বৃহস্পতিবার, ২৩ অক্টোবর ২০২৫ ।। ৬ কার্তিক ১৪৩২ ।। ১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৭

শিরোনাম :
এক লাফে ভরিতে ৮৩৮৬ টাকা কমল স্বর্ণের দাম জুলাই সনদ বাস্তবায়নে নভেম্বরে গণভোট চায় জামায়াতে ইসলামী ১৮তম জাতীয় তাফসিরুল কুরআন মাহফিল ২০ ও ২১ নভেম্বর ইসরায়েলের ওপর নিষেধাজ্ঞা চেয়ে বিশ্বের প্রভাবশালী ইহুদিদের চিঠি  গণভোট নিয়ে বিএনপির বিরুদ্ধে জটিলতা তৈরির অভিযোগ জামায়াতের ‘পাঁচ দফা বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত থাকবে’ জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নে বিশেষজ্ঞদের সাথে ঐকমত্য কমিশনের সভা শিশু-কিশোরদের সুরক্ষা দিতে ছয় দফা সুপারিশ চিকিৎসকদের  ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত, কারাগারে অভিযুক্ত বুয়েট শিক্ষার্থী  ওআইসি সদস্য দেশগুলোকে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান উপদেষ্টা রিজওয়ানার

একজন ডাক্তারের চোখে করোনাময় পৃথিবীর ভবিষ্যৎ

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

ডা. ইসামাইল আযহারি: করোনা ভাইরাস দিয়ে একবার আক্রান্ত হয়ে সুস্থ হয়ে গেলে ২য় বার আক্রান্ত হবার কোনো সম্ভাবনা নাই বললেই চলে।

এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে শনাক্তকরণ আর মৃত্যুর হার বিবেচনা করলে একটা অনুপাত বের হয়, প্রতি এক হাজারে ১৩ জন মৃত্যু বরণ করতেছে।
তাও সেই ১৩ জন পূর্ব থেকে কোনো না কোনো রোগে আক্রান্ত ছিলো। কেউ হয়তো হাইপারটেনসিভ ছিলো, কারো আবার অ্যাজমা ছিলো, আবার অনেকেরেই low immunity ছিলো , যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম, তাদের ক্ষেত্রেই মুলত মৃত্যু হচ্ছে মৃত্যুর হার খুব সহজ ভাবে বললে প্রতি ৩০০ জন আক্রান্ত হলে সেখানে মৃত্যু হচ্ছে ৪ জনের।

বয়স বেড়ে গেলে শরীরের ডিপেন্স মেকানিজম পূর্বের তুলনায় কমে যায়, ৪০ বছরের পর থেকে মানবদেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমতে থাকে, কিডনির ফাংশনাল ইউনিট তথা নেফ্রন সমূহ নষ্ট হতে থাকে, রক্তনালী সমূহ শক্ত ও পুরু হতে থাকে, এবং রক্তনালীতে প্ল্যাক জমতে থাকে রেসপাইরেটরি ব্রংকিওল সমূহ কলাপ্স হতে থাকে এবং এইভাবে সেল মিডিয়েটেড ইমিউনিটি কমতে থাকে।

যাদের ইমিউনিটি কম, তাদের জন্য যেই কোনো রেসপাইরেটরি ভাইরাল ইনফেকশন বিপদের কারণ হতে পারে, ২০০৯ সালে ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস এইবারের করোনা ভাইরাসের মতই ভয়াবহ চিত্র নিয়ে হাজির হয়েছিলো, ১২০ কোটি মানুষ আক্রান্ত হয়েছিলো, খোদ আমেরিকায় আক্রান্ত হয়েছিলো ৬ কোটি, মারা গিয়েছিলো ৫ লাখ ৭৫ হাজার (সূত্র উইকিপিডিয়া) আমেরিকায় সোয়াইন ফ্লু বা ইনফ্লুয়েঞ্জায় ৫ লাখ ৭৫ হাজার মৃত্যু হয়েছিলো মাত্র ৪ মাসে।

তবে ক্রমাগত মিউটেশন এর মাধ্যমে ইনফ্লুয়েঞ্জা এখন একটি দূর্বল ভাইরাসে পরিনত হয়েছে। ইনফ্লুয়েঞ্জার ক্ষেত্রেও সফল দীর্ঘমেয়াদি কোনো ভ্যাকসিন তৈরী করা সম্ভব হয়নি, স্বল্পমেয়াদী ভ্যাক্সিন তৈরী হয়েছিলো, তথাপী এখনো প্রতিবছর ইনফ্লুয়েঞ্জায় আমেরিকা ইউরোপে অনেক লোক মারা যায়, তবে আগের তুলনায় কম।

এবার আসি করোনা ভাইরাসের আলোচনায়, করোনা ভাইরাস যদিও সবার মাঝে এক প্রকার ভয়াবহ আতংক তৈরি করেছে, তবে বাস্তব কথা হচ্ছে এই ভাইরাস ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের প্রাথমিক অবস্থার মত।

ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস প্রথমে যেমন তান্ডব চালিয়েছিলো, শুধু আমেরিকায় ৪ মাসে ৫ লাখত ৭৫ হাজার মৃত্যু, ৬ কোটি আক্রান্ত বর্তমান করোনা ভাইরাস সেই চিত্রস্বরণ করিয়ে দিচ্ছে তবে জিনোম সিকুয়েন্স আর ভিরুলেন্ট ফ্যাক্টর বিবেচনায় করোনা ভাইরাস ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের চেয়ে কিছুটা জটিল গঠন বিশিষ্ট, যার কারণে কিছুটা শক্তিশালীও বটে, তবে এই ভাইরাস দিয়ে একবার আক্রান্ত হয়ে সুস্থ হয়ে গেলে ২য় বার আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা নাই, দক্ষিন আফ্রিকার বিজ্ঞানীরা এইটা নিশ্চিত করেছেন।

তাই কেউ একবার সুস্থ হলে পুনরায় আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা নাই, ল্যাব টেস্টে দ্বিতীয় বার আক্রান্ত হওয়ার যেইসব খবর প্রচারিত হচ্ছে, তা মুলত false positive result। একজন মানুষ আক্রান্ত হয়ে ভালো হবার জন্য তার শরিরে করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে এন্টিবডি তৈরী হতে হয়, এই এন্টিবডি তৈরী হয়ে ভাইরাস গুলিকে শরীরের ভিতর মেরে ফেলে। এবং আক্রান্ত ব্যক্তি সুস্থ হয়ে যায়, সুস্থ হবার কয়েক দিন পর আবার জ্বর হলে যদি তার স্যাম্পল নেওয়া হয়, আর সেই স্যাম্পল যদি RT-pcr Test এর জন্য দেওয়া হয়, তবে সেখানে পূর্বের মৃত ভাইরাস সমূহ আবার চিহ্নিত হয়, RT-PCR করোনা ভাইরাসের উপস্থিতি নিশ্চিত করে, তবে এইটা নিশ্চিত করেনা যে, ভাইরাস জিবিত নাকি মৃত। তাই সুস্থ হবার পর যাদের পুনরায় সিম্পটমস দেখা দেয়, তা মুলত করোনা দিয়ে হয়না, যদিও টেস্টে করোনা পজিটিভ দেখা যায় বুঝতে হবে, তা flase positive।

ভবিষ্যৎ পৃথিবী:

আক্রান্তের হার এখন যত বাড়বে, ডেথ রেট তত কমতে থাকবে, গত কয়েক দিন থেকে প্রতিদিন পৃথিবিতে এক লাখ এর অধিক আক্রান্ত হচ্ছে, তবে সেই তুলনায় মৃত্যুর হার কমতেছে। ইনফ্লুয়েঞ্জার মত করোনা ভাইরাসেও ক্রমাগত মিউটেশন হচ্ছে, এবং অতিসত্বর
তা একটি দুর্বল ভাইরাসে পরিণত হবে ইনশা-আল্লাহ।

এর মাঝে বয়স্ক লোকরা একটু রিস্কে থাকবে। বাকি আগষ্ট-সেপ্টেম্বর নাগাদ বাংলাদেশের প্রায় ৫০%+ লোক আক্রান্ত হবে, এবং ইনশা-আল্লাহ সেখানে প্রতি ১০০০ জনে ৯৯০+ সুস্থ হবে। এইভাবে ক্রমাগত সবাই একবার একবার আক্রান্ত হয়ে আবার সুস্থ হবেন।

বয়স্ক মানুষদের যেহেতু অনেক কো-মরবিডিটি থাকে, বিশেষ করে তাদের রক্তনালী গুলি শক্ত ও পুরু হয়ে থাকে, এবং প্ল্যাক জমা থাকে, তাই করোনায় আক্রান্ত হলে আতংকের কারণে তাদের কর্টিসল হরমোন লেভেল বেড়ে যায়, এবং আতংকে হার্ট এটাক, স্ট্রোক ইত্যাদি হয়েও মারা যায়, তাই আসুন,করোনায় আতংকিত না হই, স্বাভাবিক থাকি। আল্লাহর উপর ভরসা রাখি। স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলি। অতি দ্রুত করোনার বিপর্যয় পরিস্থিতি বিদায় নিবে ইনশা-আল্লাহ।

লেখক: ডা. ইসামাইল আযহারি, এম,বি,বি,এস (ঢাকা কমিউনিটি মেডিকেল কলেজ এন্ড হাঁসপাতাল) রিসার্চার এন্ডা ফাউন্ডার: ওসিডি ক্লিনিক, ঢাকা, বাংলাদেশ।


সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ