রবিবার, ১৮ মে ২০২৫ ।। ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ ।। ২০ জিলকদ ১৪৪৬


মেয়েরা! নাভি দেখিয়ে কপালে বড় টিপ পরলেই তোমরা আধুনিক নও

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

সাবিনা আহমেদ

যখন বঙ্গ নারীকে সমঅধিকারের জন্য রাস্তায় নামতে দেখি, তাদের কথা শুনে বা তাদের বেশভূষা, স্লোগান, ব্যানার দেখে আমার কাছে মনে হয় তারা আসলে কারো অধিকার আদায়ের জন্য লড়ছে না, লড়ছে কেবল তাদের পছন্দ মতো গুটি কয়েক এজেন্ডার জন্য। আপামর নারী অধিকারের ব্যাপারে আসলে তারা না সচেতন, না সিরিয়াস। যখনই মুখ খুলে মনে হয় গায়ে পড়ে ঝগড়া করছে। এটিটিউড খুবই দৃষ্টিকটু।

আমাকে তারা রিপ্রেজেন্ট করে না, অবশ্য আমার কারো রিপ্রেজেন্টেশনের দরকার নাই। আমি আজ যেখানে পৌঁছেছি সেখানে বাংলাদেশ কেনো, বিশ্বের খুব কম নারীই পৌঁছেছে, আমি অপেক্ষায় থাকিনি কেউ আমার হয়ে লড়ে আমারটা আদায় করে দিবে, এরপর আমি আগাবো।

যদিও আমি নিজেকে নিয়ে কথা বলতে পছন্দ করি না তবুও আজ আমার কথা বলি। কীভাবে অধিকার আদায় করতে হয় তা তোমাদের জানা দরকার।

আমি আমেরিকায় পড়াশানা করেছি। জিন্স গেঞ্জির উপরে কোট আর স্কার্ফ পরে আমি ইস্ট অ্যান্ড ওয়েস্টের সমন্বয়ে চলেছি। লেখাপড়ায় অত্যন্ত ভালো করেছি, দুই বাচ্চার মা হওয়ার সাথে সাথে করপোরেট জব করেছি। জেনারেল ডাইনামিক্স, লিওনার্দো, লকহিড এর মতন প্রথম সারির ডিফেন্স কোম্পানিতে কাজ করেছি। এক্সপার্টিজ অর্জন করেছি এব্রামস-ব্র্যাডলি থেকে শুরু করে মিসাইল টেকনোলজির ওপর। বর্তমানে কাজ করছি সিনিয়র প্রোগ্রাম ম্যানেজার হিসাবে এডভান্সড রকেট ডিভিশনে। আমার নেক্সট এসাইনমেন্ট কোম্পানির হাইপারসনিক মিসাইল গ্রুপের ম্যানেজমেন্ট। দুই গ্রুপ এক সাথে পাশাপাশি কাজ করবে, যার একটার টপ দায়িত্বে থাকব আমি। অর্থাৎ আমার নিয়ন্ত্রণে, আমার ডাইরেকশনে কাজ চলবে।

আমি এখনও ধর্মীয় মূল্যবোধ থেকে পোশাক-আশাকে শালীনতা বজায় রাখি, চুল ঢেকে রাখি, দেখতে এখনও ইস্ট + ওয়েস্ট। বোর্ড রুমে যখন প্রেজেন্টেশন দেই, তখন সবাই আমার কথা শোনে, কারণ আমি আমার কাজে একজন সাবজেক্ট ম্যাটার এক্সপার্ট। আমি প্রাধান্য দেই আমার কাজের দক্ষতা, আউটপুট, আর এফিশিয়েন্সির ওপর। কাজ করতে গেলে আমি কখনও নিজেকে নারী কিংবা পুরুষ ক্যাটাগরিতে ফেলি না। সেখানে আমি কেবল একজন ইঞ্জিনিয়ার। একই চিন্তা ছিলো আমার ছাত্র জীবনে, যখন ছিলাম কেবল একজন স্টুডেন্ট। শিখতে হবে, শিক্ষা কাজে লাগাতে হবে, কোম্পানি যে আমাকে এত টাকা বেতন দেয় তার বিনিময়ে আমাকে কাজ করতে হবে। যত ভালো কাজ, তত ভালো কোম্পানির কম্পেনসেশন, তত আমার প্রমোশন। কম্পেনসেশন পছন্দ না হলে অন্য কোম্পানি আছে। যার কাছে কাজের মূল্যায়ন, তার সাথে কাজ। হিসাব সহজ।

আমার আন্ডারে কিছু মুসলিম আরব ইঞ্জিনিয়ার কাজ করে, যারা মসজিদে আসলে সামনের কাতারে নামাজ পড়ে, আর আমি পেছনের কাতারে; কিন্তু অফিসে গেলে আমি তাদের বস। এই হিসাবও সিম্পল।

আমার ভাই আমার বাবা-মায়ের মেইন টেইক কেয়ার করে, আমি টোকেন পরিমাণ। সে আমার বাবার সম্পত্তির দ্বিগুণ ভাগ পেয়েছে, আমার তাতে কোনো আপত্তি থাকা তো দূরের কথা, বরং মনে হয় নিজের কিছু ওকে দিয়ে দিলে শান্তি লাগতো, নট যে তার দরকার আছে, কারণ সে আমার থেকেও ধনী, কিন্তু পরিবারের জন্য তার স্যাক্রিফাইস অনেক। তার দায়িত্ব পালনে সে কখনও পিছিয়ে থাকে না, বরং সবার জন্য প্রয়োজনের অতিরিক্ত করে। এই হিসাব আল্লাহর বিধান। এই বিধান যখন সব পক্ষ মানে তখন আর সৌন্দর্য উপলব্ধি করতে পারে।

আমার স্বামী আমাকে কেবল যে ভালোবাসে তা নয়, বরং প্রচণ্ড শ্রদ্ধা করে। এই জন্য না যে আমার করপোরেট এচিভমেন্ট অনেক, বরং শিক্ষাগত দিকে থেকে আমি যেখানে কেবল ব্যাচেলার্স ডিগ্রিপ্রাপ্ত সেখানে তার আছে পিএইচডি। আমি টপ ডিফেন্স কোম্পানিতে কাজ করি, সেও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতা, রিসার্চ থেকে শুরু করে নাসাতে সিনিয়র স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ার হিসাবে কাজ করেছে। ব্রিলিয়ান্ট একজন সরল মানুষ। কখনও আমাকে বলে নাই তুমি নারী ঘর সামলাও, বাচ্চা সামলাও। বরং আমার কাজে আমাকে সবসময় উৎসাহিত করেছে। ঘর সংসারের কাজে আমাকে সাহায্য করেছে।

 তাই বলে ভাববেন না যে, আমি ঘর সামলে চলি না। কিংবা বাচ্চাদের মানুষ করতে পিছপা হয়েছি বা গাফিলতি করেছি। আমি সব এক সাথে করেছি। বাচ্চা এখন বড় হয়ে ডাক্তার। সবসময় আমার স্বামী আর ছেলেদের আমাকে নিয়ে প্রাউড হতে দেখেছি। এও ভাববেন না যে আমার জীবনটা ফুলের পাপড়ি দিয়ে সাজানো, আমার জীবনে বহু ঝড় ঝাপটা এসেছে, যা আমি সামলে চলেছি। এখনও চলছি।

অতএব, মেয়েরা, কাজ দিয়েই তোমার পরিচয়। মুখের কথা কিংবা চেহারা দেখিয়ে নয়। নাভি দেখিয়ে কপালে বড় টিপ পরলেই তোমরা আধুনিক নও, আধুনিকতা থাকতে হবে তোমাদের চিন্তায়, জানতে হবে কীভাবে এই বিশ্ব চলে। তোমার যৌন স্বাধীনতার দরকার নেই, দরকার চিন্তার স্বাধীনতার। যৌন স্বাধীনতা জীবনে বিশৃংখলা ডেকে আনে, জীবনকে অস্থিতিশীল করে তোলে, তোমার দরকার স্থিতিশীলতা। চিন্তার স্বাধীনতা তোমার জীবনকে পরিপূর্ণ করে তোলে।

তোমার জীবনের পরিচালক তুমি। একে তুমি যেভাবে চালাবে, সেইভাবে অর্জন করবে। নিজেকে সম্মান করো, কাজের বিনিময়ে সম্মান অর্জন কর। শত বাধা বিগ্রহে নিজের ওপর আস্থা রাখো। বাকিটা আল্লাহর ওপর ছেড়ে দাও।

লেখিকা: আমেরিকা প্রবাসী প্রকৌশলী

এনএইচ/


সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ