|| নুর আলম সিদ্দিকী ||
দারুল উলূম দেওবন্দের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত একটি ফতোয়াকে আপত্তিকর বিষয়বস্তুর উল্লেখ করে ন্যাশনাল কমিশন ফর প্রোটেকশন অফ চাইল্ড রাইট ( এনসিপিসিআর ) এর চেয়ারম্যান দারুল উলূম দেওবন্দের বিরুদ্ধে এফআইআর নথিভুক্ত করার জন্য সাহারানপুর জেলার সিনিয়র পুলিশ সুপার ( এসএসপি )কে চিঠি ও আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
সাহারানপুর জেলার এসএসপিকে দেওয়া একটি চিঠিতে জাতীয় শিশু অধিকার সুরক্ষা কমিশনের (এনসিপিসিআর) চেয়ারম্যান প্রিয়াঙ্ক কানুনগো দেওবন্দের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত একটি ফতোয়া সম্পর্কে কমিশনের উদ্বেগের কথা তুলে ধরেছেন।
আলোচ্য ফতোয়ায় 'গাজওয়ায়ে হিন্দ' বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে এবং 'ভারতে আক্রমণের প্রেক্ষাপটে শহিদদের' গৌরবান্বিত করা হয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে।
চিঠিতে তিনি জুভেনাইল জাস্টিস অ্যাক্ট, ২০১৫ এর ৭৫ ধারা লঙ্ঘনের অভিযোগও করেছেন।
চিঠিতে ২০২২ সালের জানুয়ারি ও ২০২৩ সালের জুলাই মাসে জেলা প্রশাসনের সঙ্গে একই ধরনের উদ্বেগ নিরসনে কমিশনের পূর্ববর্তী প্রচেষ্টার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে, এনসিপিসিআর সাহারানপুরের এসএসপিকে ৩ দিনের মধ্যে পদক্ষেপের বিষয়ে একটি প্রতিবেদন জমা দিতে বলেছেন এবং ভারতীয় দণ্ড ও কিশোর বিচার আইন, ২০১৫ এর অধীনে ব্যবস্থা নেওয়ার আবেদনও করেছেন।
অন্যদিকে দারুল উলুম দেওবন্দের মুহতামিম মাওলানা মুফতি আবুল কাসেম নোমানি বলেছেন, এটি ২০০৯ সালে প্রকাশিত ১৫ বছরের পুরানো ফতোয়া। কেউ একটি প্রশ্ন করেছিল যার উত্তর দেওয়া হয়েছিল।
এ বিষয়ে স্থানীয় কর্মকর্তারা দারুল উলুম দেওবন্দে এসেছিলেন, যাদের কাছে পুরো পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করা হয়েছিল। এখন পর্যন্ত আমরা লিখিতভাবে কোন নোটিশ পাইনি, নোটিশ পাওয়ার সাথে সাথে আমরা আইনি জবাব দেব।
এনসিপিসিআর-এর এই পদক্ষেপের জন্য দুঃখ প্রকাশ করে তিনি বলেন, যে দারুল উলুম দেওবন্দ এমন একটি প্রতিষ্ঠান যা দেশের স্বাধীনতায় প্রধান ভূমিকা পালন করেছে।
তিনি বলেন, এটি বেশ কয়েকবার স্পষ্ট করা হয়েছে যে ফতোয়া একটি শরিয়তের মতামত এবং ভারতে কেউ এটি অনুসরণ করতে বাধ্য নয়। কারো ওপর ফতোয়া চাপিয়ে দেওয়া হয় না, বরং ইসলাম শরিয়া অনুযায়ী প্রশ্নকারীর জবাব দেওয়া হয়। দারুল উলুম দেওবন্দের ফতোয়া দেওয়ার সাংবিধানিক অধিকার রয়েছে।
মনে রাখতে হবে যে, দারুল উলুম দেওবন্দের ওয়েবসাইট থেকে পুরানো ফতোয়া সামনে এনে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে প্রতিদিনই নতুন নতুন অভিযোগ তোলা হচ্ছে।
অন্যদিকে দারুল উলূম দেওবন্দ সেই প্রতিষ্ঠান যা ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের সময় ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামীদের ঘাঁটি ছিল। সবসময় দেশপ্রেমের শিক্ষা দিয়েছেন এবং স্বাধীনতার পর দেশের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন।
উল্লেখ্য, ২০০৯ সালের জানুয়ারি মাসে হাফিজ ফয়জান আব্বাসী নামে এক ব্যক্তি দারুল উলুম দেওবন্দের ফতোয়া বিভাগে গাজওয়ায়ে হিন্দ সম্পর্কে একটি প্রশ্ন পাঠান। যার জবাবে দারুল উলুম দেওবন্দের প্রধান মুফতি হাবিবুর রহমান খায়রাবাদী বিস্তারিত উত্তর না দিয়ে হাদিসের বিখ্যাত গ্রন্থ সুনানে নাসায়ী শরিফের একটি উদৃতি উল্লেখ্য করেন। যাতে নির্ধারিত কোন সময় ও যুগের উল্লেখ্য নেই।
সূত্র: হিন্দুস্তান টাইমস, মিল্লাত টাইমস, দ্যা টাইমস অফ ইন্ডিয়া, দেওবন্দ টাইমস
এনএ/