খেলাফত মজলিসের নেতৃবৃন্দ বলেন, বিগত ফ্যাসিবাদী সরকার ঘুষ, দুর্নীতি, অর্থ পাচার, অপচয় ও অব্যবস্থাপনার মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিকে বিপর্যস্ত করে রেখে গেছে। বিশাল ঋণের বোঝার মধ্যে দেশকে ডুবিয়ে তারা পালিয়ে গেছে। বাজেটে এ বিপর্যস্ত অর্থনীতিকে টেনে তুলার ব্যবস্থা থাকতে হবে। খেলাফত মজলিস আয়োজিত ২০২৫-২৬ অর্থ বছরের প্রাক বাজেট আলোচনায় বক্তারা এসব কথা বলেন।
নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, ড. মুহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকাীলন সরকার ভেঙ্গে পড়া অর্থনীতিকে সামাল দেয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছে। বিপর্যস্ত অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে হবে। এ জন্য দেশী বিদেশী বিনিয়োগ, দুর্নীতির সকল পথ বন্ধ করে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা, কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও রেমিটেন্স বৃদ্ধিতে জোর দিতে হবে। আগামী ২ জুন বাজেট প্রস্তাবনা উপস্থাপন করা হবে। এই বাজেট নিয়ে মানুষের আগ্রহ ব্যাপক।
আলোচনায় নেতৃবৃন্দ বলেন, আসন্ন ২০২৫-২৬ অর্থ বছরের বাজেটে কয়েকটি বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া দরকার। গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর মধ্যে রয়েছে:
১. মূল্যস্ফীতি ও প্রবৃদ্ধির মধ্যে ভারসাম্যের দৃশ্যমান প্রচেষ্টা থাকতে হবে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করতে হলে জ্বালানী ও বিদ্যুতের দাম বাড়তে দেয়া যাবে না।
২. এডিপি বাস্তবায়নসহ সকল ক্ষেত্রে দুর্নীতিকে শূন্যের কোটায় নিয়ে আসতে হবে। বৈষম্যমুক্তভাবে প্রত্যন্ত এলাকায় যাতে উন্নয়ন কর্মসূচী বাস্তবায়িত হয় তা নিশ্চিত করতে হবে। সকল ব্যয় বা বরাদ্দের মূল শর্ত হবে জনগণের কল্যাণ।
৩. সরকারের পরিচালন ব্যয় নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
৪. দারিদ্র্য দূরীকরণে জাকাত ব্যবস্থা শক্তিশালী করা।
৫. আর্থিক খাত পুনরুদ্ধার বিশেষ করে ব্যাংকিং সেক্টর পুনরুদ্ধারে বাস্তব ভিত্তিক কর্মসূচি থাকতে হবে।
৬. ক্রিপ্টোকারেন্সির শোষণ ও বিদেশে অর্থপাচার রোধে ব্যবস্থা নিতে হবে।
৭. ঘাটতি/ বিদেশী ঋণ নির্ভরতা কমিয়ে আনতে হবে।
৮. আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংকের প্রভাব কমাতে হবে। বাজেটে বছরের পর বছর একই চিত্র; একটি বাজেটে ২২% ঋণ আর ঋণের সুদ ১৬% এটা কোন ভাবেই স্বনির্ভর জাতি গড়তে পারে না।
৯. উন্নয়ন ব্যয় কোনভাবেই যাতে ঋণ নির্ভর না হয়। প্রয়োজনে প্রাইভেট সেক্টর হতে এবং প্রবাসীদের বিশেষ সুবিধায় বন্ড দিয়ে আভ্যন্তরীন উৎস হতে ঘাটতির অর্থ সংগ্রহ করা যেতে পারে।
১০. করমুক্ত আয় আর ন্যূনতম কর আরোপের পরস্পর বিরোধী সিদ্ধান্ত হতে সরে আসলে কর প্রদানকারীর সংখ্যা বাড়বে। কর রেয়াতের আওতা না কমিয়ে কর সম্পর্কে হয়রানী ও ভীতি দূর করে করদাতার সংখ্যা বাড়ানো।
১১. চামড়া শিল্প এমন একটি শিল্প তার কাঁচামাল গার্মেন্টস এর মতো আমদানী করতে হয় না। বর্তমানে এই ২য় শীর্ষ রপ্তানী খাতের অবস্থা শোচনীয়। তাই সরকারি প্রচেষ্টায় এলডব্লিওজি এর সদস্য সংখ্যা ৬ থেকে ১০০ তে উন্নীত করা গেলে এটি গার্মেন্টস শিল্পকে ছাড়িয়ে যেতে পারে।
১২. দক্ষ শ্রম বাজার ইউরোপ- আমেরিকায় বিস্তৃত করার ব্যবস্থা করা।
১৩. ফ্রীল্যান্সিং প্রশিক্ষণে প্রণোদনা দিয়ে হলেও তরুণদের ব্যাপকভাবে কাজে লাগাতে হবে। নির্বিঘ্নে বিনিময় গ্রহণ করতে বাংলাদেশে পেপাল সহ অপরাপর সার্ভিসগুলো চালু করার কার্যকর উদ্যোগ নেয়া।
১৪. এফডিএ বৃদ্ধি করার চলমান প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখা ও আমলাতান্ত্রিক জটিলতার অবসান ঘটানো।
১৫. শিক্ষা খাতে বরাদ্দ বাড়িয়ে গবেষণার সুযোগ বৃদ্ধি করা।
১৬. দেশের সর্বাভৌমত্ব সুরক্ষায় প্রতিরক্ষা বাজেট বাড়ানো। দেশের প্রতিটি সক্ষম নাগরিককে পর্যায়ক্রমে সামরিক প্রশিক্ষণ প্রদান করা যায়।
খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ড. আহমদ আবদুল কাদেরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত প্রাক বাজেট আলোচনা সভায় ২০২৫-২৬ অর্থ বছরের বাজেটকে সামনে রেখে কি-নোট উপস্থাপনা করেন যুগ্মমহাসচিব ড. মোস্তাফিজুর রহমান ফয়সল। আলোচনা পেশ বরেন যুগ্মমহাসচিব এডভোকেট জাহাঙ্গীর হোসাইন, অধ্যাপক মো: আবদুল জলিল, এডভোকেট মো: মিজানুর রহমান, প্রকৌশলী আবদুল হাফিজ খসরু, এডভোকেট মাওলানা শায়খুল ইসলাম, এডভোকেট তাওহীদুল ইসলাম তুহিন, ডা. আবদুুর রাজ্জাক আসাদ, অধ্যাপক মাওলানা আজিজুল হক, মাওলানা সাইফুদ্দিন আহমদ খন্দকার, আবুল হোসেন, এডভোকেট রফিকুল ইসলাম, এইচ এম হুমায়ুন কবির আজাদ, কাজী আরিফুর রহমান, এডভোকেট এনায়েত রাব্বি একরাম।
এমএইচ/