রবিবার, ১৯ মে ২০২৪ ।। ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ ।। ১১ জিলকদ ১৪৪৫


সেই যুবক চেয়েছিলেন ফজরের সময় যেনো মরণ হয়!

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আওয়ার ইসলাম: তাসনিম আহসান। টগবগে এক যুবক। মরণব্যাধি বোন মেরু ক্যান্সারে আক্রান্ত ছিলেন তিনি। জানতেন মৃত্যু একদিন হবেই। তাই তিনি মৃত্যুকে স্মরণ করে ফেসবুকে লিখেন, ‘ফজরের আজান ভেসে আসছে মুয়াজ্জিনের মধুর কণ্ঠে। বাইরের আলো-আধাঁরিতে ঝিরিঝিরি বৃষ্টি। ঠিক এমনই এক মুহূর্তে যেন নিজের মৃত্যু হয়।’ আল্লাহর কাছে কামনা করা সে যুবকের মৃত্যু হয় ফজরের সময়ই। গত ৭ অক্টোবর নিজের ফেসবুকের ওয়ালে এমন আকুতি জানিয়ে ফেসবুকে একটি পোস্ট করেছিলেন তিনি। এরপর বৃহস্পতিবার ফজর নামাজের সময়ই না ফেরার দেশে পাড়ি জমান সেই যুবক (ইন্নাল্লিাহি ওয়িন্না ইলাইহি রাজিউন)।

তাসনিমের সেই পোস্ট তিন মাস পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। জানা গেছে, সদ্য প্রয়াত সেই যুবক মরণব্যাধী বোন মেরু ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘ সময় ধরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন।

তাসনিমের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন তার স্ত্রী তমা আলম। বৃহস্পতিবার তাসনিমের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকেই মৃত্যুর বিষয়টি জানিয়ে স্ট্যাটাস দেন তমা।

তিনি লেখেন, ‘আমার স্বামী Tasneem Ahsan আজ ফজরের ওয়াক্তে আল্লাহর মেহমান হয়ে চলে গেছেন। আপনাদের সবার কাছে তার মাগফিরাত কামনা করে দেয়ার আবেদন করছি।’

পাঠকের উদ্দেশে তাসনিমের সেই দীর্ঘ স্ট্যাটাসটির কিছু অংশ দেয়া গেল, ‘মাঝে মাঝেই ইদানীং আমি চিন্তা করি, আমার মৃত্যুর দিনটা কেমন হবে। যেদিন আমি একটা জলজ্যান্ত মানুষ থেকে "লাশে" পরিণত হব, কেমন হবে সেই দিনটা? আমার বাসার মাঝখানে ড্রয়িংরুমের মাঝখানে কিছুটা ফাঁকা জায়গা আছে। আমি খুব ভাল বুঝতে পারি, লাশটা খুব সম্ভবত সেখানেই রাখবেন সবাই। আচ্ছা, আমার নাকে তো একটা তুলাও গুঁজে দেওয়া হবে, তাই না? আমার দাদীর লাশে আমি দেখেছিলাম ওরা তুলা ঠেসে দিয়েছিল।

আমার মনে মনে খুব ইচ্ছা আমি যেন ফজরের ওয়াক্তে আল্লাহর কাছে যেতে পারি। আধো আলো, আধো ছায়া। প্রচণ্ড বৃষ্টি পড়ছে। না থাক। প্রচণ্ড বৃষ্টি দরকার নেই। মৃত্যুর আগ মুহূর্তে ঝিরিঝিরি বৃষ্টি হলেও চলবে। বিরামহীন হালকা আওয়াজে বৃষ্টির শব্দের সাথে মিলিয়ে ফজরের অসাধারণ আযান সেই অদ্ভুত সময়ে কানে ভেসে আসুক, আল্লাহর কাছে আবদার।

আচ্ছা, কতদিন বৃষ্টিতে ভিজি না জানেন? প্রায় ৩ বছর হতে চলল। সিঙ্গাপুরে যখন চিকিৎসার জন্য ছিলাম, তখন সেখানে ভীষণ বৃষ্টি পড়ত। কিন্তু সেই বৃষ্টিতে ভেজার সুযোগ ছিল না। কারণ, সে সময় চিকিৎসার প্রয়োজনে আমার হাতে একটা সেন্ট্রাল লাইন করা ছিল যেটা হার্ট পর্যন্ত কানেক্টেড। শরীরের ঐ অংশটা আমার ভেজানো নিষেধ ছিল।

আমি প্রায় টানা ১.৫ বছর গোসল করার সময়েও সে জায়গাটায় বিরামহীনভাবে পানি ঢালতে পারি নি। আমার আর সুস্থ হওয়াও হল না। এখন পর্যন্ত বৃষ্টিতেও ভেজা হল না। হঠাৎ করে মেঘ করলে ব্যস্ত ঢাকা শহর যেমন কালো হয়ে যায়, তখন আমার মৃত্যুর পরিবেশটা হলে বেশ হয়। বৃষ্টি আমি বড় ভালবাসি।’

এমডব্লিউ/


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ