মুহাম্মদ মিজানুর রহমান
ইট পাথরের এই নগরীতে পাহাড়ি খাবারের স্বাদ নিতে চলে আসুন ব্যতিক্রমী রেস্তোঁরা হেবাং-এ। হেবাং মূলত একটি চাকমা খাবার ঘর। চাকমা ভাষার শব্দ ‘হেবাং’-এর অর্থ হচ্ছে ভাপে রান্না করা। এ পদ্ধতিতেই আদিবাসীরা তাদের বেশিরভাগ খাবার রান্না করে থাকেন।
রেস্তোরাঁটির ভেতরে ঢুকতেই মনে হবে যেন চিরচেনা ব্যস্ত নগরী থেকে দূরে কোথাও চলে এসেছেন। কাঠ ও বাঁশ দিয়ে তৈরি কারুকার্য ঢাকার মতো ঘিঞ্জি শহরেও আপনাকে এনে দিবে পাহাড়ের অনুভূতি। আর তার সাথে যদি থাকে পাহাড়ি খাবারের সমারোহ তাহলে তো কথাই নেই।
রেস্তোরাঁটিতে পাহাড়ি পরিবেশ আনতে বাঁশ দিয়ে আদিবাসীদের ঘরের বাইরে থাকা বারান্দার মতো ছোট ঘর তৈরি করা হয়েছে। রেস্টুরেন্টের ভেতরে ঢুকতেই প্রথমে চোখে পড়বে বাঁশের তৈরি খুপরির মতো এই জায়গাটি। খড় দিয়ে তৈরি চালার ছাউনির ওপর সাজিয়ে রাখা হয়েছে বেতের ঝুড়ি এবং মেঝেতে পাতা হয়েছে মাদুর।
রেস্তোরাঁটিতে রঙে আঁকা ছোটবড় দেয়ালচিত্রেও ফুটিয়ে তোলা হয়েছে আদিবাসীদের জীবনচিত্র। সময় স্বল্পতার জন্য যারা পাহাড়ে যেতে পারছেন না বা পাহাড়ি পরিবেশে অবসর বিকেল কাটাতে চাচ্ছেন, তাদের জন্য 'হেবাং' হতে পারে মোক্ষম ঠিকানা। সাথে থাকছে পাহাড়ের বৈচিত্র্যময় খাবারও।
ঢেকিছাঁটা চালের ভাত, ব্যাম্বু চিকেন, শুঁটকি হেবাং, পাজন, কাঁকড়া ভুনা হেবাংয়ের নিয়মিত আইটেম। বিশেষ দিনগুলোতে আরও কয়েকটি বিশেষ খাবারের পদ যোগ করা হয়। খাবারের নামগুলোতে যেমন ভিন্নতা রয়েছে, তেমনি পদগুলো খেতেও ভিন্ন ভিন্ন স্বাদের। চাকমাদের প্রায় সব খাবারে শুঁটকির আধিক্য থাকে। শুঁটকিকে পেস্ট বানিয়ে সেটাকে পানির সাথে মেশানো হয়। রান্নায় অন্যরা যেখানে সিদ্ধ হতে পানি ব্যবহার করে, আদিবাসীরা সেখানে ঘ্রাণের জন্য তাদের রান্নায় শুঁটকির পেস্টের পানি ব্যবহার করে।
'হেবাং'-এ নানারকম ভর্তা পাওয়া যায়। মাছ, মাংস, সবজি, শুটকির ভর্তার সাথে মেশানো হয় পাহাড়ি ঝাল মরিচ। কিন্তু দেখলে মনে হবে ভর্তায় অন্য উপাদানের চেয়ে মরিচের পরিমাণটাই বেশি। যারা অধিক ঝাল খেতে পছন্দ করেন তাদের জন্য রয়েছে গোটা গোটা মরিচ দিয়ে বানানো মরিচের ভর্তা। তাদের খাবার পরিবেশনও যথেষ্ট মুগ্ধকর।
এখানে শুধু পাহাড়ি রান্নার কৌশল ব্যবহার হয়নি, খাবার তৈরির প্রতিটি উপকরণ আনা হয় খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটি থেকে। কলাপাতা থেকে শুরু করে চাল, সবজি, মুরগি, হাঁসসহ রান্নার অন্য সব উপাদান প্রতি সপ্তাহে পাহাড় থেকে আসে। সেজন্য হেবাংয়ের খাবারে পাহাড়ের নির্যাস মিশে থাকে। বর্তমানে হেবাংয়ের দুটি শাখা রয়েছে। একটি মিরপুরের কাজীপাড়াতে, অপরটি মোহাম্মদপুরে সূচনা কমিউনিটি সেন্টারের বিপরীতে। হেবাং খোলা থাকে সপ্তাহের সাতদিনই। তবে শুক্র এবং মঙ্গলবারে তৈরি হয় স্পেশাল মেনু। তাদের বেশিরভাগ ক্রেতা চাকমা সম্প্রদায়ের হলেও বাঙালিও আসেন দুচারজন। তো আর দেরি কেন? এখানে আপনিও পাহাড়ি স্বাদের খাবার খেতে খেতে দারুণ কিছু সময় কাটাতে পারেন।
এনএইচ/