বৃহস্পতিবার, ২৯ মে ২০২৫ ।। ১৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ ।। ২ জিলহজ ১৪৪৬

শিরোনাম :
শায়খ আহমাদুল্লাহ জানালেন জিলহজের প্রথম দশকের ১১ আমল জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে ডা. মাহাথিরকে প্রধান উপদেষ্টার শুভেচ্ছা  উপকূল অতিক্রম করছে গভীর নিম্নচাপ, হতে পারে জলোচ্ছ্বাস ইরানি ধর্মীয় নেতাকে মুক্তি দিয়েছে সৌদি আরব বাবুনগর মাদ্রাসায় ‘কুরবানীর ফাযায়িল ও মাসায়িল’ শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত এবারের হজ ব্যবস্থাপনা, চ্যালেঞ্জের মধ্যেও সফল আয়োজন: ধর্ম মন্ত্রণালয় ভাটারার মারকাযুল হুদা মাদরাসায় আবাসিক মাদানী শিক্ষক নিয়োগ সচিবালয়ের কর্মচারীদের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপ, উপকূলে টানা বৃষ্টিপাত নির্বাচন ইস্যুতে এনসিপি নেতাকর্মীদের ওপর ক্ষোভ ঝাড়লেন ববি হাজ্জাজ

হঠাৎ জামায়াত আমিরের ‘ক্ষমা প্রার্থনা’ কেন, তাৎপর্য কী?

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

বিশেষ প্রতিনিধি

আওয়ামী লীগ টানা প্রায় সাড়ে ১৫ বছর ক্ষমতায় থাকাকালে সবচেয়ে কোণঠাসা অবস্থায় ছিল জামায়াতে ইসলামী। গত বছরের ৫ আগস্ট ক্ষমতার পালাবদলের পর দলটি যেন মুক্ত বিহঙ্গের মতো ভেসে বেড়াচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে উপেক্ষার শিকার দলটি এখন গণমাধ্যমেরও বেশ মনোযোগ কাড়তে সক্ষম হয়েছে। যেসব মিডিয়া গত পনের বছর জামায়াতের ইতিবাচক সংবাদ এড়িয়ে যেতো তাদের এখন জামায়াতকে নিয়ে বেশ মাতামাতি করতে দেখা যায়।

গত প্রায় দশ মাসে জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান গণমাধ্যমের ব্যাপক কাভারেজ পেয়েছেন। তার সুন্দর সুন্দর কথা অনেকের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছে। তবে কোনো কোনো কথায় বিতর্কও হয়েছে নানা মহলে। এমনকি দলীয় নেতাকর্মীরাও তার অনেক কথায় বিব্রত হয়েছেন।

গতকাল মঙ্গলবার (২৭ মে) মানবতাবিরোধী অপরাধে জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নেতা এটিএম আজহারুল ইসলাম আপিল বিভাগের রায়ে খালাস পেয়েছেন। ফাঁসির রশির সামনে থেকে বেঁচে যাওয়া এই নেতার জন্য স্বাভাবিকভাবে জামায়াতের নেতাকর্মীদের আবেগ ও ভালোবাসা অনেক বেশি। এর বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে আজহারুল ইসলামকে খালাস দিয়ে রায় ঘোষণার পর। দলটির নেতারা আদালত চত্বরেই শুকরানা নামাজ আদায় করেছেন। বায়তুল মোকাররমে জড়ো হয়েছে আনুষ্ঠানিকভাবে শোকরিয়া আদায় করেছেন।

এদিন জামায়াতে ইসলামী দলীয় অবস্থান তুলে ধরতে রাজধানীর ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। তবে সংবাদ সম্মেলন হলেও সেখানে ছিল না কোনো প্রশ্নের সুযোগ। দলের আমির ডা. শফিকুর রহমান একটি লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সেখানে। সেই বক্তব্যে তিনি দেশবাসীর কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করেন। তার সেই ক্ষমা প্রার্থনা নিয়ে নানা মহলে ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে।

জামায়াত আমির তার লিখিত বক্তব্যে বলেন, ‘দল হিসেবে আমরা দাবি করি না যে, আমরা ভুলের ঊর্ধ্বে। এ সংগঠনের প্রতিটি কর্মী, সহকর্মী কিংবা দলের দ্বারা যে যেখানে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, কষ্ট পেয়েছেন, সবার কাছে কোনো শর্ত নেই, বিনা শর্তে মাফ চাই। আপনারা আমাদেরকে ক্ষমা করে দেবেন।’

কোনো প্রশ্নের উত্তর না দেওয়ার ব্যাখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, “আজকে আমরা কোনো প্রশ্নের উত্তর দেব না, আজকের মোমেন্ট আমাদের জন্য ভিন্ন রকম, আপনারা বুঝতে পারছেন। এজন্য বিনয়ী অনুরোধ, মেহেরবানি করে আজকে আমাদের কেউ প্রশ্ন করবেন না।”

জামায়াত আমিরের এই ক্ষমা চাওয়া নিয়ে ব্যাপক আলোচনা চলছে। কেউ কেউ বলছেন, জামায়াতে ইসলামী তার একাত্তরের ভূমিকার দিকে ইঙ্গিত করেই এই ক্ষমা চেয়েছে। যদিও বিষয়টি পরিষ্কার করা হয়নি। প্রশ্নোত্তরের সুযোগ না থাকায় সাংবাদিকরা প্রশ্নও করতে পারেননি। আবার কেউ কেউ বলছেন, এই ক্ষমা একাত্তর প্রসঙ্গে নয়। সামনে যেহেতু নির্বাচন, জামায়াত দলীয়ভাবে এবার বেশ ভালো অবস্থানে রয়েছে। এজন্য দেশবাসীর কাছে সাধারণ ক্ষমা প্রার্থনার মাধ্যমে দলটি ভোটের মাঠে আরেকটু সুবিধা আদায় করতে চায়।

তবে এটাও কেউ কেউ বলছেন, জামায়াতের ভেতরে একটি পক্ষ বরাবরই একাত্তর ইস্যুতে নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করে জাতির কাছে ক্ষমা চাওয়ার দাবি জানিয়ে আসছে। দেশের সুশীল সমাজসহ রাজনৈতিক বিশ্লেষক অনেকেই মনে করেন, এদেশে রাজনীতি করতে হলে জামায়াতের উচিত একাত্তর ইস্যুটি পরিষ্কার করা। এই অস্বস্তি নিয়ে জাতীয় রাজনীতিতে জামায়াত এগোতে পারবে না।

গত ৪ মে মারা যাওয়া সাবেক জামায়াত নেতা এবং বিশিষ্ট আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বরাবরই ক্ষমা চাওয়া ইস্যুতে সরব ছিলেন। এমনকি ২০১৯ সালে তার দল ছাড়ার পেছনে বড় কারণ এটাই ছিল। তিনি মারা যাওয়ার পর দলের শীর্ষ নেতাদের কাছে লেখা চিঠিটি আবার সামনে আসে। সেই চিঠিতে ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক লেখেন, ‘আমি সবসময় বিশ্বাস করেছি এবং এনো করি যে, ৭১-এ মুক্তিযুদ্ধে নেতিবাচক ভূমিকার জন্য ক্ষমা চাওয়া শুধু নৈতিক দায়িত্বই নয় বরং তৎপরবর্তী প্রজন্মকে দায়মুক্ত করার জন্য অত্যন্ত জরুরি কর্তব্য।’

জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেলের পদ ছাড়ার সময় আব্দুর রাজ্জাক পদত্যাগপত্রে এটাও লেখেন, ‘অন্য কোনো বিকল্প না পেয়ে বলেছিলাম, জামায়াত বিলুপ্তি করে দিন।’

একাত্তরে জামায়াতে ইসলামীকে যারা নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তাদের প্রায় কেউই এখন আর দলে নেই। এখন যারা জামায়াতে ইসলামীকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন এর বড় অংশটি একাত্তর পরবর্তী প্রজন্ম। এমনকি মুক্তিযুদ্ধের সময় জামায়াতের বর্তমান আমির ডা. শফিকুর রহমানও প্রাপ্তবয়স্ক হননি। এজন্য একাত্তরের দায় নিয়ে পথ চলতে দলের ভেতরেই অনেকের অনীহা রয়েছে। যদিও দলের আরেকটি অংশ মনে করে, একাত্তরের দায় নিয়ে এখন ক্ষমা প্রার্থনা করা হলে দলের বিগত দিনের নেতাদের অস্বীকার করা হবে। আর এটা করলে নৈতিকভাবে জামায়াত অস্তিত্ব সংকটে পড়বে। এজন্য তারা চান একাত্তর প্রসঙ্গটি যত এড়িয়ে যাওয়া যায় ততই ভালো। ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে জামায়াতে ইসলামীর একটি অংশ জুলাই বিপ্লবকে সামনে এনে একাত্তরকে কিছুটা ম্রিয়মান করে ফেলার চেষ্টাও করেছে। তবে বিএনপি এটি টের পেয়ে একাত্তর ও মুক্তিযুদ্ধ প্রসঙ্গে জোরালো অবস্থান নেওয়ায় সেটা আর সম্ভব হয়নি।

তবে রাজনীতির বিশ্লেষকরা মনে করেন, এদেশের রাজনীতিতে জামায়াতে ইসলামীর সম্ভাবনা রয়েছে। সেই সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে হলে দলটিকে দুটি বিষয়ে অবস্থান পরিষ্কার করতে হবে। এর একটি হলো একাত্তর প্রসঙ্গ, আরেকটি হলো দলের প্রতিষ্ঠাতা আবুল আলা মওদুদীর চিন্তাধারা তারা কতটা ধারণ করেন। একাত্তর ইস্যুতে দলটিকে কম ভুগতে হয়নি। আর দলের প্রতিষ্ঠাতার বিতর্কিত কিছু মতাদর্শের কারণে দেশের হাক্কানি উলামায়ে কেরামের সঙ্গে দলটির বেশ দূরত্ব রয়েছে। জামায়াতকে সামনে এগোতে হলে একাত্তর অস্বস্তি এবং আলেম সমাজের সঙ্গে দূরত্ব কাটিয়ে ওঠার কোনো বিকল্প নেই বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।

এনএইচ/


সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ