||মুফতি এনায়েতুল্লাহ||
অন্যের কাজ, চাল-চলনসহ নানা বিষয়ে অহেতুক মন্তব্য, বাজে ট্যাগিং ও হস্তক্ষেপ করাকে ‘নাক গলানো’ বলা হয়। আমাদের দেশে নাক গলানো বা ‘নোজপোকিং’য়ের বিষয়টি ব্যাপক প্রচলিত। বেশির ভাগ মানুষ অন্যের ব্যক্তিগত ব্যাপারে নাক গলাতে, অহেতুক প্রশ্ন করতে পছন্দ করে, শুধু শুধু সমালোচনা করতে ভালোবাসে। কাজে লাগুক আর না লাগুক, এটা তাকে করতেই হয়, এ এক ভীষণ জ্বালা!
ক্ষেত্রবিশেষ এটাকে ‘পবিত্র দায়িত্ব’ মনে করে। ফলে বলা চলে, অনধিকারচর্চায় এ দেশের মানুষ ভীষণ ওস্তাদ। আপনি যতই অপছন্দ করুন না কেন, ব্যক্তিগত নানা খুঁটিনাটি বিষয়ে প্রশ্ন আপনাকে শুনতেই হবে। এমনকি বন্ধুত্ব ও সম্পর্কের সূত্রেও আপনাকে দোষী বা দায়ি মনে করে অনেকে কৌতূহলের বশে এসব প্রশ্ন করেন। যা তার জীবনের সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়, উপকারী নয়।
কারও ব্যক্তিগত ব্যাপারে প্রশ্ন করা যে উচিত নয়, এই অজ্ঞতা থেকে কেউ কেউ এসব প্রশ্ন করেন। তবে বেশির ভাগ মানুষ জেনেবুঝেও অন্যের ব্যক্তিগত ব্যাপার নিয়ে নাক গলান, মাথা ঘামান। এটা এখন যেন আমাদের জাতীয় বৈশিষ্ট্যে পরিণত হয়েছে।
এই বিচিত্র স্বভাব থেকে আমরা অন্যের ব্যাপারে শুধু নাক গলাতেই পছন্দ করি না, এক ধরনের সমালোচনা, পরস্পরবিরোধী মন্তব্য করতেও ওস্তাদ! রাজনীতি থেকে শুরু করে কে কাকে বিয়ে করছে, কার সংসার টিকছে, কার সংসার ভাঙছে, কে কোথায় বৈঠক করছে, কে কার সাথে চলাফেরা করছে- এগুলো নিয়ে তাদের সঙ্গে যাদের দূরতম কোনো সম্পর্ক নেই- তারাও নানা মন্তব্য করছে, রসালো আলাপ ছাড়ছে। একজনের পক্ষ নিয়ে খুব মাতামাতি করে আরেকজনকে গালাগালি করছে। ভাই তাতে আপনার কী লাভ হলো?
অযথা কিছু গোনাহ কামানো ছাড়া, নিজেকে অন্যের সামনে ছোট করা ছাড়া, মূলবান সময় নষ্ট করা ছাড়া আর কী পেলেন? সুতরাং সাধু সাবধান। সবকিছুতেই নাক গলাতে যাবেন না। এটা মানুষের ভালো স্বভাব নয়। এমন স্বভাবের মানুষকে কেউ পছন্দ করে না।
নাক গলানো স্বভাবের কারণে মানুষের জীবনে নেমে আসে অহেতুক অশান্তি। মনোবিজ্ঞানীরা বলেন, এমন স্বভাবে লোকেরা সব সময় মানসিকভাবে দুর্বল প্রকৃতির হয়ে থাকেন। নিজেদের ওপর বিশ্বাস ও আস্থা তাদের কম। এটা ঢেকে রাখতে তারা অন্যের সমালোচনা নিয়ে ব্যস্ত থাকেন।
রোগ যেহেতু চিহ্নিত হয়েছে, সুতরাং এবার এ জাতীয় রোগীদের এড়িয়ে চলুন। প্রয়োজনে জনসম্মুখে তাদের চিহ্নিত করতে সহায়তা করুন। মুখের ওপর বলে দিন, ‘ভাইয়া! কে হে তুমি? সব জায়গায় নাক গলাতে আসো ক্যান? এটা তো ভালো স্বভাব নয়!’
লেখক: সিনিয়র সাংবাদিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক
এলএইস/