সংবিধানের ৭০ নং অনুচ্ছেদ সংস্কারের বিষয়ে গতকাল মঙ্গলবার অধিকাংশ রাজনৈতিক দলই সমর্থন জানিয়েছে। প্রস্তাবটি অনুযায়ী, শুধু্মাত্র অর্থ বিল ও অনাস্থা প্রস্তাব ব্যতীত অন্যান্য সকল বিষয়ে জাতীয় সংসদের সদস্যরা স্বাধীনভাবে ভোট দিতে পারবেন। জাতীয় ঐকমত্য কমিশন অবশ্য সংবিধান সংশোধনেরও প্রস্তাব দেয়। তবে এই বিষয়ে এখনও দলগুলো পূর্ণ সমঝোতায় পৌঁছানো যায়নি। জানা গেছে, এ নিয়ে আরও আলোচনা চলবে। এদিকে, কিছু রাজনৈতিক দল আরও প্রস্তাব দিয়েছে যে জাতীয় নিরাপত্তা, রাষ্ট্রপতির অভিশংসন ও রাষ্ট্রপতির প্রতি সমর্থনের মতো বিষয়গুলোও বিবেচনায় নেওয়া উচিত। বর্তমান সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, কোনও দল থেকে মনোনীত সংসদ সদস্য যদি দল থেকে পদত্যাগ করেন বা দলের বিপক্ষে ভোট দেন, তবে তার আসন বাতিল হয়ে যায়।ত চার বিষয়ে দলগুলোর হ্যাঁ— মানবজমিন পত্রিকার এই প্রধান শিরোনাম অনুযায়ী, সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ, নিম্নকক্ষে নারী আসন, সংসদের স্থায়ী কমিটিসমূহ, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মেয়াদ ও কার্যপরিধি নিয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনে মতামত দিয়েছেন দলগুলো। কমিশনের সঙ্গে দ্বিতীয় দফার প্রথম বৈঠকে বিষয়ভিত্তিক আলোচনায় অধিকাংশ দল এসব ইস্যুতে কাছাকাছি মত দিয়েছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে মতভিন্নতা থাকলেও সেটিও সমাধানযোগ্য বলে মনে করছেন তারা। সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ সংশোধন করে অর্থবিল, আস্থাভোট ও সংবিধান সংশোধন সংক্রান্ত বিষয় ছাড়া সব বিষয়ে দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে নির্বাচিত সংসদ সদস্যরা ভোট দিতে পারবেন বলে একমত হয়েছে বিএনপি-জামায়াতসহ অনেক দল। এ ছাড়াও সংসদের স্থায়ী কমিটিতে বিরোধী দল থেকে কতোজন সভাপতি হবেন সে বিষয়েও দীর্ঘ আলোচনা হয় বৈঠকে। এক্ষেত্রে বেশির ভাগ দল ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ কমিটিতে বিরোধী দল থেকে সভাপতি করার ওপর মত দিয়েছে। পাঁচ বছরে বিদ্যুতে ভর্তুকি বেড়েছে ৫৯৩%, জ্বালানিতে ৩১১ শতাংশ— বণিক বার্তা পত্রিকার প্রধান শিরোনাম। এতে বলা হয়েছে, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে সক্ষমতা বাড়াতে এখানে বিপুল অর্থ বিনিয়োগ করা হয়েছে। এ দুই খাতে ব্যাপকভাবে অবকাঠামো উন্নয়ন হলেও ভর্তুকি কমানো যায়নি। বিগত পাঁচ অর্থবছরে বিদ্যুৎ ও গ্যাস খাতে সরকার ভর্তুকি দিয়েছে দুই লাখ ছয় হাজার ৯৬২ কোটি টাকা। এর মধ্যে বিদ্যুতে ভর্তুকি দেয়া হয়েছে প্রায় এক লাখ ৩৯ হাজার কোটি টাকা এবং ৬৮ হাজার কোটি টাকা দেয়া হয়েছে গ্যাস ও জ্বালানির অন্যান্য খাতে। ২০২০-২১ থেকে ২০২৪-২৫ অর্থবছর সময়কালে এ পরিমাণ অর্থ ভর্তুকি দিয়েছে সরকার। অর্থবছর ধরে ভর্তুকির পরিমাণ বিবেচনায় নিলে দেখা যায় এ পাঁচ বছরের ব্যবধানে বিদ্যুতে ভর্তুকি বেড়েছে ৫৯৩ শতাংশ এবং জ্বালানি খাতে ৩১০ শতাংশ। জ্বালানি খাতসংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের ভুল মহাপরিকল্পনায় একপেশেভাবে এ দুই খাতের অবকাঠামো উন্নয়ন করেছে বিগত আওয়ামী লীগ সরকার। এ সময় প্রাধান্য দেয়া হয়েছে বিদ্যুৎ খাতের অবকাঠামো উন্নয়নে। অবহেলিত ছিল জ্বালানি সরবরাহ ব্যবস্থাপনা। বাজেটে তবু বৈষম্যের ছাপ— দৈনিক আজকের পত্রিকার প্রথম পাতার একটি খবর। এতে বলা হয়েছে, প্রস্তাবিত ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট পর্যালোচনা করে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি ) জানিয়েছে, সরকারের দেওয়া বাজেটে বৈষম্যের ছাপ রয়ে গেছে। গত সোমবার বাজেট উপস্থাপনের পরদিন গতকাল মঙ্গলবার ঢাকার গুলশানের একটি হোটেলে 'জাতীয় বাজেট ২০২৫-২৬: সিপিডির পর্যালোচনা' শীর্ষক এক আয়োজনে বাজেট নিয়ে নিজেদের পর্যালোচনা তুলে ধরে সিপিডি। সিপিডি'র নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেছেন , "সিপিডি সব সময় বলে এসেছে , অপ্রদর্শিত অর্থ, অর্থাৎ কালোটাকা বৈধ করার সুযোগ পুরোপুরি বন্ধ করা উচিত। এটি নৈতিকভাবে অগ্রহণযোগ্য এবং সৎ করদাতাদের নিরুৎসাহিত করার শামিল।" "এ প্রস্তাবটি বাজেট থেকে প্রত্যাহারে দাবি জানাচ্ছি। এ প্রস্তাব বৈষম্যমূলক ব্যবস্থা সৃষ্টি করে , যা বৈষম্যহীন সমাজ গঠনে বাজেট ঘোষণার মূল অঙ্গীকারের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।" ড. ইউনূসের অধীনেই ডিসেম্বরে নির্বাচন চায় বিএনপি— দেশ রূপান্তর পত্রিকার প্রথম পাতার একটি শিরোনাম। এতে বলা হয়েছে, চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে দ্রুত ও সুস্পষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান আবারও জানিয়েছে বিএনপি। দলটির দাবি, নির্বাচন প্রশ্নে একটি পরিষ্কার ও গ্রহণযোগ্য পথনকশা না থাকায় দেশে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা তৈরি হচ্ছে, যা দ্রুত নিরসন প্রয়োজন। এ থেকে উত্তরণে আগামী সংসদ নির্বাচন ডিসেম্বরের পরে যাওয়ার কোনো কারণ দেখছে না দলটি। বিএনপি এ সরকারের অধীনেই নির্বাচনে যেতে প্রস্তুত, তবে নির্বাচন আয়োজনের রোডম্যাপ স্পষ্ট না হওয়া পর্যন্ত সরকারকে রাজনৈতিক চাপের মধ্যে রাখতে চায় তারা। বিএনপির নেতাদের অভিমত, রাষ্ট্রের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কার প্রশ্নে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য গড়ে তুলতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় পর্বের আলোচনা হলেও মূল গুরুত্ব পেয়েছে আসন্ন জাতীয় নির্বাচন এবং তার রোডম্যাপ। বিএনপি ছাড়াও অংশগ্রহণকারী অধিকাংশ দলই ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের পক্ষে মত দিয়েছে। গত সোমবার গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এসব বিষয়ে আলোচনা হয়। রাত পৌনে ৯টা থেকে সাড়ে ১০টা পর্যন্ত চলা বৈঠকে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি সভাপতিত্ব করেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। মঙ্গলবার রাতে এ-সংক্রান্ত অধ্যাদেশ জারি করা হয়। রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে আইন মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিভাগ থেকে প্রকাশ করা অধ্যাদেশে এসব নেতার পরিচয় 'মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী' হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছে। এদিন রাত ১১টার দিকে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা) অধ্যাদেশ গেজেট আকারে প্রকাশ করা হয়। 'জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল আইন ২০২২'-এ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ প্রবাসী সরকারের এমএনএ, এমপিএ এবং উল্লিখিত চার শ্রেণির সবাই বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃত ছিলেন। নতুন অধ্যাদেশে তাদের মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী করা হয়েছে। এর ফলে তাদের মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতি বাতিল হয়ে গেল। একই বিষয়টি আজ দ্য ডেইলি স্টার পত্রিকার প্রথম পাতার অন্যতম প্রধান খবর। এই পত্রিকার শিরোনাম হলো— Govt revises definition of freedom fighter বা মুক্তিযোদ্ধা সংজ্ঞা পুনঃনির্ধারণ করেছে সরকার। এখানে বলা হয়েছে, গতকাল রাতে একটি অধ্যাদেশ জারি করে "বীর মুক্তিযোদ্ধা" টার্মের সংজ্ঞা পুনঃনির্ধারণ করেছে সরকার এবং তিনটি নতুন শ্রেণি যুক্ত করেছে। নতুন সংযোজিত শ্রেণিগুলো হলো: মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী, মুক্তিযোদ্ধা পরিবার এবং মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী পরিবার। এই নতুন সংজ্ঞা অনুসরণ করে ২০২২ সালের 'জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল' (জামুকা) আইন সংশোধন করে অধ্যাদেশ জারি করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। এখানে, মুক্তিযুদ্ধের সহযোদ্ধা হিসেবে তারা স্বীকৃতি পেয়েছেন, যারা বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকারের (মুজিবনগর সরকার) সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিলেন। এর মধ্যে রয়েছেন তৎকালীন জাতীয় পরিষদ ও প্রাদেশিক পরিষদের সদস্যরা, যারা পরে গণপরিষদের সদস্য হিসেবে বিবেচিত হন। নতুন অধ্যাদেশে মুজিবনগর সরকারকে 'বীর মুক্তিযোদ্ধা'-এর সংজ্ঞায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। বাজেট কিছুটা গতানুগতিকই হয়েছে— দৈনিক প্রথম আলো'র প্রধান শিরোনাম এটি। ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট-উত্তর সংবাদ সম্মেলনে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ যা বলেছেন, তার ভিত্তিতে এই প্রতিবেদন প্রস্তুত করা হয়েছে। তিনি বাজেট উপস্থাপনের পরের দিন গতকাল মঙ্গলবার অর্থ মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে ওই অনুষ্ঠানে শিরোনামের ওই কথাটি বলেন। তার মতে, আগের সরকারের রেখে যাওয়া পরিস্থিতির মাঝেজ চট করে বিপ্লবী বাজেট দেওয়া সম্ভব নয়। আগামী অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত এই বাজেট কিছুটা গতানুগতিকই হয়েছে বলে স্বীকার করে তিনি বলেছেন, "প্রাথমিকভাবে মনে করি বাজেট জনবান্ধব এবং ব্যবসাবান্ধব। অনেকে বলেছেন আমরা আগের পদাঙ্ক অনুসরণ করেছি। আসলে চট করে বিপ্লবী একটা বাজেট দিয়ে দেব, দারুণ একটা রাজস্ব আয় করে ফেলব, তা সম্ভব নয়।" কথার ফুলঝুরি ছড়িয়ে বাজেট করেননি জানিয়ে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, উচ্চ মূল্যস্ফীতি; ব্যাংক ও জ্বালানি খাতের সমস্যা এবং রাজস্ব আদায়ের খারাপ পরিস্থিতি—এসব কিছুর মধ্যেই তাকে বাজেট করতে হয়েছে। সম্পদ সীমিত, চাহিদা অনেক বেশি। বাইরে থেকে সম্পদ আনা, বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ, পুঁজিবাজারের অবস্থা, ব্যাংকের অবস্থা, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি—সব মিলিয়ে একটা বিশৃঙ্খল অবস্থা ছিল। এর ভেতরেই কাজ করতে হচ্ছে। কালের কণ্ঠ, নয়া দিগন্ত, ইত্তেফাক, আজকের পত্রিকা, যুগান্তরসহ বেশিরভাগ পত্রিকারই প্রধান খবর হিসেবে আজ অর্থ উপদেষ্টার গতকালের ওই বক্তব্য প্রাধান্য পেয়েছে। তবে একাধিক পত্রিকায় 'কালো টাকা সাদা করা' বা 'পাচারের টাকা ফেরত আনা' প্রসঙ্গও আলোচিত হয়েছে। পাচারের টাকা ফেরত আনা সহজ নয়— এটি নয়া দিগন্ত পত্রিকার প্রধান শিরোনাম। গতকালের বাজেট-উত্তর সংবাদ সম্মেলনে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ এও বলেছেন, "যারা বিদেশে অর্থ পাচার করে তারা অত্যন্ত চালাক। এমন নয় যে, তারা হুট করে সব টাকা এক সাথে পাচার করেন। সুতরাং, পাচার হওয়া টাকা ফেরত আনা দুরূহ ও সময়সাপেক্ষ ব্যাপার।" "নাইজেরিয়ার পাচার হওয়া টাকা ফিরিয়ে আনতে ২০ বছর লেগেছে। তবে আমরা চেষ্টা করছি দুই এক বছরের মধ্যে পাচার হওয়া কিছু টাকা ফিরিয়ে আনতে। এই টাকা ফিরিয়ে আনলে আমাদের আর বিদেশী সংস্থার কাছ থেকে বাজেটে সহায়তার প্রয়োজন হবে না।" বাজেটে কালো টাকা বিনিয়োগ করা প্রসঙ্গে অর্থ উপদেষ্টা, এটি বাদ দিব কি না তা আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। কালো টাকা বিষয়ে তার ভাষ্য, "অনেকেই বলেছেন কালো টাকা সাদা করে দেয়া ঢালাওভাবে। কালো টাকা কিন্তু ঠিক কালো টাকা না, আমরা বলছি অপ্রদর্শিত আয়। অপ্রদর্শিত আয় যদি থাকে তবে শুধু ফ্ল্যাটের ব্যাপারে একটা বিধান দেয়া হয়েছে।" "কালো টাকা সাদা করার দু'টি দিক আছে, একটা হলো নৈতিক দিক আরেকটা হলো প্রাকটিক্যাল দিক, আমরা ট্যাক্স পাবো কি না। কালো টাকাটা সাদা করার যে দু'টি সুযোগ দেয়া হয়েছে, সেটা আমরা বিবেচনা করে দেখব। আমরা বলছি না যে, কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দিয়ে খুব ভালো কিছু করে ফেলেছি," যোগ করেন সালেহউদ্দিন আহমেদ।
