বিশেষ প্রতিনিধি
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা না হলেও মোটামুটি একটা অনুমান করা যাচ্ছে। আগামী বছরের জানুয়ারি থেকে নিয়ে জুনের মধ্যেই হবে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। আগামী ফেব্রুয়ারি মাসের শুরুর দিকে নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি চলছে বলে গুঞ্জন রয়েছে। এই অবস্থায় নড়েচড়ে বসেছে রাজনৈতিক দলগুলো। বিশেষ করে ফ্যাসিবাদবিরোধী দলগুলো ভোটের জন্য উদগ্রীব হয়ে আছে। ব্যতিক্রম নয় ইসলামি দলগুলোও। তারাও ভোটকে সামনে রেখে শুরু করেছে মাঠ গোছানো। কোনো কোনো দল ইতোমধ্যে তাদের সম্ভাব্য প্রার্থীর নামও ঘোষণা করেছে।
আগামী নির্বাচন কোন আঙ্গিকে হবে সেটা এখনো অনুমান করা যাচ্ছে না। কোন দল কার সঙ্গে যাবে, শেষ পর্যন্ত কার সঙ্গে কার জোট হবে সেটা এখনই বলা যাচ্ছে না। ফলে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে দলগুলোর মধ্যে একটা দ্বিধা-দ্বন্দ্ব কাজ করছে। তবে ভেতরে ভেতরে সব দলই প্রস্তুতি সারছে।
বিশেষ করে গত ৫ আগস্টের পর থেকে তৎপরতা বেড়েছে ইসলামি দলগুলোর। গত প্রায় ১৫ বছরে ধরে কোণঠাসা হয়ে থাকা দলগুলো মাঠ পর্যায়ে উজ্জীবিত উঠেছে।
সবচেয়ে বড় ইসলামি দল জামায়াতে ইসলামি তাদের নিবন্ধন ও দলীয় প্রতীক ফিরে পাওয়ার আগেই শুরু করেছে নির্বাচনী প্রস্তুতি। দেশের বেশির ভাগ আসনে ইতোমধ্যে প্রার্থী ঘোষণা করেছে জামায়াত। দলটি ইসলামি দলগুলোকে সঙ্গে নিয়ে একটি বৃহৎ জোট করার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। যদিও বিএনপির সঙ্গে সৃষ্টি হওয়া দূরত্বও অনেকটা কমিয়ে এনেছে জামায়াতে ইসলামী। শেষ পর্যন্ত দলটি বিএনপির বিপরীতে নির্বাচন করবে নাকি দীর্ঘদিনের মিত্র বিএনপির সঙ্গে বোঝাপড়ার মাধ্যমে ভোটে লড়বে সেটা এখনই বলা যাচ্ছে না। তবে আগামী নির্বাচনে যে জামায়াতের একটা বড় সম্ভাবনা রয়েছে সেটা কেউ অস্বীকার করছে না। যদিও এককভাবে নির্বাচন করলে জামায়াত কতটা সুবিধা করতে পারবে সেটা নিয়ে রয়েছে প্রশ্ন।
জামায়াতের পর ইসলামি দলগুলোর মধ্যে মাঠের শক্তির বিচারে এগিয়ে চরমোনাই পীরের নেতৃত্বাধীন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। সংসদ নির্বাচনে দলটির উল্লেখযোগ্য অর্জন না থাকলেও গত কয়েক বছর ধরে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলটি ভালো ফলাফল করেছে। এতে ধারণা করা হয়, মাঠের শক্তিতে ইসলামী আন্দোলন অনেকটা এগিয়ে গেছে। দলটিও চাচ্ছে, মাঠের সেই শক্তি পুরোদমে প্রদর্শন করতে আগামী নির্বাচনে। যদিও শেষ পর্যন্ত এককভাবে নাকি ইসলামি দলগুলোর সঙ্গে জোটবদ্ধভাবে নির্বাচন করবে সেই সিদ্ধান্ত এখনো হয়নি। ইসলামি দলগুলোর বৃহৎ যে জোট গঠনের আলোচনা চলছে এর সঙ্গে ইসলামী আন্দোলনও রয়েছে। তবে দলটি একদিকে জোটের আলোচনা অব্যাহত রেখেছে অন্যদিকে চলছে নিজ দলের প্রার্থী বাছাই ও ঘোষণা। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি আসনে প্রার্থীদের পরিচিত করিয়ে দিয়েছে দলটি।
মাওলানা মামুনুল হকের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসও এবার জোরেশোরে নেমেছে ভোটের মাঠে। দলটি ইতোমধ্যে বেশ কিছু আসনে প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করেছে। কয়েকজন প্রার্থীকে হেভিওয়েট হিসেবেও উল্লেখ করেছে। মাওলানা মামুনুল হক আমির হওয়ার পর দলটিতে বেশ গতি ফিরেছে। তাঁর ব্যক্তি ইমেজের কারণে দলের পরিচিতি বেড়েছে। দেশের বিভিন্ন এলাকায় সাংগঠনিক তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে। ইসলামি দলগুলোর বৃহৎ জোটের আলোচনায় বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসও আছে। তবে দলটির একটি যোগাযোগ বিএনপির সঙ্গেও রয়েছে।
সংসদীয় আসনের ক্ষেত্রে প্রাচীন দল জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের অবস্থান অনেকের চেয়ে ভালো। দলটি থেকে আগেও একাধিক সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। এবারও দলটি বৃহত্তর সিলেটসহ বেশ কিছু আসনে প্রার্থী বাছাইয়ের কাজ করছে। সম্প্রতি দলটির নতুন আমির নির্বাচিত হয়েছেন মাওলানা উবায়দুল্লাহ ফারুক। তিনি নিজেও সিলেটের একটি আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এছাড়া দলের কেন্দ্রীয় বেশ কয়েকজন নেতা নিজ নিজ এলাকায় ব্যাপক তৎপরতা চালাচ্ছেন। শেষ পর্যন্ত জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বৃহৎ ইসলামি জোটের সঙ্গে জোটবদ্ধ হয় নাকি পুরনো মিত্র বিএনপির ঘাটে ভিড়ে সেটা দেখতে আরও অপেক্ষা করতে হবে।
আরেক ইসলামি দল খেলাফত মজলিসও মাঠে তৎপরতা অব্যাহত রেখেছে। দলটির আমির-মহাসচিবসহ কেন্দ্রীয় বেশ কয়েকজন নেতা নির্বাচনকে সামনে রেখে আসনভিত্তিক কাজ করে যাচ্ছেন। বৃহৎ ইসলামি জোট গঠনের প্রক্রিয়ায় খেলাফত মজলিসের তৎপরতা চোখে পড়ার মতো। তবে পুরনো মিত্র বিএনপির সঙ্গেও তাদের একটা যোগাযোগ আছে। শেষ পর্যন্ত ইসলামি দলগুলোর বৃহৎ ঐক্য না হলে বিএনপির কাছ থেকে কয়েকটি আসনে ছাড় পেতে পারে খেলাফত মজলিস। এর বাইরেও দেশের কিছু এলাকায় দলটির সম্ভাব্য প্রার্থীরা নির্বাচনকেন্দ্রিক যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছেন।
মুফতি ফজলুল হক আমিনীর ইসলামী ঐক্যজোট নেতৃত্ব পরিবর্তনের পর মূলধারার রাজনীতিতে ফিরতে শুরু করেছে। বৃহৎ ইসলামি জোটের আলোচনায় দলটিও রয়েছে। এর বাইরে নির্দিষ্ট কিছু আসন টার্গেট করে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে ইসলামী ঐক্যজোট।
এর বাইরে খেলাফত আন্দোলনের দুই ভাগ, নেজামে ইসলাম পার্টির কয়েকটি অংশ বিচ্ছিন্নভাবে ভোটকেন্দ্রিক তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। যদিও মাঠ পর্যায়ের রাজনীতিতে তাদের শক্তি খুবই সীমিত। এজন্য ভোটের মাঠের দর কষাকষিতে তাদের উল্লেখ করার মতো কোনো অবস্থান নেই।
এসএকে/