রবিবার, ২৫ মে ২০২৫ ।। ১০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ ।। ২৭ জিলকদ ১৪৪৬


গাজায় ‘হিরোশিমা-নাগাসাকি’ ধাঁচে হামলার আহ্বান মার্কিন কংগ্রেসম্যানের


নিউজ ডেস্ক

নিউজ ডেস্ক
শেয়ার
ছবি: সংগৃহীত

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় পারমাণবিক হামলার আহ্বান জানিয়েছেন মার্কিন কংগ্রেসম্যান র‍্যান্ডি ফাইন।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দল রিপাবলিকান পার্টির এই সদস্য সম্প্রতি ফক্স নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের উদাহরণ টেনে গাজায় ‘হিরোশিমা-নাগাসাকি’ ধরনের হামলার পক্ষে বক্তব্য দেন।

সাক্ষাৎকারে র‍্যান্ডি ফাইন বলেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে আমরা নাৎসিদের সঙ্গে আত্মসমর্পণের জন্য আলোচনা করিনি, জাপানিদের সঙ্গেও না। বরং, নিঃশর্ত আত্মসমর্পণের জন্য জাপানের উপর দুইবার পারমাণবিক হামলা চালিয়েছি। গাজাতেও আমাদের একই রকম করা উচিত।

তিনি ফিলিস্তিনিদের উদ্দেশ্যকে ‘খারাপ’ আখ্যা দিয়ে বলেন, গাজায় সংঘাতের একমাত্র সমাধান হলো সন্ত্রাসবাদকে সমর্থনকারীদের নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ। এই মন্তব্যের মধ্য দিয়ে তিনি গাজায় বসবাসরত লাখো সাধারণ মানুষের অস্তিত্বকেই যেন অস্বীকার করলেন, অভিযোগ উঠেছে এমনই।

র‍্যান্ডির বক্তব্য সামনে আসে এমন এক সময়ে, যখন ওয়াশিংটনে ইসরায়েলি দূতাবাসের দুই কর্মীর ওপর গুলি চালানো হয়েছে। বুধবার (২১ মে) ক্যাপিটল ইহুদি জাদুঘরের বাইরে এ হামলার ঘটনা ঘটে। হামলাকারীর পরিচয় ও উদ্দেশ্য এখনো তদন্তাধীন, তবে র‍্যান্ডি ফাইন তাৎক্ষণিকভাবে এই হামলাকে ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে যুক্ত করে বক্তব্য দেন।

র‍্যান্ডির এ মন্তব্যে মানবাধিকারকর্মী, রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের একাংশ তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন। তারা বলছেন, একজন মার্কিন কংগ্রেসম্যানের মুখ থেকে এমন মন্তব্য শুধু অমানবিক নয়, বরং আন্তর্জাতিক আইন ও মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন।

সমালোচকরা মনে করছেন, ফাইনের বক্তব্য একটি গণহত্যাকে উসকে দেওয়ার শামিল। এ ধরনের মন্তব্য যুদ্ধাপরাধকে বৈধতা দিতে পারে, যা অত্যন্ত বিপজ্জনক। তাদের মতে, এই বক্তব্য মার্কিন রাজনীতিতে ফিলিস্তিন ইস্যুতে উগ্রতা ও সহিংস উসকানির প্রমাণ।

এদিকে, গাজায় প্রতিনিয়তই মানবিক বিপর্যয় গভীর থেকে গভীরে যাচ্ছে। জাতিসংঘসহ বিভিন্ন সংস্থা গাজার অবস্থা ‘সম্পূর্ণ বিপর্যয়কর’ বলে বর্ণনা করছে। খাদ্য, পানি ও চিকিৎসাসেবার তীব্র ঘাটতির মধ্যে মানুষ বেঁচে থাকার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, গত কয়েক মাসে ইসরায়েলি হামলায় কমপক্ষে ৫৩ হাজার ৮২২ ফিলিস্তিনি নিহত এবং এক লাখ ২২ হাজার ৩৮২ জন আহত হয়েছেন।

গাজার সরকারি মিডিয়া অফিস জানিয়েছে, মৃতের সংখ্যা ৬১ হাজার ৭০০-রও বেশি এবং ধ্বংসস্তূপের নিচে এখনো বহু মানুষ নিখোঁজ। তাদের অধিকাংশেরই বেঁচে থাকার সম্ভাবনা নেই বলেই মনে করা হচ্ছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ পরিস্থিতিতে পারমাণবিক হামলার আহ্বান শুধুই নৃশংসতা নয়, এটি আন্তর্জাতিক মানবতার সম্পূর্ণ পরিপন্থি। র‍্যান্ডি ফাইনের এমন বক্তব্য আন্তর্জাতিক পরিসরে মার্কিন রাজনৈতিক অবস্থান ও বিশ্বাসযোগ্যতাকেও প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।

এসএকে/


সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ