বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪ ।। ১৯ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ২৩ শাওয়াল ১৪৪৫


করোনার ভ্যাকসিন গ্রহণে মাদরাসার শিক্ষার্থীরা কতটা সচেতন?

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

নুরুদ্দীন তাসলিম।।

২০১৯ সালের ডিসেম্বরের ৩১ তারিখ চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরে প্রথম যখন 'অজানা' একটি ভাইরাস সংক্রমণের খবর প্রকাশিত হয়, তখন মানুষ ঘুণাক্ষরেও চিন্তা করতে পারেনি যে সেই ভাইরাসটি পরের ৬ মাসে পুরো পৃথিবীকে ওলট পালট করে দেবে।

শুরুর দিকে যখন ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়ার খবর প্রকাশিত হওয়া শুরু করে তখন বিশ্বের অধিকাংশ দেশের কর্তৃপক্ষই সংক্রমণটিকে ততটা আমলে নেয়নি।

কিন্তু পরবর্তীতে যখন লাফিয়ে লাফিয়ে সংক্রমণ ও মৃত্যুর সংখ্যা দুটোই বাড়তে থাকে, তখন পৃথিবীর প্রায় প্রত্যেকটি দেশ বিভিন্ন রকম সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নিতে থাকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্যে।

এরই ধারাবাহিকতায় করোনার প্রতিষেধক হিসেবে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ভ্যাকসিন গ্রহণ কার্যক্রম শুরু হয়েছে।অ্যাস্ট্রাজেনেকার, সিনোফার্ম, ফাইজার-বায়োএনটেক মিলিয়ে দেশে এখন পর্যন্ত ১ কোটি ২৩ লাখ ৩৪ হাজার ৪৭৯ জন মানুষ করোনা (কোভিড-১৯) টিকার আওতায় এসেছে বলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক অধ্যাপক মিজানুর রহমান স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানা গেছে।

এর মধ্যে গতকাল বুধবার দুপুর পর্যন্ত  উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে যাওয়ার অপেক্ষায় থাকা শিক্ষার্থীদের মধ্যে  ২২ হাজার ২১৭ জন করোনাভাইরাসের টিকার জন্য নিবন্ধন করেছেন। তাঁদের মধ্যে করোনার টিকা নিয়েছেন প্রায় ১০ হাজার শিক্ষার্থী।

করোনার টিকা গ্রহণ বিষয়ে কি ভাবছেন মাদরাসার শিক্ষার্থীরা অথবা এ বিষয়ে কতটা সচেতন তারা? এ বিষয়ে জানতে আওয়ার ইসলামের পক্ষ থেকে কথা বলা হয় বেশ কয়েকজন মাদরাসা শিক্ষার্থীর সাথে। তাদের একজন মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান জুবায়ের । তিনি প্রতিবেদককে বলেছেন, ‘টিকা নেব না এক সময়  এমনটাই ভাবতাম; কিন্তু আস্তে আস্তে পরিস্থিতি এমন হচ্ছে যে ভ্যাকসিন না নিলে অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ হয়তোবা আটকে থাকতে পারে। যেমন দেশের বাইরে পড়াশোনা অথবা ট্যুরে যেতে চাইলে ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে কি-না এ বিষয়টি প্রাধান্য দেওয়া হবে। অনেকটা এনআইডি কার্ডের মতই অনিবার্য হয়ে পড়বে ভ্যাকসিন গ্রহণ করার ইস্যুটি। তাই ভ্যাকসিন গ্রহণ গুরুত্বপূর্ণ ও ইতিবাচক হিসেবেই দেখছেন এই শিক্ষার্থী।

আরো পড়ুন: মাদরাসা শিক্ষার্থীদের জন্য ভ্যাকসিন: কী ভাবছেন তরুণ আলেমরা

ভ্যাকসিন কতটা নিরাপদ? ভ্যাকসিনে ক্ষতিকারণ কিছু নেই এর নিশ্চয়তাই বা কতটুকু?- এমন বেশ কিছু প্রশ্নের ছড়াছড়ি বিভিন্ন মাধ্যমে- এ বিষয়ে আরেক কওমি শিক্ষার্থী রেদওয়ান মারুফ বলছেন, ‘ভ্যাকসিনে কতটা উপকারী অথবা ক্ষতিকারক উপকরণ আছে এটা আমাদের ভাবার বিষয় নয়; স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা এ বিষয়ে ভালো বুঝেন এবং তারাই এর ভালো মন্দ জানাবেন, যেহেতু তাদের পক্ষ থেকে ভ্যাকসিন নিতে উৎসাহিত করা হচ্ছে তাই ভ্যাকসিন নেওয়াটাই নিরাপদ বলে মনে করি’।

আব্দুস সুবহান নামে আরেক শিক্ষার্থীর সাথে কথা বলে জানা গেল একই রকম মতামত, তিনি বলছেন, দেশে ভ্যাকসিন গ্রহণের সময়সীমা শেষ হলে যারা ভ্যাকসিন নিবেন না পরবর্তীতে তারা বড় ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হতে পারেন, যেমন ন্যাশনাল আইডি কার্ড না থাকলে সমস্যায় পড়তে হয়, তাই প্রথম থেকেই সচেতন হওয়া উচিত।

তিনি বলছেন, আমরা দেখেছি এ বছর হজ, ওমরা করতে তাদেরই অনুমতি দেওয়া হয়েছে যারা ভ্যাকসিন গ্রহণ করেছেন, তাই সচেতনতার দাবি হিসেবে প্রথম থেকেই ভ্যাকসিন গ্রহণ কার্যক্রমে অংশ গ্রহণ করা উচিত ।

আরো পড়ুন: ভ্যাকসিন গ্রহণ রাসূল সা.-এর সুন্নতেরই অনুসরণ: মুফতি মিজানুর রহমান সাঈদ

এদিকে ঢাকা আলিয়ার শিক্ষার্থী মাসুম আমিন বলছেন, ‘মর্ডানা ফাইজারের যেসব টিকা রয়েছে, তা প্রায় ৯৫ শতাংশ কার্যকর বলে মতামত দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা এ ক্ষেত্রে সচেতন নাগরিক হিসেবে টিকা গ্রহণে এগিয়ে আসা উচিত বলে মনে করি’।

এই  শিক্ষার্থী বলছেন, ‘অগ্রিম ভ্যাকসিন গ্রহণে  শরীরে একধরনের অ্যান্টিবডি তৈরি হয় যা করোনা থেকে সুরক্ষায় কার্যকর।

আরো পড়ুন: করোনার টিকা গ্রহন মোবাহ, ওয়াজিব বা উত্তম কিছু নয়: মুফতি আবুল হাসান মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহ

ভ্যাকসি প্রতিষেধক হিসেবে আসলেই কতটা কার্যকর? এমন সব প্রশ্নের বিষয়ে তিনি বলছেন, ‘কোন প্রতিষেধকই ১০০ ভাগ কার্যকর নয়। সুস্থতা, অসুস্থতার একমাত্র আল্লাহ তায়ালার হাতে। তার ওপর ভরসা রেখেই  রোগ থেকে মুক্তির মাধ্যম গ্রহণ করা উচিত’।

এছাড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে দাঁড়াতে পারে ভ্যাকসিন। তাই ভ্যাকসিন গ্রহণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন এই শিক্ষার্থী।

এএ/কেএল


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ