মঙ্গলবার, ২৬ আগস্ট ২০২৫ ।। ১১ ভাদ্র ১৪৩২ ।। ৩ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭


মোহাম্মদ সালামা: সেই বর যিনি শহীদ হয়ে বিদায় নিলেন

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মুহাম্মদ শোয়াইব

ইসরায়েল মোহাম্মদ সালামাকে—যিনি সহকর্মী ও ভালোবাসার মানুষদের কাছে ‘আসমার’ নামে পরিচিত—তার পরিকল্পিত আসন্ন বিয়ের আগেই থামিয়ে দিল। খান ইউনুসের নাসের মেডিকেল কমপ্লেক্সে দায়িত্ব পালনের সময় এক আত্মঘাতী ড্রোন তাকে লক্ষ্য করে হামলা চালায়। ফলে সাদা কাফনের কাপড়ে মোহাম্মদ সালামা শহীদের মর্যাদায় বিদায় নিলেন, চার সহকর্মীর সঙ্গে। তারা সবাই মিলিত হলেন সেই দীর্ঘ তালিকায়, যেখানে ইতিমধ্যে শব্দ, ছবি আর সত্যের জন্য প্রাণ দেওয়া সাংবাদিকদের সংখ্যা ২৪৫-এ পৌঁছেছে, গাজার ওপর গণহত্যার যুদ্ধ শুরুর পর থেকে।

মোহাম্মদের সহকর্মীরা—যিনি আল-জাজিরার ক্যামেরাম্যান ছিলেন গাজার দক্ষিণের খান ইউনুসে—তাঁর মৃত্যুতে গভীর শোক ও বেদনায় ভেঙে পড়েন। তারা একবাক্যে স্বীকার করেন যে তাঁর চলাফেরা ও চরিত্র ছিল অতি উত্তম। তিনি সবার প্রিয় ছিলেন এবং বাবার প্রতি ছিলেন খুবই অনুগত। আর মা, যিনি তাঁর ছোটবেলায় মারা গিয়েছিলেন—প্রথম যুদ্ধবিরতির সময় কার্যকর হওয়া মাত্র মোহাম্মদ তাঁর কবরের কাছে গিয়ে ভালোবাসা ও আকুলতার কথা প্রকাশ করেছিলেন। এ বিষয়টি সহকর্মী সাংবাদিক আহমেদ হাজাজি তার এক পোস্টে উল্লেখ করেছিলেন।

গত ৩ মে, বিশ্ব সাংবাদিকতা স্বাধীনতা দিবসে, সাংবাদিক হালা আসফুর, শহীদ মোহাম্মদ সালামার বাগদত্তা, নিজের ভয়ের কথা জানিয়ে লিখেছিলেন— ‘কারণ আজ শব্দই হয়ে গেছে অপরাধ, আর ক্যামেরা হয়ে গেছে অস্ত্র।’ নিজের পোস্টে তিনি আরও একটি ছবি দিয়েছিলেন, যেখানে দেখা যায় তিনি কাজের সময় তাঁর বাগদত্তার পাশে দাঁড়িয়ে আছেন। পোস্টটির শেষ বাক্য ছিল— ‘সাংবাদিকতার স্বাধীনতা? আমরা তো এর জন্য রক্ত দিচ্ছি…।’

কিন্তু এই বাগদান, যা যুদ্ধ শুরু হওয়ার এক বছর পর হয়েছিল এবং বহু স্মৃতি ও গল্পে ভরপুর ছিল, একটি ব্যতিক্রমী অধ্যায়ের সাক্ষী। সাংবাদিক হাইসাম আসফুর লিখেছিলেন, যখন গাজার উপর দুর্ভিক্ষ নেমে এসেছিল, তখন মোহাম্মদ তার বাগদত্তাকে উপহার দেওয়ার জন্য এর চেয়ে ভালো কিছু খুঁজে পাননি—তিনি তাকে উপহার দিয়েছিলেন একটি রুটির প্যাকেট। কারণ সেই সময়ে গাজায় এক টুকরো রুটি-ই হয়ে উঠেছিল সোনার চেয়েও দামি।

বিশের কোঠার এই সাংবাদিক নিয়মিতভাবে তুলে ধরতেন দুর্ভিক্ষে মৃত্যুবরণ করা শিশুদের ছবি ও মর্মান্তিক ঘটনার গল্প। তাঁর সেই প্রতিবেদনগুলো খুব দ্রুতই ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ত।

মোহাম্মদের প্রচারিত সর্বশেষ দৃশ্যগুলোর একটি ছিল অত্যন্ত বেদনাদায়ক—শিশু রাসিলের কাহিনি। সকালে সে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছিল, আর সন্ধ্যায় সে শহীদ হলো। এ প্রসঙ্গে মোহাম্মদ মন্তব্য করেছিলেন: ‘গাজার শিশুরা সারা বিশ্বের চোখের সামনে অনাহারে মারা যাচ্ছে, অথচ কেউ কিছুই করছে না।’

এভাবেই ফিলিস্তিনি সাংবাদিকরা নিজেদের জীবন বিপন্ন করে বিশ্বের সামনে তুলে ধরছেন অবরুদ্ধ গাজার মানুষের গল্প। তাদের ক্যামেরার লেন্স নিভে যায় সত্য প্রচারের পথে। মোহাম্মদের ক্ষেত্রেও তাই ঘটেছে—তিনি সেই ২৪৪ জন সাংবাদিকের একজন, যারা নিজেদের ব্যক্তিগত কাহিনি ও জীবনের স্বপ্নগুলোকে বিসর্জন দিয়ে অন্যের ট্র্যাজেডি পৃথিবীর সামনে পৌঁছে দিতে বেছে নিয়েছেন শহীদির পথ। তবে তারা রেখে গেছেন আত্মত্যাগ ও সাহসের এক গৌরবময় ইতিহাস।

আরএইচ/


সম্পর্কিত খবর