে নিয়োজিত থাকে প্রায় ৪০ হাজার কর্মী, যার মধ্যে শরিয়াহ বিশেষজ্ঞ, পশু চিকিৎসক, কসাই এবং পরিবহনকর্মী রয়েছেন।
আদাহি তার এই বিশাল কর্মযজ্ঞ শুরু করে একদম প্রাথমিক পর্যায় তথা পশু কেনার মধ্য দিয়ে। হজের মৌসুমে উৎসর্গ করা পশুর সিংহভাগই হচ্ছে ভেড়া। এসময় প্রায় ১২ লাখ ভেড়া তারা সংগ্রহ করে। আধুনিক পদ্ধতিতে পশু জবাই শেষ হয়ে গেলে পশুর মাংস কেটে ও পরিষ্কার করে প্যাকেজিং করা হয়। প্যাকেটভর্তি এসব মাংস পরে সংরক্ষণ করা হয় ১০ লাখ বর্গমিটার জমি জুড়ে বিস্তৃত সুবিশাল হিমাগারে ।
কুরবানির পশুর গোশত প্রথমে মক্কার গরিবদের মধ্যে বিতরণ করা হয়। পরে বাকি অংশ বিশ্বের ৩০টিরও বেশি দরিদ্র দেশে প্রেরণ করা হয়, যার মধ্যে বাংলাদেশও রয়েছে। ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের তথ্যমতে, গত ৪০ বছরে ১ কোটির বেশি মানুষের কাছে গোশত পৌঁছে দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
এ প্রকল্পের মাধ্যমে হজযাত্রীরা যেমন কষ্ট ছাড়াই কুরবানির বিধান পালনের সুযোগ পাচ্ছেন, তেমনি বিশ্বের অসহায় মানুষের মুখেও হাসি ফোটানো সম্ভব হচ্ছে।
আদাহি প্রকল্প একদিকে ইসলামী শরিয়াহর প্রতি পূর্ণ শ্রদ্ধাশীল, অপরদিকে এটি এক আধুনিক ব্যবস্থাপনা মডেল, যা হজ ব্যবস্থাপনায় নৈপুণ্যের নতুন উদাহরণ তৈরি করেছে।
এসএকে/
 
                              
                           
                              
                           
                         
                              
                          
 
                        
                                                  
                                                  
                                               
                                                  
                                               
                                      
                                         
                                      
                                         
                                      
                                         
                                      
                                        _medium_1757047336.jpg) 
                               
                               
                              