বৃহস্পতিবার, ২৯ মে ২০২৫ ।। ১৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ ।। ২ জিলহজ ১৪৪৬

শিরোনাম :
সিরীয়ার উপর থেকে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা তুলে নিলো ইউরোপীয় ইউনিয়ন রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে সাসাকাওয়ার সহযোগিতা চাইলেন প্রধান উপদেষ্টা ঈদুল আজহা উপলক্ষে বাংলাদেশ জাতীয় মুফতী বোর্ডের মতবিনিময় অনুষ্ঠিত আবরার ফাহাদকে হত্যা বৈধ ছিল : ছাত্র ইউনিয়ন নেতা ফিলিস্তিনের গাজায় যুদ্ধাপরাধ হচ্ছে: ইসরায়েলের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ‘ভারতের দালালরা ছোবল মারতে দেশের মধ্যেেই ঘাঁপটি মেরে আছে’ হেফাজতের মামলা সংখ্যা ৪৪টি নয়, ২২০টি কাজী নজরুল বাংলার সার্বজনীন কবি: অভিনেতা আবদুল আজিজ বাংলাদেশের আকাশে জিলহজের চাঁদ, ঈদুল আজহা ৭ জুন শাপলার গণহত্যার সমর্থক শাহবাগীদেরও বিচার করতে হবে: হেফাজতে ইসলাম

জৌলুস হারাচ্ছে ৩০০ বছরের পুরানো রানী ভবানী রাজবাড়ী

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

অর্ধবঙ্গেশ্বরী খ্যাত নাটোর রানী ভবানী রাজবাড়ীটি নির্মিত হয়েছে ৩০০ বছর আগে। রাজা রামজীবন প্রায় ৫০ একর জমির উপরে এটি নিমার্ণ করেন। এরপর অনেক রাজা এ রাজবংশ শাসন করেছেন। এখন রাজারানী না থাকলেও রয়েছে, তাদের স্মৃতি বিজড়িত রাজবাড়ীটি।

যুগ যুগ ধরে অযত্নে জৌলুস হারাচ্ছে রাজবাড়ীটি। হারিয়ে যেতে বসেছে তার স্থাপত্যশৈলী ও সৌন্দর্য্য। প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর দায়িত্ব নিলেও তেমন কোনো বড় সংস্কারের মুখ দেখেনি এই নিদর্শনটি। ফলে সংস্কারের অভাবে দিনে দিনে নষ্ট হচ্ছে বিভিন্ন ভবনের অবকাঠামো ও স্থাপত্যশিল্প।

২০১৮ সালে বড় তরফটি সংস্কার হিসেবে রং করা হয়। তবে ছোট তরফের কিছু ভাঙ্গা কাঠের দরজা-জানালা মেরামতের কাজ করা হলেও এখনো রংয়ের হাত পড়েনি। তবে বড় তরফের দক্ষিনে বৈঠক খানাটি রং করে কিছুটা সৌন্দর্য বাড়ানো হয়েছে। দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর রাজবাড়ীর দেয়ালে শুধু রং ও ফাটল বন্ধ করা ছাড়া তেমন কোনো কাজ করতে দেখা যায়নি।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, প্রাচীন এ স্থাপত্যশৈলীর অনেক অংশ প্রাকৃতিক নানা দুর্যোগে নষ্ট হয়েছে। হারিয়েছে তার সৌন্দর্য। বিভিন্ন ভবনের গায়ে নিখুঁত নিমার্ণ কৌশল দেখে মুগ্ধ হচ্ছেন দর্শনার্থীরা। তখনকার শিল্পীদের নিখুঁত হাতে প্রসাদের গায়ে আকাঁ চমৎকার শিল্পকর্ম আজ জানান দিচ্ছে তাদের কর্মদক্ষতা। দেয়ালে দেয়ালে বিভিন্ন প্রাণীর মূর্তি প্রকাশ পাচ্ছে। কিছু ভবনের উপর থেকে ইট মাটি খসে খসে পড়ছে। অনেক ভবনে ময়লা-আর্বজনা স্তুপে পরিণত হয়েছে।

জানা যায়, ১৭০৬ খিষ্টাব্দে থেকে ১৭১০ খ্রিষ্টাব্দে রাজা রামজীবন নাটোর রাজবংশের প্রথম রাজা হিসেবে প্রতিষ্ঠা পান। ১৭৩৪ খ্রিষ্টাবে মৃত্যুর পর তার দত্তকপুত্র রামকান্ত রাজা হন। ১৭৪৮ খ্রিষ্টাব্দে রামকান্তের মৃত্যুর পর রানী ভবানীর ওপর জমিদারী পরিচালনার দায়িত্ব অর্পন করা হয়। ১৮০২ সালে রানী ভবানীর মৃত্যুের পর তাঁর দত্তকপুত্র রামকৃষ্ণের দুই পুত্র বিশ্বনাথ ও শিবনাথের মধ্যে জমিদারি ভাগাভাগি হয়। বড় ছেলে বিশ্বনাথ পান বড় তরফ এবং ছোট ছেলে শিবনাথের পেয়ে যান ছোট তরফ।

সেই থেকে তাদের উত্তরাধিকারীরা ছোট তরফ ও বড় তরফ নামে জমিদারি পরিচালনা করেন। বীরেন্দ্রনাথ ছিলেন নাটোর রাজবংশের ছোট তরফের শেষ রাজা। তিনি ১৮৯৭-১৯৫৫ খ্রিঃ পর্যন্ত রাজত্ব করেন। বড় তরফের রাজা যোগীন্দ্রনাথ ১৮৮৬-১৯৮১খ্রিঃ পর্যন্ত দেশভাগের সময় তারা ভারতে চলে যান। ১৯৫০ সালে তৎকালীন পাকিস্তান সরকার জমিদারি প্রথা বাতিল করেন। এই রাজবাড়ি চত্বরে ছোট বড় ৮টি ভবন, ছোট বড় মিলে ৫টি পুকুর রয়েছে। শিব মন্দিরসহ বেশ কয়েকটি মন্দির রয়েছে। রাজবাড়ীর নিরাপত্তার জন্য চারিদিকে ঘিরে আছে দুই স্তরের বেড়চৌকি। যা আজ সেই অবস্থায় আছে। অন্যদিকে এক ভুমিকম্পে রানী মহলের বেশিভাগই মাটির নিচে দেবে গেছে।

ঘুরতে আসা পাবনার বাসিন্দা নাসরিন আক্তার বলেন, জায়গাহটি অনেক নিরিবিলি। তবে পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন এবং পরিপাটী থাকলে আরও ভালো লাগতো। বিশেষ করে প্রসাদগুলো অনেক পুরানো প্রাচীন। সেগুলোকে যত্ন নিয়ে সংস্কার করলে আরও সুন্দর লাগতো।

দর্শনার্থী শামীম হোসেন বলেন, পুরো রাজবাড়িটি ঘুরে ঘুরে দেখলাম ভালো লাগলো। তবে আধুনিকায়ন করলে সুন্দর্য্য ফিরে পেত। এছাড়া পুরানো সব নিদর্শনগুলো থাকা দরকার ছিল। পুরো রাজবাড়িটি নতুন ভাবে সংস্কার করা হলে ইতিহাস সমৃদ্ধি হতো। স্কুল শিক্ষক মাহাবুর রহমান বলেন, রানী ভবানী হিসেবে পরিচিত ঐতিহ্যবাহী রাজবাড়িটির অনেক ইতিহাস রয়েছে। এ রাজবাড়ীর অনেক ইতিহাস পড়েছি, আজ দেখতে এসেছি। এখানে যদি নতুন করে সংস্কারের মাধ্যমে ফুলগাছ, লতাপাতা দিয়ে সৌন্দর্য্য বাড়ানো যেতে। তাহলে বড় একটি পযটন স্থান পেত। এসব নিদর্শন মানুষের স্মৃতি সমৃদ্ধ করে।

নাটোরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. আরিফ হোসেন বলেন, নাটোর রানী ভবানীর রাজবাড়িটি দেশব্যাপী অনেক সুনাম রয়েছে। আমাদের একটি বড় পর্যটন স্থান এটি। এখানে প্রতি বছর দেশ-বিদেশ থেকে অনেক পর্যটক আসেন। ধাপে ধাপে ভবনগুলোর সংস্কার চলছে।

এনএইচ/


সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ