বুধবার, ২০ আগস্ট ২০২৫ ।। ৫ ভাদ্র ১৪৩২ ।। ২৬ সফর ১৪৪৭


মুসা আল হাফিজের সৃষ্টি ও দৃষ্টি

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

ড. ইয়াহইয়া মান্নান

এক.
মুসা আল হাফিজ (জন্ম :১৯৮৪) বিরল, ব্যতিক্রমী  লেখক। তাঁর সৃষ্টি ও দৃষ্টি বহুবিহারী। তিনি আত্মপ্রকাশ করেন বিচিত্র প্রকরণে; কবিতায়, ছড়ায়, গবেষণায়, অনুবাদে, জীবনীগ্রন্থে, শিশুতোষে,কলামে, প্রবচনে। বিষয়েও তিনি বৈচিত্র‍্যময়। ইতিহাস, দর্শন, ধর্মতত্ত্ব, সাহিত্যসমালোচনা, সমাজ, রাজনীতি, সুফিবাদ, প্রাচ্যতত্ত্ব, পাশ্চাত্যবাদ, তুলনামূলক সভ্যতা ইত্যাদিতে বিচরণ তাঁর।

প্রকরণ যাই হোক আর বিষয় যে এলাকার হোক, মুসা আল হাফিজ তার কজের মধ্য দিয়ে মূলত ধার করা সময় , ধার করা জগৎ আর ধার করা চোখ থেকে মুক্তির কথা বলেন। সময়কে নিজের করা, নিজের দুনিয়াকে নিজস্ব করা এবং দেখার দৃষ্টিকে স্বাধীন করা তাঁর অভিপ্রায়।

মুসা আল হাফিজের প্রধান প্রবণতা চিহ্নিত হয়েছে আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের ভাষায়-

মুসা আল হাফিজের সাথে আমার আত্মার সম্পর্ক। বর্ণিল এক আলোকপিয়াসী চৈতন্যের  ভাষ্যকার তিনি। তার সপারগ হাত চলমান অবক্ষয়ের বিপরীতে হৃদয়ের সওদা বিতরণ করছে। মানুষের পরম সত্তাকে জাগ্রত করার জন্য যে প্রেম ও শিল্প এই কবির অন্বেষা , তা আজ মানবতার বড়ই প্রয়োজন। তার দীপান্বিত বোধ যে অমৃতময়  উৎসবের দিকে যাত্রা করে , সেই যাত্রাপথ ঐশ্বর্যের সম্ভারে সমৃদ্ধ।

(মহাকালের মধু, ফেব্রুয়ারি-২০১৭, একুশে বইমেলা, প্রকাশক: চৈতন্য)

বস্তুত এই রচনা মুসা আল হাফিজের রচনা নিয়ে কোনো বিচার বা বিশ্লেষণ করার জন্য নয়, বরং তাঁর সংক্ষিপ্ত পরিচয় তুলে ধরাই উদ্দেশ্য।

দুই.
নাম : মুসা আল হাফিজ
জন্ম : ৫ অক্টোবর, ১৯৮৪
জন্মস্থান: সিলেট জেলার বিশ্বনাথ উপজেলার রামপাশা ইউনিয়নের মাখরগাঁও গ্রামে
পোস্ট : আমতৈল বাজার
পিতা : আলহাজ্ব হাফিজ ইব্রাহীম আলী
মাতা: আলহাজ্ব জুবেদা খাতুন
ছয় ভাই, ছয় বোনের মধ্যে তিনি পঞ্চম: ছয় ভাইয়ের মধ্যে প্রথম।

লেখাপড়া 
পারিবারিক পরিবেশেই লেখাপড়ার হাতেখড়ি। ১৯৯৫ সালে, ১১ বছর বয়সে কুরআনুল কারিমের হিফজ সম্পন্ন করেন। ২০০৭ সালে অত্যন্ত কৃতিত্বের সাথে তাকমিল ফিল হাদীস (মাস্টার্স সমমান) সম্পন্ন। ২০০৮ সালে তাফসীরুল কুরআনে বিশেষজ্ঞ কোর্স সম্পন্ন । এবং জাতীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ তরুণ আলিম প্রতিভা-২০০৮-এ সম্মানিত হন।

কর্মজীবন 
২০০৯ সালে কর্মজীবনের শুরু ঐতিহ্যবাহী বিশ্বনাথ জামেয়া মাদানিয়ায় শিক্ষকতা এবং মাসিক আল ফারুকের উপদেষ্টা সম্পাদকের দায়িত্ব গ্রহণের মধ্য দিয়ে। সাত বছর এখানে তাফসির, হাদিস এবং আরবি ভাষা ও সাহিত্যের পাঠদান করেন। ২০১৬ সালে উচ্চতর ইসলামী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জামেয়াতুল খায়র আল ইসলামীয়া সিলেটে বিভাগীয় প্রধান হিসেবে যোগদান।

২০১৯ সালে ঢাকায় প্রতিষ্ঠা করেন ইসলামী দাওয়াহ ও গবেষণা কেন্দ্র সেন্টার ফর ইসলামিক থট এন্ড স্টাডিজ বা মা‘হাদুল ফিকরি ওয়াদদিরাসাতিল ইসলামিয়া। এখানে তুলনামূলক ধর্মতত্ত্ব, ইসলামী দর্শন , সিরাত ও ইতিহাস এবং আধুনিক দুনিয়া ও ইসলামী জীবনাদর্শের পর্যালোচনামূলক পাঠদান করেন। 

 বর্তমানে  তিনি জামেয়া ইসলামিয়া কুতুবখালি যাত্রাবাড়ীর শায়খুল হাদীস , আস সুন্নাহ দাওয়াহ সেন্টারে দাওয়াহ প্রশিক্ষক এবং  বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে অতিথি শিক্ষক হিসেবে পাঠদান করে আসছেন। একজন পাবলিক ইন্টেলেকচুয়াল  হিসেবে একাডেমিক ও জনপরিসরে তিনি নানা বিষয়ে আলোচনা করে থাকেন।

তিনি Bangladesh Institute of Islamic Thought-BIIT এর কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ও একাডেমিক ফেলো, ইসলামিক সিভিক ইন্টেলেকচুয়াল মুভমেন্টের পরিচালক, বাংলা একাডেমির সদস্য, বাংলাদেশ ইতিহাস সমিতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এর আজীবন সদস্য এবং জাতীয় পর্যায়ে ইসলামিক হিস্ট্রি এন্ড কালচার অলিম্পিয়াড আয়োজক কমিটির চেয়ারম্যান। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (National Curriculum and Textbook Board) এ ২০২৪-২৫ এবং ২০২৫-২৬ এর পাঠ্যপুস্তক সংস্কার ও পরিমার্জনে তিনি রিসোর্স পার্সন হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।

তিনি শিক্ষা, সেবা ও মানবউন্নয়নমূলক বিভিন্ন প্রয়াসে যুক্ত। বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে তিনি সমাজ, সংস্কৃতি, পরিবেশ, ইতিহাস ও রাজনীতিতত্ত্ব নিয়ে নিয়মিত কলাম লিখেন।

সুফিচর্চা
শুরু থেকেই আধ্যাত্মিক প্রবণতা তার মধ্যে ছিলো। এটি তিনি পারিবারিক ঐতিহ্য থেকেই লাভ করেন। তাঁর পূর্বপুরুষদের অনেকেই ছিলেন আধ্যাত্মিক সাধক। যাদের মধ্যে আছেন কিংবদন্তির বিখ্যাত বুজুর্গ হাজি কালা রহ. এবং তাঁর নানা আলহাজ্ব আজিজুর রহমান রহ.।

পারিবারিক ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতায় নিয়মতান্ত্রিক আধ্যাত্মিক সাধনার জন্য তিনি ২০০৭ সালে বায়আত গ্রহণ করেন। তার মুর্শিদ ছিলেন হযরত শায়খ তাফাজ্জুল হক হবিগঞ্জী রহ.। ২০১১ সালে মাত্র ২৬ বছর বয়সে  তিনি স্বীয় শায়খের পক্ষ থেকে আধ্যাত্মিক সাধনায় চার তরিকার  খিলাফাত লাভ করেন। শায়খের ইন্তেকালের পরে বায়আত নবায়ন করেন ওলীয়ে কামিল মুফতি রশীদুর রহমান ফারুক বরুনীর কাছে। ২০২৪ সালে তিনিও তাকে খেলাফত প্রদান করেন।

সাহিত্যসাধনা

কবিতা
১. মুক্তি আনন্দে আমিও হাসবো (প্রথম প্রকাশ: ২০০২, প্রকাশক: গোলাপকুঁড়ি পাবলিকেশন্স,নতুন আরামবাগ ঢাকা।)
২. ১০০ কবিতা। (একুশে বইমেলা, ২০২২, প্রকাশক : শোভা প্রকাশ, বাংলা বাজার ঢাকা।)
৩. ঈভের হ্রদের মাছ (২০১০, প্রকাশক : মুক্তস্বর, সিলেট)।
৪. পরম সাঁতার (প্রথম প্রকাশ ২০১৭, প্রকাশক : শব্দতারা, সিলেট)
৫. মৃত্যুর জন্মদিন (প্রথম প্রকাশ : ২০১৯, প্রকাশক: ফোয়ারা, বাংলাবাজার, ঢাকা।)

গবেষণা :
৬. সভ্যতার সংঘাত ও মুসলিম বিশ্বের যাত্রাপথ (প্রথম প্রকাশ : ২০০৫ প্রকাশক : ইম্প্যাক্ট পাবলিকেশন্স, বাংলাবাজার,ঢাকা।)
৭. আল কুরআন : পশ্চিমা আপত্তরি সাথে বাহাস (২০২৩, ইমপ্রেস পাবলকিশেন্স, ঢাকা)
৮. আমেরিকা মুসলিমদের আবিষ্কার (প্রথম প্রকাশ : ২০১৭, প্রকাশক, কালান্তর,সিলেট।)
৯. সহস্রাব্দের ঋণ (প্রথম প্রকাশ : ২০১৮, প্রকাশক : ফোয়ারা, ঢাকা)
১০. মুক্তিযুদ্ধ ও জমিয়ত : ( প্রথম প্রকাশ : ২০২০, প্রকাশক: পরিলেখ, রাজশাহী)
১১. সিলেট নগরউন্নয়ন : একটি রূপরেখা (প্রথম প্রকাশ : ২০১৮, প্রকাশক : অগ্রসর সিলেট)
১২. মাদরাসা শিক্ষার মানোন্নয়ন : একটি পর্যালোনা (প্রকাশ : ২০১৭, জামেয়াতুল খাইর সিলেট)
১৩. ইসলামী ফিকহের নবসম্পাদন, প্রেক্ষিত একুশ শতক (২০০৯, রেনেসাঁ পাবলিকেশন্স, সিলেট)
১৪. বাংলাদশেে যুব সম্পদ ও যুব নতেৃত্ব গঠনরে রূপকল্প (২০২৫, আইএসআইএফ, ঢাকা)

জীবনী
১৫. মহাকাব্যের কোকিল (মহাকবি আবদুর রহমান জামী) (প্রথম প্রকাশ : ২০১৪, প্রকাশক: ঝিঙেফুল, ঢাকা)
১৬. মরমী মহারাজ (হুসাইন ইবনে মনসুর হাল্লাজ) (প্রথম প্রকাশ : ২০১৫, প্রকাশক: ঝিঙেফুল, ঢাকা।)
১৭. মহাসত্যের বাঁশী (জালালুদ্দীন রুমী) (প্রথম প্রকাশ : ২০১৬। প্রকাশক : ঝিঙেফুল, ঢাকা।)
১৮. মহাকালের মধু (শেখ সা'দী) ( প্রথম প্রকাশ : ২০১৭, প্রকাশক : চৈতন্য, সিলেট)
১৯. শতাব্দীর চিঠি (নূর কুতবুল আলম) ( প্রথম প্রকাশ : ২০১৯, প্রকাশক : ফোয়ারা, ঢাকা)
২০. চেতনার চিকিৎসক (শায়খ তাফাজ্জুল হক হবিগঞ্জী) (প্রথম প্রকাশ : ২০২০, প্রকাশক: মনোজ, যাত্রাবাড়ী, ঢাকা)

সাহিত্য সমালোচনা
২১. দৃশ্যকাব্যে ফররুখ আহমদ (২০১৭, প্রকাশক: মাকতাবাতুল ইসলাম,ঢাকা)
২২. চার কবি : চিত্তের পাসওয়ার্ড ( ২০১৯, প্রকাশক: ফোয়ারা, ঢাকা)

প্রবন্ধগ্রন্থ:
২৩. মাদক : মায়াবী মরণাস্ত্র (২০০৬, ইউনাইটেড ইউথ ফোরাম,সিলেট)
২৪. আমি বিজয়ের সন্তান (২০০৬, প্রকাশক: ইম্প্যাক্ট পাবলিকেশন্স, বাংলাবাজার,ঢাকা)
২৫. প্রাচ্যবিদদের দাঁতের দাগ (প্রথম প্রকাশ : ২০১৫, প্রকাশক : মাকতাবাতুল আযহার,ঢাকা)
২৬. পৃথিবী ঘরে ফিরো (২০১৭, প্রকাশক : আহমদ পাবলিকেশন্স, চট্টগ্রাম)
২৭. ভাবনার বীজতলা (২০১৯, প্রকাশক : ফোয়ারা,ঢাকা)
২৮. রোহিঙ্গা : সেই সালতানাত, এই গণকবর (মনোজ,যাত্রাবাড়ী ঢাকা,২০১৯)
২৯. মনের উপনিবেশ মনের মুক্তি (প্রকাশক : গার্ডিয়ান, ঢাকা, ২০২০)
৩০. বাংলা সাহিত্যে অন্ধকার যুগ : মিথ বনাম বাস্তবতা (রাইয়ান প্রকাশন ঢাকা, ২০২২)
৩১. বাংলাদেশ ও ইসলাম আত্মপরিচয়ের ডিসকোর্স (শোভা প্রকাশ, ২০২১, ঢাকা)
৩১. স্রষ্টারে দেখে সৃষ্টিরে দেখি (২০২১, ইমপ্রেস প্রকাশনী ,ঢাকা)
৩২.অনিবার্য ইবনে খালদুন (২০২৩, রূপসী বাংলা, ঢাকা)
৩৩. ইসলামোফােবিয়ার উজানে (২০২৪, ঘাসফুল, ঢাকা)
৩৪. ইসরাইল সমস্যা, প্রতশ্রিুত ভূ, তত্ত্বীয় বিচার (২০২৪, রূপসী বাংলা, ঢাকা)
৩৫. ফিলিস্তিন বনাম জায়নবাদ লড়াই লিগ্যাসি (২০২৪, ইলহাম, ঢাকা)
৩৬. অভ্যুত্থানরে চিন্তাশিখা (২০২৫, ঐতহ্যি, ঢাকা)
৩৭. স্বৈরতন্ত্রের কলকবজা বনাম তত্ত্বযুদ্ধ (২০২৫, ঐতহ্যি, ঢাকা)

ছড়া
৩৮. সৃজনে রক্ত চাই ( ২০০৬, প্রকাশক : গোলাপকুঁড়ি পাবলিকেশন্স, নিউ আরামবাগ,ঢাকা)
৩৯. থাপ্পড় ( ২০১৮, প্রকাশক: বলাকা, কনকর্ড এম্পোরিয়াম, ঢাকা)
৪০. কানমলা ( ২০১৯, প্রকাশক : বলাকা : কনকর্ড এম্পোরিয়াম, ঢাকা)
৪১. ছড়াবৃন্দ  ( ২০২৪, ঘাসফুল, ঢাকা)

শিশুতোষ
৪২. দুধের নদী (২০১৮, প্রকাশক : চৈতন্য,সিলেট)
৪৩. জীবনজয়ের গল্প (২০১৫, প্রকাশক: রেনেসাঁ পাবলিকেশন্স, সিলেট)
৪৪. কেমনে সফল মানুষ হবো? ( ২০২৫, বিআইআইটি, ঢাকা)
৪৫. কারিগরদের দ্বীপ (২০২৫, বিআইআইটি, ঢাকা)  

দর্শন-জীবনভাবনা
৪৬. নতুন পৃথিবীর দর্শন ( ২০০৯, প্রকাশক: রেনেসাঁ পাবলিকেশন্স, সিলেট)
৪৭. পাশ্চাত্য দর্শনে মুসলিম অবদান ( ২০১৭, ভূমিজ, লালমাটিয়া, ঢাকা)
৪৮. নক্ষত্রচূর্ণ ( ২০২০, প্রকাশক : মনোজ, ঢাকা)
৪৯. বিষগোলাপের বন (২০২০, প্রকাশক : গার্ডিয়ান, ঢাকা)
৫. কালামদর্শন (শোভা প্রকাশ, ঢাকা, ২০২১)
৫১. হৃদয়াস্ত্র (শোভা প্রকাশ, ঢাকা-২০২১)
৫২. জন্ম-মৃত্যুর সিগনেচার (২০২১, মুহাম্মদ পাবলিকশেন্স, ঢাকা)
৫৩. উত্তরাধুনিক শরাব, (২০২৩, ঐতিহ্য, ঢাকা)

অনুবাদ:
৫৪. ইহুদীবাদ : মুখ ও মুখোশ (২০২২, প্রকাশক: ফাতিহ প্রকাশন, বাংলাবাজার ঢাকা)
৫৫. যে সূর্যে প্রদীপ্ত বিশ্ব, সে তুমি আলিম (২০০৭, মাকতাবাতুস সালাম, সিলেট।)
৫৬. হিদায়াতুল ইরফান (২০১৮, মাকতাবাতুল মদীনা, সিলেট।)

আলোচনাগ্রন্থ
৫৭. তুলনামূলক ধর্মতত্ত্ব: ইসলামী উত্তরাধিকার (২০১৯, আমন্ত্রণ প্রকাশন, ঢাকা)
৫৮. দুঃসময়ের বধ্যভূমিতে উত্থানের চাষাবাদ ( ২০২০, আমন্ত্রণ প্রকাশন, ঢাকা)
৫৯. জাতিগত বিজয়ের অদৃশ্য কারিগরি (২০১৯, রূপসী বাংলা, ঢাকা)
৬০. আল্লাহকে যে পাইতে চায়, (২০২২, এশিয়ান পাবলিকেশন্স, বাংলাবাজার, ঢাকা)

সীরাত
৬১. রাসুলুল্লাহ (প্রথম খ-) (২০২০, শোভা প্রকাশ, বাংলাবাজার, ঢাকা)
৬২. রাসুলুল্লাহ (দ্বিতীয় খ-) (২০২৩, শোভা প্রকাশ, বাংলা বাজার, ঢাকা)
৬৩. মহানবীর জীবনপঞ্জী (২০২১, মুহাম্মদ পাবলিকেশন্স, ঢাকা)
৬৪. সীরাতরে পথনির্দেশ, ( ২০২৪, রূপসী বাংলা, ঢাকা)
৬৫. অস্বীকৃতির মেঘ বনাম মহানবীর বংশমহিমা ( ২০২৫, ফাউন্টেন পেন, ঢাকা)
৬৬. রাসুলুল্লাহর (সা.) অস্তিত্ব :  প্রামাণ্যতার র্সূয ( ২০২৫, রূপসী বাংলা, ঢাকা)

উপন্যাস
৬৭. আত্মগত দার্শনিক (২০২৩, ঐতিহ্য, বাংলাবাজার, ঢাকা )

অক্সিডেন্টালিজম
৬৮. পাশ্চাত্যবাদ কথা বলছে (প্রয়াস, বাংলাবাজার, ঢাকা, ২০২৩)

আত্মকথা
৬৯. ডানামেলার দিনলিপি (২০২৫, ইলহাম, ঢাকা)

তাসাউফ
৭০. তাসাউফরে স্রোতোধারা ( ২০২৫, ইলহাম, ঢাকা)

প্রকাশিতব্য :
৭১. ইসলামোফোবিক চ্যালঞ্জে বনাম আল কুরআনের প্রতিরক্ষা
৭২. আসমাউর রিজাল
৭৩. হাদীস বিচারে পশ্চিমা একাডেমিয়ার অবিচার
৭৪. মহানবীর সা. খাদ্যব্যবস্থাপনা ও ফুড সাইন্স
৭৫. ইসলামী আইনে উসূল ও কায়েদা
৭৬. শিক্ষাব্যবস্থা : ইসলামী রূপরেখা
৭৭. সহীহ মুসলিমের মুকাদ্দিমা
৭৮. ইসলামের দার্শনিক ভাষ্য।

মুসা আল হাফিজের সম্পাদিত গ্রন্থ ও সংকলন ১২ টি।

মুসা আল হাফিজের সাহিত্যকর্ম নিয়ে গ্রন্থ
১. মুসা আল হাফিজ : কবিতার নতুন কণ্ঠস্বর -মুকুল চৌধুরী। (২০১১) যা পরবর্তীতে মুকুল
চৌধুরীর ‘আরওতিন কবি, ঐতিহ্যের মেধাবী উত্তরাধিকার’ (২০২০) গ্রন্থে সংকলিত হয়।
২. মুসা আল হাফিজের মননবিশ্ব-ড. মো. রিজাউল ইসলাম (২০১৮)
৩. মননের কবি, বৈদগ্ধের দৃষ্টিতে- এম . আসাদ চৌধুরী (২০১৯)

 মুসা আল হাফিজ বিষয়ক বিশেষ সংখ্যা :
১. বাতায়ন। ( অক্টোবর, ২০০৯)
লেখকবৃন্দ :ড. আশরাফ সিদ্দিকী, সৈয়দ মোস্তফা কামাল, সরকার সাহাবুদ্দীন আহমদ প্রমুখ।

২. বুনন, প্রকাশ: ০৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩)
লেখকবৃন্দ : আল মাহমুদ,মাওলানা মুহিউদ্দীন খান, কবি দিলওয়ার, কালাম আজাদ, মুকুল চৌধুরী, উবায়দুর রহমান খান নদবী, শাহ মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম, সিদ্দিকুর রহমান, সেলিম আওয়াল, আবদুল মুকিত অপি প্রমুখ।

৩. বিশেষ ক্রোড়পত্র ; দৈনিক সিলেট সংলাপ (বৃহস্পতিবার, ১০ সেপ্টেম্বর, ২০১৫),
লেখক : এবনে গোলাম সামাদ, বিচারপতি আবদুর রউফ, কে এম হানিফ, কালাম আজাদ, আফতাব চৌধুরী প্রমুখ।

৪. বিশেষ ক্রোড়পত্র ; দৈনিক সিলেট সংলাপ (মঙ্গলবার, ২৭ মার্চ, ২০১৮),
লেখক : ড. মো. আশ্রাফুল করিম, প্রফেসর ড. মো. নজরুল ইসলাম, ড. মাহফুজুর রহমান আখন্দ, ড. মো. ফয়জুল হক, সুমন আখন্দ, মো. জাহাঙ্গীর আলম, মুহা. জাকির হোসাইন প্রমুখ।

পুরস্কার :
কেমুসাস-দেওয়ান আহবাব র্স্বণপদক (২০২৪)
উলুমূল কুরআন জাতীয় পুরস্কার (২০০৮)
গ্রেটার সিলেট সাহিত্য পুরস্কার (২০১৫)
ফররুখ আহমদ জন্মশতবার্ষিকী পুরস্কার (২০১৯)
জাতীয় কবিপরিষদ সাহিত্য পদক (২০১৯)
বাসাসপ সাহিত্য পুরস্কার (২০২০)
আল আমানাহ সাহিত্য পুরস্কার (২০১০)
আদর্শ নারী সাহিত্য পদক (২০১২)
ড. মমিনুল হক সাহিত্য পদক ,ইউকে (২০১৩)
জালালাবাদ সাহিত্য পুরস্কার (২০১৯)

তিন.
আত্মপ্রকাশের প্রথম প্রহরেই মুসা আল হাফিজের কণ্ঠস্বর নিজস্ব চিহ্ন ও মেজাজ নিয়ে উচ্চারিত হতে থাকে। তার রচনার অন্তর্লাবণ্য ও বয়ানের আবেদন প্রতিটি ধারার গুণী মহলের কাছে অভিনন্দিত হয়। লোকবিজ্ঞানী ও কবি ড. আশরাফ সিদ্দিকী যেমন তার মধ্যে ঐতিহ্য থেকে উঠে আসা একটি দার্শনিক মন সনাক্ত করেন, তেমনি কবি আসাদ চৌধুরী তাকে নীরিক্ষণ করেন বুদ্ধিবৃত্তি ও আধ্যাত্মিকতার মতো দুই মেরুর ঘটক হিসেবে।

কবি আল মাহমুদের অবলোকনে মুসা আল হাফিজের কবিতা ও চিত্তলোকের মর্মবস্তু উদভাসিত হয়েছে। তাঁর ভাষায়- এসময় যাদের কলমে বৈশিষ্টমণ্ডিত  কবিতার বীর্য রয়েছে, তাদের মধ্যে শক্তিমান এক কবি মুসা আল হাফিজ। মুসা আল হাফিজ যে শক্তিমান,তার স্বাক্ষ্য ঈভের হ্রদের মাছ কাব্যে রয়েছে।সত্যিকার কবি হৃদয় নিয়ে তিনি এ গ্রন্থে আবির্ভূত হয়েছেন। আমি এতে প্রকৃত কবিতার এই আকালে তার প্রতি বড় আশার দৃষ্টিতে চেয়ে আছি। কারণ মানুষ ও মানুষের পৃথিবীর জন্য সবচেয়ে জরুরী যে বিশ্বাস, সেই বিশ্বাসের স্বচ্ছল আনন্দে অবগাহন করে বিদ্যুচ্ছমকের মতো উজ্জল দৃশ্য ও বাক্য নির্মাণে মুসা আল হাফিজ পারঙ্গম।

তাঁর শব্দ ও বিষয়সচেতনতা উচ্চমানের। গভীর আধ্যাত্মিকতার রহস্য তৈরীতে তার প্রচেষ্টা নিয়োজিত হয়েছে। আমি এতে বৈদগ্ধ ও শিল্পসাফল্যের চিহ্ণ লক্ষ করেছি। ডান-বাম মিলিয়ে এই প্রজন্মের তরুণ কবিদের মধ্যে মুসা আল হাফিজের কবিতায় সবচে সবলভাবে প্রাণের স্পন্দন শুনা যায়। তার দেখার তৃতীয় চোখ অন্তর্ভেদী বলেই মনে হলো ।

তিনি দেখেছেন ‘বাতাসের ঢেউয়ে ভাসে পর্বতের পাঁজরের গুঁড়া’, ‘প্রকৃতির গলিত পুঁজে ভরে যাচ্ছে ইথারের ঝিল’।তাঁর সাহসী উচ্চারণ ‘মৃত্যুর বুকে আমি পা রাখলেই পৃথিবীর বিজয় উৎসব।’ (প্রকাশ : আনতারা, ফেব্রুয়ারি, ২০১৩, আল মুজাহিদী সম্পাদিত)।

সমসাময়িক চিন্তা ও সাহিত্যে মুসা আল হাফিজের আবেদনে বৈচিত্র রয়েছে। বিশেষত একাডেমিক পরিসরে তাঁর সৃষ্টিকর্মের প্রতি মনোযোগ লক্ষ্যণীয়। এক্ষেত্রে প্রফেসর ড. রিজাউল ইসলামের গবেষণাগ্রন্থ ‘মুসা আল হাফিজের মননবিশ্ব’ ( ফেব্রুয়ারি, ২০১৮)একটি উল্লেখযোগ্য কাজ।

চার.
মুসা আল হাফিজের সমগ্র সাহিত্যকর্মের সাথে মোলাকাতের অভিজ্ঞতা কেমন হতে পারে? এর প্রভাবই বা কীরূপ ? এর আবেদন ঠিক কোথায়? শুধু মননে? চিন্তায়? না আরো কোথাও?

এ প্রশ্নের একটা উপসংহার পাওয়া যেতে পারে কবি, গবেষক মুকুল চৌধুরীর জবানিতে। তিনি মুসা আল হাফিজকে গভীরভাবে ব্যাখ্যা করেছেন তার গদ্যে। তাঁর গোটা অবলোকনের সারমর্মও তুলে ধরেছেন কিছু পঙক্তিতে। তিনি তাঁর অপার্থিব সফরনামা (ডিসেম্বর , ২০১১, প্রকাশক পাণ্ডুলিপি প্রকাশন) কাব্যগ্রন্থটি উৎসর্গ করেন কবি মুসা আল হাফিজকে। উৎসর্গছত্রে  লিখেন কিছু পঙক্তি। এতে উঠে এসেছে মুসা আল হাফিজের সাথে মানসিক মোলাকাতের অভিজ্ঞতা। তাঁর ভাষায়-

‘একরাতে দেখা হয়েছিল আকাশ ও পৃথিবীর মাঝখানে

নীলিমার খোলা জানালার ওপাশে

প্রেমের আনন্দলোকে

গিয়েছিলাম তৃষ্ণার্ত পেয়ালা হাতে

মণি-মুক্তো কুড়াবো বলে

ফিরে এলাম শব্দের লাল গোলাপে মোড়ানো

কবিতার শস্যদানা নিয়ে

সেই থেকে দুই সিনা একই পশমের পোশাকে আবৃত।’

এই ভাষ্য থেকে পরিষ্কার যে, মুসা আল হাফিজ যতোটা মনন ও মস্তিষ্কের, তার চেয়ে বেশি হৃদয়ের । হৃদয়ই তার প্রধান খাত। বাকি দুই খাত তার উপধারা।

লেখক: গবেষক ও সাহিত্যসমালোচক। শিক্ষক: জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, গাজীপুর

এমএইচ/


সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ