মঙ্গলবার, ১৯ আগস্ট ২০২৫ ।। ৪ ভাদ্র ১৪৩২ ।। ২৫ সফর ১৪৪৭

শিরোনাম :
বিএনপি কি ইসলামপন্থীদের আস্থা হারাচ্ছে?  নোয়াখালীতে জিপিএ-৫ প্রাপ্ত ৩০০ শিক্ষার্থীকে সংবর্ধনা গণতন্ত্রকামী দলগুলোর মধ্যে দূরত্ব তৈরি হলে ফ্যাসিস্ট পুনর্বাসন হবে: তারেক রহমান ডাকসু নির্বাচনে প্রার্থী ৬৫৮ জন, হল সংসদে ১ হাজার ৪২৭ মাইলস্টোনের তিন শিক্ষক জাতির কাছে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন জুমার নামাজে না গেলে দুই বছরের দণ্ড হতে পারে  রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য নির্বাচন জরুরি: মির্জা ফখরুল সৌদি আরবে নতুন হজ কাউন্সেলর কামরুল ইসলাম তাওয়াফের সময় হাজরে আসওয়াদের সামনে দাঁড়িয়ে না থাকার নির্দেশ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে আস সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে ১০০০ বৃক্ষরোপণ

শেখ হাসিনার সঙ্গে সম্পৃক্তরা যুক্তরাজ্যে তাদের সম্পত্তি বিক্রি করে ফেলছেন

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

গার্ডিয়ানের প্রতিবেদন: ২০২৪ সালের আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের পতন ঘটে। ওই ঘটনার পরে আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী, এমপি, ব্যবসায়ী ও রাজনৈতিক নেতাদের অনেকে লন্ডনে আশ্রয় নিয়েছিলেন।

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের অনুরোধে যুক্তরাজ্য সরকার দুর্নীতি ও অর্থপাচারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এসব ব্যক্তিদের সম্পদ জব্দ শুরু করে।বাংলাদেশ ভ্রমণ গাইড

এই পরিস্থিতিতে সম্পদ পাচারের অভিযোগ ওঠা এসব ব্যক্তিদের অনেকে এখন যুক্তরাজ্যে তাদের সম্পদ ও সম্পত্তি বিক্রি কিংবা স্থানান্তর করছেন। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান শনিবার এক বিশেষ প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।

গার্ডিয়ান এবং ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের একটি তদন্তে দেখা গেছে, ঢাকায় তদন্তাধীন বেশ কয়েকজন বাংলাদেশি হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে যুক্তরাজ্যের সম্পত্তি বিক্রি, স্থানান্তর বা পুনঃঅর্থায়ন করেছেন বলে মনে হচ্ছে।

এই লেনদেনগুলো লন্ডনে সন্দেহভাজনদের ব্যবসা পরিচালনার স্বাধীনতা এবং লেনদেন সহজতর করতে সাহায্যকারী যুক্তরাজ্যের আইন সংস্থা এবং পরামর্শদাতাদের যথাযথ সতর্কতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।

তাই বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিরা এখন ব্রিটেনকে সতর্কতার সাথে আরো বেশি ব্রিটিশ সম্পত্তি জব্দ করার আহ্বান জানাচ্ছেন।বাংলাদেশ ভ্রমণ গাইড

যুক্তরাজ্যের ল্যান্ড রেজিস্ট্রিতে প্রকাশিত তথ্যে দেখা গেছে, গত বছরে ঢাকার তদন্তাধীন ব্যক্তিদের মালিকানাধীন সম্পত্তির বিষয়ে কমপক্ষে ২০টি ‘লেনদেনের জন্য আবেদন’ জমা পড়েছে।

এই ধরনের নথি সাধারণত বিক্রি, হস্তান্তর বা বন্ধক পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেয়।

এগুলো মধ্যে তিনটি বসুন্ধরা গ্রুপের সোবহান পরিবারের মালিকানাধীন, যার মূল্য ২৪ দশমিক ৫০ মিলিয়ন পাউন্ড মূল্যের।

গার্ডিয়ান জানিয়েছে, নাইটসব্রিজে অবস্থিত একটি চারতলা টাউনহাউস, সম্প্রতি দুটি লেনদেনের বিষয়বস্তুতে পরিণত হয়েছে, যার উদ্দেশ্য এখনও স্পষ্ট নয়। গত বছরের এপ্রিল পর্যন্ত এটি সংযুক্ত আরব আমিরাতে অবস্থিত একটি কোম্পানির মাধ্যমে সরাসরি বসুন্ধরার ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সোবহান আনভীরের মালিকানাধীন হয়েছিল।

এপ্রিল মাসে সম্পত্তিটি - দৃশ্যত বিনামূল্যে - ব্রুকভিউ হাইটস লিমিটেড নামে যুক্তরাজ্যের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছিল। ব্রুকভিউ হচ্ছে অরবিস লন্ডনের একজন পরিচালকের মালিকানাধীন,যার লিচটেনস্টাইন এবং সিঙ্গাপুরে অফিস রয়েছে। এই আবাসন পরামর্শক প্রতিষ্ঠানটি অতীতে সম্পত্তি লেনদেনে সোবহানদের পক্ষে কাজ করেছে।

লন্ডনের বাড়িটি পরবর্তীতে ৭ দশমিক ৩৫ মিলিয়ন পাউন্ডে একটি নবগঠিত কোম্পানির কাছে বিক্রি করা হয়েছে বলে মনে হচ্ছে। এই কোম্পানির একমাত্র পরিচালক একজন হিসাবরক্ষক যার কোনো অনলাইন প্রোফাইল নেই। হিসাবরক্ষক অন্যান্য একাধিক কোম্পানির মালিক এবং পরিচালক হিসাবে নিবন্ধিত, যেগুলো লন্ডনের লাখ লাখ পাউন্ড মূল্যের সম্পত্তি হস্তান্তরের বিশেষ উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয়।

ভূমি রেজিস্ট্রি রেকর্ড থেকে দেখা যায় যে, যুক্তরাজ্যের আইন সংস্থাগুলো সোবহান পরিবারের আরেক সদস্য শাফিয়াতের মালিকানাধীন সম্পত্তির লেনদেনের জন্য আরো দুটি আবেদন করেছে, যার মধ্যে সারে-এর ভার্জিনিয়া ওয়াটারে ৮ মিলিয়ন পাউন্ডের একটি প্রাসাদও অন্তর্ভুক্ত।

দ্য গার্ডিয়ান জানিয়েছে, সোবহান পরিবারের একজন সদস্য গার্ডিয়ানের মন্তব্যের অনুরোধের জবাব দেননি। তবে পূর্বে তিনি বলেছিলেন, পরিবার ‘অন্যায় কাজের সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করে এবং এই অভিযোগের বিরুদ্ধে দৃঢ়ভাবে নিজেদের রক্ষা করবে।’

সোবহান পরিবারের সদস্যরা যুক্তরাজ্যের সম্পত্তির মালিকদের মধ্যে রয়েছেন যাদের সম্পদ জব্দ করার কথা দুদক এনসিএকে বিবেচনা করার জন্য বলেছে। 

গার্ডিয়ানের তদন্তে সম্পত্তি হস্তান্তরের ব্যক্তিদের তালিকায় আরো দুজনের নাম উঠে এসেছে। গত এক বছরে দুজনেই একাধিক সম্পত্তি লেনদেনে জড়িত।

এদের একজন হচ্ছেন সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর ভাই আনিসুজ্জামান এবং অন্যজন একজন সফল ব্রিটিশ-বাংলাদেশি প্রপার্টি ডেভলপার, যার নাম গার্ডিয়ান নাম প্রকাশ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

ভূমি রেজিস্ট্রি তথ্য আনিসুজ্জামান চৌধুরীর মালিকানাধীন চারটি সম্পত্তির সাম্প্রতিক বাজার কার্যকলাপ দেখায়। এর মধ্যে রয়েছে গত জুলাইয়ে মধ্য লন্ডনের রিজেন্টস পার্কের প্রান্তে ১০ মিলিয়ন পাউন্ডের একটি জর্জিয়ান টাউনহাউস বিক্রি সম্পন্ন করা। পুনঃঅর্থায়নের সাথে সম্পর্কিত বলে মনে করা হচ্ছে এমন আরো তিনটি আবেদন এ পর্যন্ত করা হয়েছে।

আনিসুজ্জামান চৌধুরীর আইনজীবীরা জানিয়েছেন, তিনি বিশ্বাস করেন না যে তার কোনো সম্পদ জব্দ করার কোনও বৈধ কারণ আছে এবং বিপ্লবের আগে ২০২৩ সালে রিজেন্টস পার্কের সম্পত্তি বিক্রির বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছিল।

বাংলাদেশে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুসারে, লন্ডনভিত্তিক প্রপার্টি ডেভলপারকে ঋণদাতার কাছ থেকে অনিয়মিতভাবে ঋণ পেতে আনিসুজ্জামান চৌধুরী সহায়তা করেছেন কিনা তা তদন্ত করতে ইউনাইটেড কমার্সিয়াল ব্যাংকের (ইউসিবি) চেয়ারম্যান দুদককে অনুরোধ করেছিলেন।

বাংলাদেশের বৃহত্তম সংস্থাগুলোর মধ্যে একটি বেক্সিমকো গ্রুপের পরিচালক সালমান এফ রহমানের ছেলে এবং ভাগ্নের মালিকানাধীন সম্পত্তির সাথে সম্পর্কিত আরো তিনটি আবেদনের তথ্য জানতে পেরেছে দ্য গার্ডিয়ান। আহমেদ শায়ান রহমান এবং আহমেদ শাহরিয়ার রহমান দুদকের তদন্তাধীন।বাংলাদেশ ভ্রমণ গাইড

মেফেয়ারের গ্রোসভেনর স্কোয়ারে ৩৫ মিলিয়নের একটি অ্যাপার্টমেন্টসহ সম্পত্তিগুলি গত মাসে যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল ক্রাইম এজেন্সি জব্দ করেছিল।

শায়ান ও শাহরিয়ারের আইনজীবীরা জানিয়েছেন, তাদের মোয়াক্কেলরা কোনো অন্যায় কাজে সম্পৃক্ততার কথা অস্বীকার করেছেন। তারা দাবি করেছেন, বাংলাদেশে ‘রাজনৈতিক অস্থিরতার’ কারণে অনেক লোকের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে। তারা ‘যুক্তরাজ্যে যে কোনো তদন্তের সাথে সহায়তা করবেন।’

দুর্নীতি ও কর পরীক্ষা করে এমন সর্বদলীয় সংসদীয় দলের সভাপতি জো পাওয়েল জানিয়েছেন, এই ধরণের তদন্ত দ্রুত এগিয়ে নেওয়া হোক।

তিনি বলেছেন, “ইতিহাস আমাদের বলে যে তদন্ত চলাকালীন সেই সম্পদগুলো জব্দ করার জন্য দ্রুত পদক্ষেপ না নেওয়া হলে সম্পদ দ্রুত অদৃশ্য হয়ে যেতে পারে।”

এনএইচ/


সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ