শনিবার, ১২ অক্টোবর ২০২৪ ।। ২৭ আশ্বিন ১৪৩১ ।। ৯ রবিউস সানি ১৪৪৬

শিরোনাম :
সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়স পুরুষের ৩৫, নারীর ৩৭ বছর করার সুপারিশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত বাংলাদেশ মাজার ও ধর্ম ব্যবসা সমাচার ময়মনসিংহে ভিমরুলের কামড়ে নিহত ইমাম খুলনায় বিদ্যুতের মিটার রেন্ট ও ডিম্যান্ড চার্জ প্রত্যাহার দাবি ‘দ্বীনের জন্য ওলামায়ে কেরামের ঐক্যবদ্ধের বিকল্প নেই’ এমন দেশ গড়তে চাই, যা নিয়ে দুনিয়ার সামনে গর্ব করা যায় : প্রধান উপদেষ্টা ‘নবগঠিত প্রতিটি কমিশনে ৯২ ভাগ মুসলমানের স্বার্থ দেখার দায়িত্ব উলামায়ে কেরামের’ কর অব্যাহতি পেল গ্রামীণ ব্যাংক ও আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশন দুই শতাধিক মুরব্বি আলেমের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত বেফাকের মজলিসে আমেলার বৈঠক

‘মাতৃভাষার চর্চা করা ফরজে কেফায়া’

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মাওলানা হারুন বুখারী। একজন প্রাজ্ঞ আলেমে দ্বীন। ‘মজলুম দাড়ির ফরিয়াদ’সহ গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি বইয়ের লেখক। বসুন্ধরা মারকাযুল ফিকরিল ইসলামীর সিনিয়র মুহাদ্দিস। হাদিসের খেদমতে দীর্ঘ ৪২ বছর ধরে আছেন। ছাত্রজীবন থেকেই বক্তৃতা-মুনাজারায় তার খ্যাতি রয়েছে ইলমি মহলে। তার জীবনের কয়েকটি দিক নিয়ে সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আওয়ার ইসলামের বিশেষ প্রতিনিধি হুজাইফা মাসজুর

প্রথমে আপনার জন্ম পারিবারিক বিষয়ে জানতে চাই?
মাওলানা হারুন বুখারী : আমার জন্ম হয় ১৯৫৮ সালে। আমার বাড়ি নোয়াখালী জেলার সেনবাগ থানায়, কল্যান্দি ইউনিয়নের মোহাম্মদপুর গ্রামে। বাবার নাম মাওলানা ইদরিস বুখারী। তিনি একশত বছর হায়াত পেয়েছিলেন। ডাভেলে পড়ালেখা করেছেন। তিনি শিব্বির আহমাদ উসমানী রহ. এর সোহবত পেয়েছেন এবং আশরাফ আলী থানবী রহ. এর মুরিদ ছিলেন ও আনোয়ার শাহ কাশ্মীরি রহ. এর খাদেম ছিলেন। আর, আমার আম্মাজান একজন মুয়াল্লিমা, তাইয়েবা এবং সাধারণ গৃহিণী ছিলেন। 

পড়ালেখা কোথায় এবং কাদের সান্নিধ্য পেয়ে আপনি ধন্য হয়েছেন?
মাওলানা হারুন বুখারী : বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানেই পড়ার সুযোগ হয়েছে আমার। যেমন: আমানতপুর মাদরাসা, চৌমুহনী হাজীপুর আশরাফুল উলুম মাদরাসা, কাদিরপুর কাসেমুল উলুম মাদরাসা।  তারপর সুদীর্ঘ সাত বছর হুসাইনিয়া দারুল উলুম (ওলামাবাজার) ফেনীতে অধ্যয়ন করি। ১৯৭৯ সালে সেখান থেকেই প্রথমবার দাওরায়ে হাদিস সম্পন্ন করি। জামেয়া পটিয়া হতে ১৯৮০ সালে পুনর্বার দাওরায়ে হাদিস পড়ি। তারপর পটিয়াতেই ফক্বীহুল মিল্লাত মুফতী আব্দুর রহমান রহ. এর তত্ত্বাবধানে বাংলাদেশে আমরা সর্বপ্রথম চারজন "উলুমে হাদিস" বিভাগে এক বছর সময় দেই।  আমি যাদের সান্নিধ্য পেয়েছি তাদের মধ্যে কয়েকজন হলেন খতিবে আজম আল্লামা সিদ্দিক আহমদ, চট্টগ্রাম। আল্লামা নুরুল ইসলাম আদিব, ওলামাবাজার ফেনী। শায়েখে ওয়াক্ত আব্দুল হালিম, পীর সাহেব। আল্লামা সুলতান যওক্ নদভী সাহেব এবং ফক্বীহুল মিল্লাত আব্দুর রহমান সাহেব রহ.। 

বলা হয়- আপনিই বাংলাদেশে সর্বপ্রথম "উলুমুল হাদিসে" সময় দিয়েছেন?  সেসময় উলুমুল হাদিসের প্রেক্ষাপট কেমন ছিল?
মাওলানা হারুন বুখারী : হ্যাঁ, ১৯৮০ সালে আমরা চারজন ,ফক্বীহুল মিল্লাত আব্দুর রহমান রহ. এর পরামর্শে সর্বপ্রথম উলুমে হাদিসের উপর পৃথকভাবে সময় দেই। আসলে তখনকার সময়ে বাংলাদেশে উলুমে হাদিস ফনের ব্যাপারে ব্যাপকভাবে কারো ধারণাও ছিল না। বহির্বিশ্বে বলতে গেলে জামিয়া আজহার, মদিনা ইউনিভার্সিটি এবং পাকিস্তানের দু-একটি জায়গায় এই বিভাগ ছিল। 

হাদিস চর্চার সাথে জড়িয়ে আছেন কত বছর? কোথায় হাদিসের চর্চা করেছেন? 
মাওলানা হারুন বুখারী : আলহামদুলিল্লাহ সুদীর্ঘ ৪২ বছর যাবত আল্লাহ তায়ালা অধমের দ্বারা এই খেদমত নিয়ে যাচ্ছেন। আল্লাহ তায়ালার কাছে অশেষ কৃতজ্ঞতা যে পড়ালেখা শেষ করার পর থেকেই আমাকে হাদিসের খেদমতের জন্য কবুল করেছেন।  ১৯৮১ সাল থেকে নিয়ে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ ১৬ বছর, উত্তরবঙ্গের সর্ববৃহৎ ইসলামিক প্রতিষ্ঠান "আল জামিয়াতুল ইসলামিয়া কাসেমুল উলুম জামিল মাদরাসা " বগুড়াতে হাদিসের দরস দেয়ার সুযোগ হয়। এ সময় মোটামুটি সব ফনের কিতাবাদী পড়ানোর সুযোগ হয়।  তারপর চলে আসি ঢাকায় অবস্থিত ফক্বীহুল মিল্লাত মুফতী আব্দুর রহমান রহ. এর গবেষণামূলক প্রতিষ্ঠান "মারকাযুল ফিকরিল ইসলামী" ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার বসুন্ধরাতে। আলহামদুলিল্লাহ এখনো উক্ত প্রতিষ্ঠানেই অত্যন্ত ইজ্জতের সাথে খেদমতে বহাল রয়েছি।

ফেরাকে বাতেলার বিপক্ষে আপনার অনেক অবদান চোখে পড়ে সে বিষয়ে জানতে চাচ্ছি
মাওলানা হারুন বুখারী : ছাত্র জীবনের শেষ থেকেই বিভিন্ন বাতিল মতাধর্মী ফেরকার  বিপক্ষে বাহাসের সুযোগ হয়েছে এবং এখন পর্যন্ত সব সময় ফেরাকে বাতেলাগুলোর বিরুদ্ধে বক্তৃতা, লেখনি ও মুনাজারাসহ সব ধরনে সোচ্চার থাকার চেষ্টা করি। এছাড়াও কাদিয়ানী, আটরশি, ভাওয়াল ফকির, খ্রিস্টান মিশনারী প্রভৃতি ফেরকার বিপক্ষে বাহাস করার সুযোগ হয়েছে। 

আপনি একজন লেখকও, লেখালেখির অনুপ্রেরণা কিভাবে পেলেন?
মাওলানা হারুন বুখারী : প্রথমত মাওলানা  ‍মুহিউদ্দীন খানের অনুপ্রেরণায় লেখনীর জগতে উদ্বুদ্ধ হই। মাওলানা আবু তাহের মিসবাহ যিনি আমার এক বছরের সিনিয়র, তাঁর সঙ্গে পত্রিকার লেখালেখির বিষয়াদিতেও সম্পৃক্ত ছিলাম। আর এভাবে এ পথে চলে আসা। 

আপনার রচিত কয়েকটি মৌলিক বইয়ের নাম যদি বলতেন?
মাওলানা হারুন বুখারী : ঈমানী হাতিয়ার, মজলুম দাড়ির ফরিয়াদ, ঈমান আকিদার হেফাজত, তাবলীগ জামাতের বিরোধিতা কেন ও কার স্বার্থে?, মুসলিম নারী ও কুরবানীর উপহার সহ আরো অনেক বই রয়েছে। এবং এখন একটি বই লেখা চলমান, যাতে আত্মজীবনীমূলক লেখা রয়েছে বইটির নাম "নেক সোহবত"।

চলছে ভাষার মাস ফেব্রুয়ারি, মাতৃভাষা চর্চার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে কিছু বলুন?
মাওলানা হারুন বুখারী : ভাষা আল্লাহ প্রদত্ত অন্যতম নেয়ামত। ভাষার চর্চা করা ফরজে কেফায়া। আমরা যেহেতু বাঙালি, তাই বাংলা ভাষার মূল্যায়ন করা চাই। দ্বীন প্রচার-প্রসারের উদ্দেশ্যে ভাষা সাহিত্য আয়ত্ত্ব করে লেখনী ও বক্তৃতা প্রভৃতির মাধ্যমে জাতির খেদমত করা যায়। অবশ্য গুরুত্ব ও আবশ্যকীয়তার দৃষ্টিকোণ থেকে আরবি ভাষা সবার শীর্ষে।

বর্তমানে মাদরাসা শিক্ষার্থীদের ভাষা সাহিত্য চর্চা বাড়ছে, তাদের উদ্দেশে দিকনির্দেশনামূলক কিছু বলতেন?
 মাওলানা হারুন বুখারী : মাদরাসায় অধ্যায়নরত ছাত্রদের জন্য ভাষা সাহিত্য চর্চা করা অনেক বেশি প্রয়োজন। কোরআন ও হাদিস সাহিত্য অলংকারে ভরপুর। সেখান থেকে সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম জীবন বিধানগুলি উদ্ভাবন করে জাতির সামনে নিজ ভাষায় শুদ্ধরূপে উপস্থাপন করা। আর বর্তমানে কলম যুদ্ধের প্রয়োজন অনেক বেশি। তাই, এ পথে আলোকদিশারীদের প্রয়োজন অনেক।  

কেএল/


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ