ফাঁসির দণ্ড থেকে খালাস পেয়ে কারামুক্ত হয়েই জামায়াতে ইসলামীর নেতা এটিএম আজহারুল ইসলাম দলের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন। তিনি এই মুক্তির জন্য আল্লাহর প্রতি শোকরিয়া জানানোর পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন। এই মুক্তির মাধ্যমে নিজের নতুন পথচলা শুরু হয়েছে জানিয়ে জামায়াতের এই সাবেক সেক্রেটারি জেনারেল বলেছেন, বাকি জীবন তিনি ইসলামি মূল্যবোধের পক্ষে এবং দেশ ও জনগণের স্বার্থে আমৃত্যু লড়াই চালিয়ে যাবেন।
বুধবার (২৮ মে) সকাল সাড়ে ৯টার দিকে মুক্তি পাওয়ার পরপর শাহবাগে আয়োজিত দলের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে আজহারুল ইসলাম এসব কথা বলেন। এ সময় জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমানসহ দলের কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
সংবর্ধনা মঞ্চে দেওয়া বক্তব্যে আজহারুল ইসলাম আবেগতাড়িত হয়ে পড়েন। বারবার তার কণ্ঠ থেমে যাচ্ছিল। ভারী কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘প্রায় ১৪ বছর পর আমি আজ ছাড়া পেলাম। আমি এখন মুক্ত। আমি এখন স্বাধীন, আলহামদুলিল্লাহ। আমি এখন স্বাধীন দেশের একজন স্বাধীন নাগরিক। আল্লাহ যদি তৌফিক দেন, অবশ্যই বাকি জীবন আপনাদের সাথেই থাকবো ইনশাআল্লাহ।’
নিজের প্রতি হওয়া অন্যায়ের প্রসঙ্গ তুলে ধরে জামায়াতের এই নেতা বলেন, ‘আমার অপরাধ কী ছিল? আমার অপরাধ ছিল আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস। আমি আপনাদের কাছে দোয়া চাই, আমি যেই অপরাধে যেই ফাঁসির কাষ্ঠ থেকে ফিরে এসে আমিরে জামায়াতের কাছ থেকে ফুলের মালা পাচ্ছি, আমি যেন আজীবন সেই দীনের পথে টিকে থাকতে পারি। আমি যেন শহীদ হতে পারি। সেই তাওফিক আল্লাহর কাছে কামনা করছি। যে শাহাদাতই আমাকে জান্নাত দিতে পারে। আমাদের নেতৃবৃন্দ শাহাদাতের তামান্না লালন করতেন। যেই দল যে জাতি শাহাদাতের তামান্না করে এগিয়ে যায় সেই দল-জাতিকে কখনও কেউ দমাতে পারে না।’
এটিএম আজহার বলেন, ‘এই মুক্তি শুধু আমার নয়, এটি একটি দীর্ঘ লড়াইয়ের ফল। একটি অন্যায় ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলায় আমাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সত্য চিরকাল চাপা থাকে না। আজ সেই সত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।’
সংশ্লিষ্টদের ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি সর্বপ্রথম আদালতকে ধন্যবাদ জানাতে চাই। তারা দেশে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করছেন। তবে এটা সত্য যে, এতদিন দেশে ন্যায়বিচার ছিল না। বিচারব্যবস্থাকে ব্যবহার করা হয়েছে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার হাতিয়ার হিসেবে। আমাদের অনেক ভাইকে জুডিশিয়াল কিলিংয়ের মাধ্যমে দুনিয়া থেকে বিদায় করা হয়েছে।’
আজহার বলেন, ‘যারা ১৫ বছর ধরে রাজপথে নিজেদের রক্ত ঢেলে জনগণের ঘাড়ে চেপে বসা একদলীয় শাসনের অবসান ঘটিয়েছেন, তাদের শাহাদাতের সর্বোচ্চ মর্যাদা কামনা করি। এই রক্ত কখনো বৃথা যাবে না। এই আত্মত্যাগই বাংলাদেশের ভবিষ্যতের জন্য আলোর পথ দেখাবে।’
আবার রাজপথে থাকার অঙ্গীকার জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি জানি, এই মুক্তির দায়িত্ব আমার ওপর আরও অনেক বড় দায়িত্ব নিয়ে এসেছে। আমি কথা দিচ্ছি, আল্লাহ যদি আমাকে তৌফিক দেন, তবে জীবনসায়াহ্ন পর্যন্ত জনগণের অধিকার, ন্যায়বিচার ও ইসলামি মূল্যবোধের পক্ষে লড়াই চালিয়ে যাব। আমি আপনাদের সঙ্গেই থাকবো ইনশাআল্লাহ।’
এনএইচ/