শনিবার, ১২ জুলাই ২০২৫ ।। ২৮ আষাঢ় ১৪৩২ ।। ১৭ মহর্‌রম ১৪৪৭

শিরোনাম :
ইসলামী আন্দোলনের গোলটেবিলে অন্য দলের যারা যোগ দিলেন  মিটফোর্ডে নৃশংস হত্যা, অন্তর্বর্তী সরকারের চরম ব্যর্থতা: যুব মজলিস জুলাইয়ের আকাঙ্ক্ষা ও স্বপ্ন রক্ষায় পিআরই একমাত্র সমাধান: পীর সাহেব চরমোনাই মিটফোর্ডে পাথর মেরে বর্বরোচিত হত্যার প্রতিবাদে চান্দিনায় বিক্ষোভ  ইসরায়েলি বিমান হামলায় গাজায় নিহত ১৭ ফিলিস্তিনি খানকায়ে আহমদিয়ার ২৭তম আধ্যাত্মিক কোর্স সফলভাবে সম্পন্ন মিটফোর্ড হত্যাকাণ্ডে দুই এজাহারনামীয় আসামি গ্রেপ্তার: জানাল র‍্যাব তীব্র গরমে হাতে তৈরি এয়ার কুলারই ভরসা আফগান ট্যাক্সিচালকদের ‘নতুন করে কাউকে ফ্যাসিবাদী হতে দেবো না’ — রিফাত রশিদ প্রশাসনিক ব্যর্থতায় আইনশৃঙ্খলার চরম অবনতি : যুবদল সভাপতি

জিহাদ নিয়ে আমার বক্তব্য ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে: মাওলানা উবায়দুল্লাহ ফারুক

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের সভাপতি ও বিশিষ্ট শাইখুল হাদিস মাওলানা উবায়দুল্লাহ ফারুকের জিহাদ বিষয়ে একটি বক্তব্য সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। পুরনো একটি আলোচনার খণ্ডিতাংশ নিয়ে নানাজন নানাভাবে সমালোচনা করেছেন। এ ব্যাপারে তিনি মুখ খুলেছেন আওয়ার ইসলামের কাছে। একান্ত আলাপে তিনি তাঁর বক্তব্যের ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তিনি দাবি করেছেন, বক্তব্যের খণ্ডিতাংশ উদ্দেশ্যমূলকভাবে প্রচার করা হয়েছে বিভ্রান্তি সৃষ্টির জন্য। ইসলামে জিহাদের গুরুত্ব, এর প্রয়োগের বিধান নিয়েও তিনি কথা বলেছেন। তাঁর সেই বক্তব্যটুকু নিচে তুলে ধরা হলো। সাক্ষাৎকার গ্রহণ ও অনুলিখন করেছেন: ইনজামামুল হক।

ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের একটি হচ্ছে জিহাদ। এটাকে যে অস্বীকার করবে সে তো কাফের হয়ে যাবে। আর আমার আলোচনা যেটি কাটছাঁট করে ভাইরাল করা হয়েছে সেটিতে আমি জিহাদ ফরজ নাকি ফরজ না এই বিষয়ে কোনো আলোচনা করিনি। ভুলভাবে আমার বক্তব্যকে উপস্থাপন করা হয়েছে। অনেক আগের একটি বক্তব্যকে সুপরিকল্পিতভাবে কাটছাঁট করে সেই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়ানো হয়েছে। পুরো ভিডিওটি দেখলেই দর্শক বুঝতে পারবে আমি কী বলতে চেয়েছি।

যেভাবে জিহাদকে সন্ত্রাস বলার বিরোধিতা আমাদের করতে হবে সেভাবে সন্ত্রাসী কার্যকলাপকে জিহাদ বলে চালিয়ে দেওয়াও ভুল। বাংলাদেশের উলামায়ে কেরাম জীবিত থাকবে আর এমন কথা কেউ বলবে এটা হতেই পারে না৷ এই দেশে অনেক সন্ত্রাসী সংগঠন আছে যারা নিজেদের কর্মকাণ্ডকে জিহাদ বলে চালিয়ে দিতে চায়। মুসলমানের দেশে আবার জিহাদ কীভাবে হয়। জাকাতের সময় যেমন দেখতে হয় যে কার ওপর জাকাত ফরজ তেমনিভাবে জিহাদের সময়ও খেয়াল রাখতে হবে যে, কার ওপর বা কোন সময়  জিহাদ ফরজ। জিহাদের জন্য রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দরকার। হাদিসেও এই বিষয়টি এসেছে যে, তোমাদের যখন যুদ্ধে ডাকা হয় তখন তোমরা যুদ্ধের জন্য বের হও। এই ডাক তো দেবেন রাষ্ট্রের আমির। যাকে মুসলমানরা অনুসরণ করে। এটি সমিতির না যে, কেউ বলল, চলো ভাই জিহাদ আর আমরা জিহাদে নেমে পড়লাম। এভাবে জিহাদ করার কথা কুরআন-হাদিসেও নেই এবং কোনো বড় আলেমও এভাবে বলেন না।

জিহাদ জরুরি তবে যেভাবে কুরআন হাদিসে এটির বাস্তবায়নের দিকনির্দেশনা আছে সেভাবে। জিহাদ জরুরি তখন যখন কোনো কারণ পরিলক্ষিত হবে। আপনি তো কোনো মুসলমানের বিরুদ্ধে জিহাদ করতে পারবেন না। এখন সে যত বড় নাফরমানই হোক না কেন। এজন্য কিন্তু রাসুল সা. কোনো মুনাফিকের সঙ্গে জিহাদ করেননি। অথচ তিনি জানতেন যে, তারা উপরে মুসলমান কিন্তু ভেতরে ভেতরে কাফের। মুসলমানের দেশে যদি কোনো কাফের বসবাস করে যাকে জিম্মি বলা হয়, তার সাথেও আপনি জিহাদ করতে পারবেন না। বাহির থেকে কোনো কাফের ভিসা নিয়ে এসে যদি মুসলিম দেশে থাকে তার সাথেও জিহাদ নেই। এমন আরও অনেক শর্ত আছে যেগুলো থাকলে জিহাদ জায়েজ হবে না। এগুলো কিন্তু কুরআন-হাদিস দ্বারাই প্রমাণিত। আমি আপনি বানিয়ে বলছি বিষয়টি মোটেও এমন না।

মুসলমান বানানোর জন্য শরিয়তে জিহাদ প্রবর্তন করা হয়নি। বরং জিহাদ প্রবর্তন করা হয়েছে, আল্লাহর দীনকে প্রতিষ্ঠিত করতে গিয়ে যদি কেউ বাধা দেয় তাহলে সেই অপশক্তিকে প্রতিহত করার জন্য জিহাদ করতে হবে। সেজন্যই জিহাদের মাধ্যমে কেউ মুসলমান হয়নি। আল্লাহর রাস্তায় দাওয়াত দেওয়ার জন্য রাস্তা উন্মুক্ত করতেই জিহাদ করা হয়েছে। এটা উন্মুক্ত করতে যদি কেউ না দেয় তাহলে রাস্তা থেকে একটা বাধাকে সরানোর নাম হলো জিহাদ।

এই হিন্দুস্তানে ৮০০ বছর মুসলমানরা রাজত্ব করেছে। কাউকে যুদ্ধ করে মুসলমান বানানো হয়নি। বরং হিন্দু রাজাদের পরাজিত করতে যুদ্ধ করা হয়েছে। এরপর খাজা মঈনুদ্দিন চিশতিসহ সমস্ত আউলিয়ায়ে কেরাম এখানে আসছেন আর দীনের দাওয়াতের মাধ্যমে লোকদের মুসলমান বানিয়েছেন। আল্লাহর জমিনে আল্লাহর দীন প্রতিষ্ঠায় যে বাধা দেবে তাকেই যুদ্ধ বা জিহাদের মাধ্যমে পরাজিত করা হবে।

হজরত থানবী রহ. বলেন, যুদ্ধের মাধ্যমে যদি ইসলাম আসত তাহলে ৮০০ বছরের রাজত্বে হিন্দুস্তানে কোনো বিধর্মী থাকত না। রাসুল সা.কে কাফের হত্যার জন্য পাঠানো হয়নি বরং কাফেরের হেদায়েতের জন্য পাঠানো হয়েছে। প্রতিটি জিহাদের পর বিজিত অঞ্চলের বিধর্মীদের বলা হয়েছে যদি তোমরা ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করতে চাও তাহলে কর অন্যথায় এখানে কর দিয়ে থাকা লাগবে৷ আল্লাহ যদি চাইতেন সারা দুনিয়ার মানুষকে মুসলমান বানিয়ে ফেলতে পারতেন। কিন্তু তিনি এমনটি করেননি। কারণ মুসলমান হবে নিজ ইচ্ছায়। যদি হেদায়েত থাকে ভাগ্যে তাহলেই কেউ মুসলমান হতে পারবে।

সমালোচনা গণতান্ত্রিক দেশের সৌন্দর্য। যে নিকৃষ্ট মানুষ সে তার লেভেলে সমালোচনা করবে আর যে ভদ্রলোক সে তার লেভেলে করবে। আর কোনো রাজনৈতিক নেতা যদি জনপ্রিয় হয়ে যায় তাহলে তাকে ঘায়েল করার চেষ্টা করবে-এটাই স্বাভাবিক।

এনএইচ/


সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ