শনিবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ।। ৫ আশ্বিন ১৪৩২ ।। ২৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭

শিরোনাম :
দেশের ভবিষ্যৎ নিশ্চিতে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে: ধর্ম উপদেষ্টা তালেবান সরকারের নিষিদ্ধের তালিকায় মওদুদীর বই ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার ঘোষণা পর্তুগালের যাত্রাবাড়ীতে এসি বিস্ফোরণে একই পরিবারের দগ্ধ ৪ দালাল ধরে গিয়েছিলেন ইরাকে, ময়লার ভাগাড়ে তিন টুকরায় মিলল লাশ দক্ষ কর্মীদের ভিসা ফি ১,৫০০ ডলার থেকে বাড়িয়ে ১ লাখ ডলার করলেন ট্রাম্প নোয়াখালীতে অটোরিকশা উল্টে প্রাণ গেল নারীর ,আহত-৪ ইসলামী ছাত্র মজলিস সিলেট মহানগর, জেলা ও শাবিপ্রবি’র সহযোগী সদস্য সমাবেশ অনুষ্ঠিত দুর্নীতি মুক্তকরণ বাংলাদেশ ফোরামের সভাপতি নাসির উদ্দিন এডভোকেট এর ইন্তেকাল বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস কুলঞ্জ ইউনিয়ন শাখা কমিটি গঠন সম্পন্ন

হজযাত্রীদের উদ্দেশে জরুরি কিছু নসিহত

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মুহাম্মদ হযরত আলী
অতিথি লেখক

সমগ্র জাহানের মাঝে অন্যতম বরকতময় স্থান পবিত্র মক্কা মোকররমা। প্রায় প্রত্যেক নবীই মক্কা শরীফ জিয়ারত করেছেন এবং কাবা ঘরকে কেন্দ্র করে তাওয়াফ করেছেন।

কাবা ঘরের মর্যাদার ব্যাপারে আল্লাহ তা’আলা বলেন, ‘আল্লাহ তা’আলা কাবা ঘরকে মানুষের প্রতিষ্ঠিত থাকার উপায় বানিয়েছেন’। সুরা মায়েদা

এ বিষয়ে হুজ্জাতুল ইসলাম ইমাম গাজালি রহ. হযরত আলী রা. এর এরশাদ বর্ণনা করেছেন, আল্লাহ তা’য়ালা যখন দুনিয়াকে ধ্বংস করার ইচ্ছা করবেন তখন সর্বপ্রথম বায়তুল্লাহকে ধ্বংস করা হবে। তারপর দুনিয়াকে ধ্বংস করা হবে।

অর্থাৎ যতদিন কাবা শরীফ ঠিকে থাকবে তত দিন আল্লাহ পাক দুনিয়াকে ধ্বংস করবেন না।

আল্লাহ পাকের মেহেরবাণীতে যারা কাবা ঘরে গমন করেন তারা অতি সৌভাগ্যবান। কারণ এখানে বরকত ও হেদায়াত দুটোই পাওয়া যায়। পবিত্র কুরআন পাকে আল্লাহ পাক বলেন,
‘উহা বরকতময় ঘর ও সমগ্র জগতবাসীর জন্য হেদায়েত এর জিনিস’। আল-ইমরান

সুতরাং এ বিষয়ে কোন সন্দেহ নাই যে কাবা ঘর যেমন বরকতের জায়গা তেমনি মানবজাতির হেদায়েতেরও জায়গা। সম্মানিত হজযাত্রীগণ কাবা ঘরে গমন করার আগে অথবা পরে পবিত্র মদীনা মুনাওয়ারাও গমন করে থাকেন। উভয় স্থানই অত্যন্ত পবিত্র যে কারণে কাবা শরীফ ও মদীনা শরীফ উভয়েরই নির্দিষ্ট জায়গা পরিমাণ হেরেমের সীমানা রয়েছে।

আমাদের দেশের হজযাত্রীগণ লক্ষ্যাধিক টাকা ব্যয়ে (প্যাকেজ ভেদে আড়াই লক্ষ থেকে সাত লক্ষ টাকা পর্যন্ত) হজের সফরে খরচ করে থাকেন। হজ সফরের শারীরিক কষ্ট এবং আর্থিক ব্যয় এর সাথে সাথে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল দুই হেরেমের আদব রক্ষা করা এবং শরীয়ত বিরোধী কোন কাজে লিপ্ত না হওয়া।

ইদানিংকালে মক্কা শরীফে তাওয়াফ এবং মদীনা শরীফে রাসুল সা. এর রওজায় সালাম প্রদানের সময় মোবাইল ফোনে লাইভ ভিডিও বা সেলফি তোলার অত্যাধিক প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। ভিড়ের কারণে পুরুষ মহিলার ধাক্কাধাক্কিকেও স্বাভাবিক মনে করা হয়।

পবিত্র দুই হেরেম শরীফের ভিতরে এই ধরনের বেয়াদবি মূলক আচরণ নিতান্তই গর্হিত ও নিন্দনীয় কাজ। যেহেতু ফোকাহা কেরামের অভিমত হল বিনা প্রয়োজনে মোবাইলে ছবি তোলা হারাম/নাজায়েয।

কাবা ঘর অথবা রসূল সা. এর রওজার সামনে প্রকাশ্যে কবীরাহ গুনাহ করা অবশ্যই হেরেম শরীফদ্বয়ের বাইরে গুণাহের চেয়ে বেশি মারাত্মক। এই বদ আমলের কারণে মানুষের অন্তরে হজের প্রভাব পরিলক্ষিত হয় না।

হজ মকবুল হওয়ার ব্যাপারে হাদীস শরীফে এসেছে, যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্য এমনভাবে হজ করে যে, সেই হজে না থাকে কোনো অশ্লীল কথা আর না শরীয়ত বিরোধী কোন কাজ। তবে সে হজ থেকে এমন নিষ্পাপ হয়ে ফিরে আসে যেমন মাতৃগর্ভ হতে যেদিন দুনিয়াতে নিষ্পাপ অবস্থায় এসেছিল। সহিহ বুখারী

তাই পবিত্র হজ গমনকারী ব্যক্তিদের নিন্মোক্ত বিষয়গুলোর প্রতি সতর্ক থাকা নিতান্তই জরুরি।

১. পবিত্র কাবা ঘর তাওয়াফ করার সময় নারীদের সংস্পর্শ থেকে দূরে থাকা। প্রয়োজনে একটু দূর থেকে তাওয়াফ করা।

২. হজ পালনের স্থান সমূহ যেমন- মাতাফ, সাফা, মারওয়া, আরাফা, মীনা, মুজদালিফায় কোন প্রকার লাইভ ভিডিও/সেলফি না তোলা।

৩. হাজরে আসওয়াদে (কালো পাথর) চুমা দেওয়া একটি সুন্নত আমল। কিন্তু হজের মৌসুমে এতটাই ভিড় হয় যে, অনেক পুরুষ মহিলার সাথে ধাক্কাধাক্কি করে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সেখানে পৌঁছতে হয়।

তাই প্রয়োজন বোধে দূর থেকে ইশারায় চুমা দেওয়াই শ্রেয়। কারণ নফল ইবাদতের চেয়ে কবীরা গুণাহ থেকে বেঁচে থাকা অনেক উত্তম।

৪. বিশেষ করে হজের পাঁচদিন হজ কাফেলার কর্তৃপক্ষ বা কাফেলার বাকি সাথীদের সাথে কোনরূপ ঝগড়া বা তর্কে লিপ্ত না হওয়া।

৫. রাসুল সা. এর রওজার সামনে তিনটি দরজা রয়েছে। তন্মধ্যে মাঝখানের দরজার বাম কপাট বরাবর রাসুল সা. এর কবর এবং ডান কপাট বরাবর আবু বকর রা. ও ওমর রা. এর কবর।

তাই মাঝখানের দরজার সামনে ভিড়ের কারণে কাউকে কষ্ট দেওয়া অথবা সেলফি/ লাইভ ভিডিও করা থেকে বেঁচে থাকার চেষ্টা করা নিতান্তই প্রয়োজন।

উপরোক্ত আমলগুলোর ব্যাপারে হজ যাত্রীগণ নিজেরা আমল করার পাশাপাশি অত্যন্ত ভদ্রতার সাথে অন্যদেরও সতর্ক করা দরকার।

আল্লাহ পাক পবিত্র হজে গমনকারী প্রত্যেককে শরীয়তের পাবন্দির সাথে হজ কার্য সম্পাদন করার তওফিক নসিব করুন এবং তাদের হজকে ‘হজ্জে মাবরুর’ হিসেবে কবুল করুন। আমিন...

লেখক: সহকারী অধ্যাপক (ফার্মেসী বিভাগ)
আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রাম।

হজের সফর ও আখেরাতের সফর

-আরআর


সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ