||সলিমুদ্দীন মাহদী কাসেমী||
আইন মন্ত্রণালয় নিকাহ রেজিস্ট্রার (কাজী) নিয়োগসংক্রান্ত নিয়মে গুরুত্বপূর্ণ সংশোধন এনেছে। এখন থেকে দাওরায়ে হাদিস ডিগ্রিধারীরাও কাজী হিসেবে দায়িত্ব পালনের সুযোগ পাবেন—যা আগে শুধুমাত্র আলিম সনদধারীদের জন্য সীমাবদ্ধ ছিলো। এ উদ্যোগের জন্য আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুলকে আন্তরিক ধন্যবাদ।
এই সিদ্ধান্ত সমাজে একটি বড় ইতিবাচক পরিবর্তনের সূচনা করবে। দীর্ঘদিন ধরে কাজীর দায়িত্ব পালনে যে অনিয়ম দেখা গেছে—শরীয়তসম্মত আকদ সম্পন্ন হওয়ার আগেই বিবাহের রেজিস্ট্রি করে ফেলা, আনুষ্ঠানিক আকদ ছাড়াই কাগজে বিবাহ দেখানো—এসব অসঙ্গতি এখন কওমি আলেমদের অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে কমে আসবে বলে আশা করা যায়। আলেমগণ শরীয়তসম্মত বিধান অনুযায়ী মুসলমানদের সঠিক দিকনির্দেশনা ও সেবা দিতে সক্ষম হবেন।
অন্যদিকে কাজী নিয়োগ পেতে যে জটিলতা, দীর্ঘসূত্রতা ও আর্থিক হয়রানির মুখে পড়তে হয়—লক্ষ লক্ষ টাকা লেনদেনের অনৈতিক প্রথা—এগুলোর অবসান ঘটবে কি না, তা নিয়েও নতুন আশা জেগেছে। আইন মন্ত্রণালয় সরাসরি কঠোর পদক্ষেপ নিলে নিয়োগব্যবস্থা আরও স্বচ্ছ হবে বলে জনমনে প্রত্যাশা তৈরি হয়েছে।
এ মুহূর্তে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতিও একটি গুরুত্বপূর্ণ আবেদন প্রয়োজন—
মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক এবং বিশেষত বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ ও আরবি বিভাগের শিক্ষক নিয়োগে যোগ্য আলেমদের অন্তর্ভুক্তির সুযোগ তৈরি করা। দাওরায়ে হাদিস সনদধারীরা উচ্চতর যোগ্যতা ও মেধা নিয়ে দেশের ধর্মীয় শিক্ষাক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারেন। এই সুযোগ তাদের জন্য নতুন দিগন্ত খুলে দেবে।
একইভাবে প্রতিরক্ষা বিভাগেও সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীর ধর্মীয় শিক্ষক পদে কওমি আলেমদের খেদমত করার সুযোগ আরও সম্প্রসারণ করা প্রয়োজন—যাতে তাঁরা দেশের সশস্ত্র বাহিনীতে ধর্মীয় দিকনির্দেশনায় অবদান রাখতে পারেন।
সবশেষে—ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেনকে বিশেষ অভিনন্দন, যিনি শিক্ষা, আইন ও প্রতিরক্ষা—এই তিন দপ্তরে পৃথক ডিও লেটার পাঠিয়ে দাওরায়ে হাদিস সনদধারীদের জন্য সুযোগ বিস্তারের যে আন্তরিক প্রচেষ্টা চালিয়েছেন, তার ফলই আমরা আজ দেখতে পাচ্ছি। তাঁর এই তদবির ও অনুপ্রেরণায় আগামীতেও আরও ইতিবাচক পরিবর্তন বাস্তবায়িত হবে বলে আমরা আশাবাদী।
লেখক: জিম্মাদার, তাফসির বিভাগ, জামিয়া ইসলামিয়া পটিয়া
এলএইস/