।।মাওলানা বাহাউদ্দীন যাকারিয়া।।
ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ, ব্যাপক ও বিস্তৃত জীবনব্যবস্থা। মানুষের আকিদা-বিশ্বাস থেকে শুরু করে ব্যক্তিজীবন, সামাজিক জীবন ও রাষ্ট্র-পরিচালনার ক্ষেত্রে শরিয়তের নির্দেশনা রয়েছে। আকিদা, ইবাদত, লেনদেন, অর্থনীতি, রাজনীতি— সর্বক্ষেত্রেই ইসলাম সুনির্দিষ্ট দিক-নির্দেশনা দিয়েছে। মানবজীবনের কোনো অংশ ইসলামের বাইরে নয়। মুসলমানের প্রতিটি পদক্ষেপ দ্বীনের আলোকে পরিচালিত হতে হবে। সবকিছুতে দ্বীনের সীমারেখা মানতে হবে।
ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের সঙ্গে সদাচরণ ইসলামের শিক্ষা। মহান আল্লাহ তায়ালা কোরআনে অমুসলিম প্রতিবেশীর সঙ্গে সদ্ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছেন। তবে এই সদাচার ও সম্পর্কের সীমারেখা স্পষ্ট। দ্বীনের মূলনীতি ও আকিদার সঙ্গে সাংঘর্ষিক কোনো বিষয়ে মুসলমানের অংশগ্রহণ থাকতে পারে না। বিশেষ করে যে সকল ভিন্নধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান সরাসরি শিরক বা বহুদেবতার উপাসনার সঙ্গে সম্পৃক্ত, সেগুলোতে মুসলমানদের কোনো ধরনের অংশগ্রহণ, সমর্থন কিংবা উৎসাহ প্রদান করা বৈধ নয়।
ইসলামের সাথে অন্যান্য ধর্মের মূল পার্থক্য হলো তাওহীদ বা একত্ববাদ। ইসলাম মানুষকে এক আল্লাহর ইবাদতের দিকে আহ্বান জানায়; অন্যান্য ধর্মে বহুদেবতার পূজা-অর্চনা বা শিরকের উপাদান বিদ্যমান। তাই একজন মুসলিম কখনোই এসব শিরকি আচার-অনুষ্ঠানকে সমর্থন করতে বা তাতে শুভেচ্ছা জানাতে পারে না। তার দায়িত্ব হলো সদাচারের সঙ্গে তাদের প্রতি একত্ববাদের দাওয়াত পৌঁছে দেওয়া।
রাজনীতি যদি ‘ইসলামী রাজনীতি’- হয়, সেক্ষেত্রে প্রতিটি অবস্থান ও পদক্ষেপ হতে হবে দ্বীনের মৌলিক সীমারেখা অনুযায়ী। ইসলামী রাজনীতি দ্বীনেরই একটি অংশ। দ্বীনের সীমারেখার বাইরে গিয়ে শিরকি উৎসব-পার্বনে কোনো ধরনের সমর্থন বা শুভেচ্ছা জানানোর সুযোগ নেই। কিন্তু যদি রাজনীতি সেকুলার ধাঁচের হয়, তবে সেখানে ধর্মীয় সীমারেখা রক্ষা করা হয় না, বরং সুবিধাবাদী ও বস্তুবাদী দৃষ্টিভঙ্গিতে কর্মকাণ্ড পরিচালিত হয়।
এ দেশের আপামর মুসলমানদের সাথে ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের সহাবস্থান বহু যুগ পূর্ব থেকেই বিরাজমান। সাধারণ মুসলমানদের কর্তব্য হলো, একদিকে ভিন্নধর্মাবলম্বীরা যেন নিজস্ব ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান নির্বিঘ্নে পালন করতে পারে, সেদিকে খেয়াল রাখা। অপরদিকে একজন মুমিন মুসলমান হিসেবে দ্বীনের সীমারেখা অতিক্রম করে সেসবে অংশগ্রহণ না করা এবং শুভেচ্ছা বা উৎসাহ প্রদান থেকে বিরত থাকা।
লেখক: মুহতামিম, জামিয়া ইসলামিয়া হোসাইনিয়া আরজাবাদ, ঢাকা
এনএইচ/