খেলাফত মজলিস নেতা, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র মজলিসের সাবেক সভাপতি এবং অনলাইন অ্যাকটিভিস্ট মাওলানা রুহুল আমিন সাদী (সাইমুম সাদী) রাজধানীর সাইনবোর্ড এলাকায় গতকাল শনিবার (১৮ মে) ছিনতাইকারীর কবলে পড়েন। তিনি তখন কুমিল্লা থেকে ফিরছিলেন।
ফেসবুকে সাইমুম সাদী সেই ছিনতাইয়ের ঘটনা তুলে ধরেছেন। তার ফেসবুক স্ট্যাটাসটি হুবহু তুলে ধরা হলো-
গতকাল ১৭ মে। রাত তখন ৯ টা। ঢাকায় ঢুকছি।
কুমিল্লায় প্রোগ্রাম ছিলো। শেষ করে ফিরছি।
সাইনবোর্ড ওভারব্রিজ পাড়ি দিতেই একটা লম্বা জ্যামে আমাদের গাড়ি থেমে গেলো।
আমি কারের সামনের সিটে বসে গুগল ম্যাপ ওপেন করে জ্যাম কতদুর দেখছি। আমার ডানপাশে ড্রাইভার গাড়ির জানালা খুলে এদিক ওদিক দেখছিলেন৷ অবশ্য গ্যাস শেষ হওয়ায় গরমও ছিলো ভেতরে প্রচুর।
ঠিক এ সময়ই মুখ রুমালে ঢাকা এক যুবক এসে জানালা দিয়ে হাত বাড়িয়ে ড্রাইভারের ডান হাত চেপে ধরে অন্য হাত দিয়ে বুক বরাবর ছুরি ধরে বললো, দুই হাজার টেকা দে। তাড়াতাড়ি দে।
ঘটনার আকস্মিকতা এত বেশি ছিলো যে তা বুঝে উঠতে সময় লাগছিলো। ড্রাইভার মোলায়েম সুরে বললেন, ভাই ছুরি নামান টাকা লাগলে নেন।
ও ছুরি না নামিয়েই বললো, তেড়িবেড়ি করলে মেরে ফেলব। তাড়াতাড়ি টেকা দে।
আমার পাঞ্জাবির ডান পকেটে ছিল দুইশো টাকার তিনটি নোট। বের করে ওর হাতে দিয়ে বললাম, এই নেন ভাই।
টাকা হাতে নিয়ে এবার ড্রাইভারকে ছেড়ে আমার জানালার পাশে এসে এক টানে গাড়ির দরোজা খুলে ফেললো। এবং সোজা আমার ঘাড়ে ছুরি টেকিয়ে বললো, তোর পকেটে টেকা আছে৷ টেকা দে।তবে এবার দেরি না করে সোজা পকেটে হাত দিলো৷
ছুরির আগা আমার ঘাড়ের চামড়া স্পর্শ করলো যেনো। মৃত্যুর খুব কাছাকাছি একটা সময় অতিবাহিত হচ্ছিলো যেনো। আমি বললাম, পকেটে থাকলে অবশ্যই দেব।ছুরি নামান৷ আমার ইচ্ছা কথা বলে যতটুকু সম্ভব সময় দেরি করা৷
পকেটে মোবাইল ফোন ও বের করার আগেই আমি বের করে গাড়ির ভেতরে ড্রাইভার ভাইয়ের দিকে ছুড়ে দিলাম। ও হাত দিয়ে হালকা বহনযোগ্য একটি পাওয়ার ব্যাংক এবং ফোনের চার্জার স্পর্শ করে আমার চেহারার দিকে তাকিয়ে কী মনে করে ধাক্কা দিয়ে চলে গেলো পেছনের দিকে। সম্ভবত অন্য কোনও গাড়ি টার্গেট করে।
মৃত্যুর খুব কাছ থেকে ফিরে এলাম আলহামদুলিল্লাহ।
আমি আশেপাশে তাকিয়ে দেখলাম অনেকগুলো গাড়ি থেকে আমাদের দিকে তাকিয়ে অনেকেই দেখছেন কিন্তু কেউই বের হয়ে রিস্ক নিতে চাচ্ছেন না।
অবশ্য ছিনতাইকারী একা হলেও মনে হলো সংঘবদ্ধ। সামনে পেছনে বেশ কয়েকজনকে দেখতে পেলাম। দাড়িয়ে আছে এদিক ওদিকে তাকিয়ে আছে৷
আমাদের কারের পেছনের সিটে সফরসঙ্গী দুই তাগড়া জোয়ান ছিলেন। ওরা নামলেই হয়তো ছিনতাইকারী ধরা যেত৷ কিন্তু জোয়ানরা ছিলো কিংকর্তব্যবিমুঢ়।
অবাক হওয়ার বিষয় হলো চারদিকে অগনিত গাড়ির ভেতর মানুষ বসে আছে। কিন্তু হয়তো কেউই খেয়াল করেনি। করলেও কেউ ভয়ে আসেনি। বা আসবে ও না।
অসংগঠিত জনতা কোনো শক্তি নয়, সাংগঠনিক কোনো এক কর্মশালায় শিখেছিলাম মনে পড়লো । কিন্তু ছিনতাইকারীরা অল্প হলেও সংগঠিত। এটাই তাই শক্তি।
সাইনবোর্ড এরিয়ায় ছিনতাই হয় প্রায়ই৷ গতকাল স্বচক্ষে দেখলাম।
বাসায় ফিরে ফোন অফ করে ঘুমিয়েছিলাম। ইতিমধ্যে সফরসঙ্গী কেউ কেউ অনলাইনে ঘটনা জানানোর কারণে প্রচুর ভাই বন্ধু ইনবক্সে জানতে চেয়েছেন, কল করেছেন। সকলের প্রতি কৃতজ্ঞ। আল্লাহ আপনাদেরকে উত্তম বিনিময় দান করুন।
যারা গাড়ি চালান, জ্যামের মধ্যে অবশ্যই জানালা লক করে বসে সতর্ক থাকবেন । জানালা খোলা মানে বিপদে পড়ার সম্ভাবনা বেশি। আল্লাহ সবাইকে নিরাপদ রাখুন।ে
এনএইচ/