বৃহস্পতিবার, ০৩ জুলাই ২০২৫ ।। ১৯ আষাঢ় ১৪৩২ ।। ৮ মহর্‌রম ১৪৪৭

শিরোনাম :
আধুনিক ইতিহাসে অন্যতম নিষ্ঠুর গণহত্যাকারী ইসরায়েল: জাতিসংঘের বিশেষ দূত জুলাই সনদ ছাড়া নির্বাচনে যাবে না এনসিপি: নাহিদ ইসলাম গুমের সঙ্গে জড়িত সেনা সদস্যদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে: সেনাবাহিনী জাতিসংঘের সমকামী দূত ও কার্যালয় স্থাপন বাতিলের দাবি খেলাফতের ভোর থেকে ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ৭৩ ফিলিস্তিনি নিহত তাবেলা সিজার হত্যা : তিনজনের যাবজ্জীবন, চারজন খালাস হযরত মুহাম্মদ (সা.) -এর অবমাননা একটি উসকানিমূলক ও ঘৃণিত কাজ জামেয়া ইসলামিয়া মুনশীবাজারে প্রয়াত শিক্ষকদের স্মরণে আলোচনা সভা ১২ জুলাই মুহতামিম সম্মেলন সফল করতে মানিকছড়িতে মতবিনিময় সভা শুটকি মাছের পুষ্টিগুণ

রংপুর চিনিকল চালুর খবরে নতুন স্বপ্ন দেখছেন শ্রমিক-কর্মচারীরা

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

রংপুর ব্যুরো

আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে কারখানা আধুনিকায়নের কথা বলে আখ মাড়াই বন্ধ ঘোষণা করা রংপুর চিনিকল আবার চালুর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করায় এলাকায় বইছে খুশির বন্যা। গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার মহিমাগঞ্জে অবস্থিত জেলার একমাত্র কৃষিভিত্তিক ভারী শিল্প-কারখানা রংপুর চিনিকল।

লোকসান কমাতে আধুনিকায়নের মাধ্যমে লাভজনক প্রতিষ্ঠানে উন্নীত করার কথা বলে ২০২০ সালের ডিসেম্বরে বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্যশিল্প সংস্থার নিয়ন্ত্রণাধীন ১৫টির মধ্যে যে ছয়টি চিনিকলে মাড়াই কার্যক্রম বন্ধ করা হয়- তার মধ্যে অন্যতম রাষ্ট্রায়ত্ত রংপুর চিনিকলটি। গত ১৫ ডিসেম্বর শিল্প মন্ত্রণালয় থেকে মাড়াই স্থগিত ঘোষণা করা ছয়টি চিনিকলের মাড়াই স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারের সরকারি সিদ্ধান্তের সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে আখ চাষি ও শ্রমিকসহ সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে বয়ে যাচ্ছে আনন্দের বন্যা। দুর্দিন কাটিয়ে সুদিনের আশায় শ্রমিক-কর্মচারী ও আখ চাষিসহ এলাকার মানুষ নতুন করে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন।

রংপুর চিনিকলের শ্রমিক-কর্মচারী, আখ চাষিসহ এলাকার লোকজন অভিযোগ করে বলেন, ২০২০-২১ আখ মাড়াই মৌসুম শুরুর সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেও সর্বোচ্চ মাড়াই ক্ষমতা ও বিপুল পরিমাণ জমিতে দণ্ডায়মান আখ জমিতে রেখে একেবারে শেষ মুহূর্তে মিল বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়ায় বিক্ষুব্ধ আখ চাষি ও শ্রমিক-কর্মচারীরা আন্দোলন শুরু করেন। আওয়ামী লীগ সরকার প্রতারণার মাধ্যমে এবং শ্রমিক আন্দোলন বা চাষিদের আকুতিকে বৃদ্ধাগুলি দেখিয়ে মাড়াই কার্যক্রম বন্ধ করে বলে অভিযোগ করেন শ্রমিক-কর্মচারী ও আখ চাষি নেতারা।

চিনিকল সংশ্লিষ্ট সূত্রে থেকে জানা যায়, গত শতাব্দীর নব্বইয়ের দশকে তৎকালীন এরশাদ সরকারের শাসনামলে আধুনিকায়নের নামে কর্মকর্তাদের জন্য দামি গাড়ি-বাড়ি, অ্যাম্বুলেন্স ও কারখানার কিছু সংস্কারের জন্য বিশ্বব্যাংক থেকে বিপুল পরিমাণ ঋণ দেওয়া হয় বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্যশিল্প সংস্থার আওতাধীন চিনিকলগুলোতে। এসব ঋণ এখন গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে চিনিকলগুলোর। রংপুর চিনিকলের বর্তমানে ৫০০ কোটি টাকা পুঞ্জীভূত লোকসানের প্রধান কারণ বিশ্বব্যাংকের ওই ঋণ বলে অভিযোগ করেছেন তারা। গত চার বছর বন্ধ থাকায় ৩৫ একর আয়তনের কারখানার চত্বর ভরে গেছে জঙ্গলে। সেই দৃশ্য দেখলে মানুষের সরব উপস্থিতির অভাব নিশ্চিত হওয়া যায় খুব সহজে। খোলা আকাশের নিচে অযত্ন-অবহেলায় পড়ে থাকা আখ পরিবহনের যানবাহনগুলোও ধ্বংসের পথে। কারখানার ভেতরের দৃশ্যটাও একই রকম। কোটি কোটি টাকা মূল্যের যন্ত্রপাতিতে এখন মরিচার রাজত্ব। থমকে আছে জীবিকার চাকাগুলো। আখ চাষি আর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিত্যদিনের সমাবেশের চিরচেনা দৃশ্য আর নেই।

এলাকাবাসী জানায়, ১৯৫৪ সালে তৎকালীন রংপুর জেলার গাইবান্ধা মহকুমার গোবিন্দগঞ্জ থানার মহিমাগঞ্জে শুরু হয় রংপুর চিনিকলের নির্মাণকাজ। ২৬১ কোটি টাকা ব্যয়ে তিন বছর পর শেষ হয় মিলটির নির্মাণকাজ। ১৯৫৭-৫৮ মৌসুম থেকেই আখ মাড়াইয়ের মাধ্যমে চিনি উৎপাদন শুরু হয় মিলটিতে। পশ্চিম জার্মানির বাকাউ-উলফ নামে একটি কোম্পানি থেকে আনা মেশিনে ৩৫ একর জায়গাজুড়ে গড়ে ওঠে মিলের কারখানা ও কার্যালয়। ১৯৭২ সালে রংপুর চিনিকলসহ সব চিনিকলকে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান হিসেবে ঘোষণা করেন।

রংপুর চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ইনচার্জ) মাসুমা আকতার জাহান বলেন, রংপুর চিনিকলসহ মাড়াই স্থগিতকৃত ছয়টি চিনিকল আবার চালুর বিষয়টি আমিও শুনেছি। আধুনিকায়নের মাধ্যমে চিনিকলটি চালু হলে অবশ্যই লাভজনক অবস্থায় উন্নীত হবে। কারণ এখানকার মাটি ও পরিবেশ আখ চাষের জন্য খুবই উপযোগী।

রংপুর চিনিকল শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি আবু সুফিয়ান সুজা বলেন, দেশের কৃষক-শ্রমিকদের স্বার্থের বিপরীতে গিয়ে স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগ সরকার রাষ্ট্রায়ত্ত চিনি শিল্প-কারখানা বন্ধ করে দেওয়ার গভীর চক্রান্ত করেছিল। চিনিকলটি বন্ধ হয়ে থাকায় এই জনপদের সব স্তরে অন্ধকার নেমে এসেছে। অসাধু সিন্ডিকেটের ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন করে অন্তর্বর্তীকালিন সরকার আবার চিনিকলটি আধুনিকায়নের মাধ্যমে চালু করার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে- তা খুবই বাস্তবসম্মত।

মিলস গেট সাব-জোনের আখ চাষি ফেরদৌস আলম অভিযোগ করে বলেন, রংপুর চিনিকলের চেয়ে অনেক কম মাড়াই ক্ষমতাসম্পন্ন জয়পুরহাট চিনিকলের আখ জোন এলাকায় আখও উৎপাদন হয় কয়েকগুণ কম। তারপরও ওই মিলটি চালু রেখে ৫০ থেকে ১০০ কিলোমিটার দূরের রংপুর চিনিকলের আখ এবং ১৫০ থেকে ২০০ কিলোমিটার দূরের শ্যামপুর চিনিকলের আখ জয়পুরহাটে পরিবহন করতে অতিরিক্ত ব্যয় করার মাধ্যমে শিল্পটি চিরতরে বন্ধ করার ষড়যন্ত্র করা হয়েছিল।


সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ