মাওলানা শরীফ মুহাম্মদ
আমাদের দেশের ‘দুনিয়াদার’ রাজনীতিবিদেরা ও উন্নয়নবিদেরা যখন শখ করে বলে, দেশকে সিঙ্গাপুর বানাতে চাই, মালয়েশিয়া বানাতে চাই কিংবা সুইজারল্যান্ড বানাতে চাই, তখন কেউ মাইন্ড করে না, অনেকেই অবশ্য রসিকতা করে। কেউ মনে করে না যে দেশের মানচিত্র কিংবা সার্বভৌমত্ব পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে!
কিন্তু দ্বীনদার কোনো রাজনীতিবিদ কিংবা উন্নয়নবিদ যদি বলে, দেশকে আফগানিস্তান বানাতে চাই, তখন একশ্রেণির দুনিয়াদার (সেকুলার/পশ্চিমা-পূজারী) রাজনীতিকরা মরাকান্না শুরু করে। 'দেশের তো স্বাধীনতা শেষ, সার্বভৌমত্ব শেষ, মানচিত্র বদলে যাচ্ছে'।
কত বড় অপদার্থতা এবং হীনম্মন্যতা! যিনি দেশকে সুইজারল্যান্ড কিংবা মালয়েশিয়া বানাতে চান, তিনি উন্নয়ন, শান্তি ইত্যাদি অর্থেই কথাটা বলেন। যিনি আফগানিস্তান বানাতে চান, তিনিও শান্তি, উন্নয়ন, অগ্রগতি ইত্যাদি অর্থেই কথাটা বলেন। হ্যাঁ, এর সঙ্গে শরিয়া পরিচালিত সুশাসন ও শৃঙ্খলার বিষয়গুলোও থাকে। যেগুলো শান্তি ও উন্নয়নের সহায়ক প্রমাণিত হয়েছে; এরই মধ্যে।
এমনকি চাইলে আপনি আফগানিস্তান থেকে সার্বভৌমত্ব রক্ষা ও উদ্ধারে লড়াই সংগ্রামের অনমনীয় আদর্শের বিষয়গুলোও নিতে পারেন। কুড়ি বছর মরণপন সংগ্রাম করে দুনিয়ার সবচেয়ে বড় মাস্তানকে তারা লাত্থি দিয়ে সরিয়ে দিয়েছে। বর্তমান পৃথিবীর তো এজন্যও তাকে সালাম জানানো উচিত। তার কাছ থেকে শেখার চেষ্টা করা উচিত।
অথচ আমাদের দেশের উন্নয়নবিদ, রাজনীতিবিদ, মিডিয়াবিদ, বুদ্ধিবিদ একশ্রেণির হীনমন্যতাগ্রস্ত লোকের আচরণ দেখবেন, আফগানিস্তানের কথা শুনলেই তারা অসুস্থ হয়ে যান। এনেসথেসিয়া ছাড়াই অজ্ঞান হওয়ার দশা হয়ে যায়! আরে বাবা, ভিন্নমত থাকলে ভিন্নমতের কথা ব্যক্ত করুন, সার্বভৌমত্ব, মানচিত্র, স্বাধীনতা এসব ইস্যু তুলে মানুষকে অভিযুক্ত বানান কেন? লোক হাসান কেন?
এসব প্রতিক্রিয়া হচ্ছে চিন্তার দৈন্য, মনের হীনতা এবং পশ্চিমের অন্ধপূজা। মুক্তবুদ্ধির কথা এরা বলে, কিন্তু গোলামবুদ্ধির জগতে বিচরণ করে। স্বাধীনভাবে চিন্তা করতে পারলে এদের প্রতিক্রিয়া গঠনমূলক হতে পারতো, ভিন্নমত সুন্দরভাবে আসতে পারতো। নানা কারণে ভিন্নমত থাকতেই পারে। সেটা গ্রহণযোগ্যও হতে পারে। সমস্যা নাই তো।
আল্লাহ তায়ালা সবাইকে বুঝ দান করুন। স্বাধীন চিন্তা করার তাওফিক দান করুন।
লেখক: জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক, কলামিস্ট ও বিশ্লেষক
এমএইচ/