একসময় বাজেটের সবচেয়ে বড় ব্যয়ের খাত ছিল শিক্ষা। কিন্তু ধীরে ধীরে সরকারের প্রাধিকার স্থানান্তরিত হতে থাকে। আওয়ামী লীগ সরকারের সময় ধীরে ধীরে ভৌত অবকাঠামো খাতে বরাদ্দ বাড়তে থাকে। আর এসব অবকাঠামো বাস্তবায়নে দেশি-বিদেশি নানা উৎস থেকে অনেক বড় অঙ্কের ঋণ নেওয়া হয়। এসব ঋণের মধ্যে অনেকগুলো অপ্রয়োজনীয় ঋণও ছিল। সময়ের পরিক্রমায় সেসব ঋণ পরিশোধের সময় হয়েছে। ফলে বর্তমানে বাজেটের খাতভিত্তিক ব্যয়ে সবচেয়ে বড় ব্যয়ের খাত হিসেবে স্থান দখল করে নিয়েছে ঋণের সুদ পরিশোধ। প্রস্তাবিত বাজেট ঘাটতি ও অর্থায়নের বিষয়ে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, "আগামী অর্থবছরে আমাদের সামগ্রিক বাজেট ঘাটতি ও ঋণ সহনীয় পর্যায়ে থাকবে। ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়াবে দুই লাখ ২৬ হাজার কোটি টাকা, যা জিডিপির তিন দশমিক ছয় শতাংশ।" চিকিৎসা না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন হাজারো রোগী— সমকাল পত্রিকার দ্বিতীয় প্রধান শিরোনাম। এতে বলা হয়েছে, গতকাল সোমবার ষষ্ঠ দিনের মতো বন্ধ ছিল ঢাকার জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সেবা কার্যক্রম। সকাল থেকেই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা হাজারো রোগী ফিরে গেছেন চিকিৎসা না পেয়ে। চলমান অচলাবস্থার মধ্যে গতকাল পরিদর্শনে গেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের গঠিত তদন্ত কমিটি। তারা চিকিৎসক, নার্স, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও জুলাই যোদ্ধাদের সঙ্গে কথা বলছেন। তবে গত ২৯শে মে গঠিত কমিটিকে তিন দিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশনা থাকলেও প্রতিবেদন প্রস্তুত করতে পারেনি। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবু জাফর বলেন, চক্ষু হাসপাতাল চিকিৎসা সেবা চালুর করতে সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে আলোচনা হয়েছে। তবে এখনও কোনো সমাধান আসেনি। আশা করছি দুই একদিনের মধ্যে সেবা স্বাভাবিক হবে। বণিক বার্তা পত্রিকার প্রধান শিরোনাম— বেহাল অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে ঋণের বোঝা আরো বাড়বে। এতে বলা হয়েছে, 'ঋণ করে ঋণ শোধ' করার যে নীতি বিগত সরকারের মেয়াদে গড়ে উঠেছিলো, অন্তর্বর্তী সরকারের বাজেটেও তা অব্যাহত রাখা হয়েছে। এ মুহূর্তে সরকারের ঘাড়ে চাপা ঋণের পরিমাণ প্রায় ২০ লাখ কোটি টাকা। আগামী অর্থবছরের মধ্যেই সে বোঝা বেড়ে ২৩ লাখ ৪২ হাজার কোটি টাকায় উন্নীত হবে বলে প্রাক্কলন করেছে সরকার। আর ২০২৬-২৭ অর্থবছরে এ ঋণ আরও বেড়ে ২৬ লাখ ৩ হাজার কোটি টাকায় ঠেকতে পারে। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে প্রকাশিত 'মধ্যমেয়াদি সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতি বিবৃতি'তে সরকারের ঋণ বৃদ্ধির এ চিত্র তুলে ধরা হয়। ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গত দেড় দশকের শাসনামলে ঘোষিত বাজেট ছিল অনেকটাই ঋণনির্ভর। প্রতি বছরই ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে বাড়ানো হয়েছে বাজেটের আকার। তবে আয়ের উৎস সম্প্রসারণ করে নয়, বরং ঋণনির্ভর ঘাটতি বাজেটের মাধ্যমেই এর আকার বড় করা হয়েছিলো। কিন্তু গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে আসা অন্তর্বর্তী সরকার গতকাল যে বাজেট ঘোষণা করেছে, তাতেও ঋণনির্ভরতা কাটানোর দৃশ্যমান কোনও চেষ্টা দেখা যায়নি। বাজেট 'স্মল', কিন্তু 'বিউটিফুল' নয়— দৈনিক প্রথম আলো'র প্রধান শিরোনাম। এতে বলা হয়েছে, অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ গতকাল সোমবার ২০২৫-২৬ অর্থবছরের যে বাজেট পেশ করেছেন, সেটি কোনও বড় ব্যয়ের বাজেট নয়। আবার, এই বাজেটে কোনোপ্রকার বড় প্রকল্পের কথাও উল্লেখ নেই। কিন্তু এই বাজেট মানুষকে কতটা স্বস্তি দেবে, কিংবা মানুষ যে দিনদিন আরও দারিদ্র্য হচ্ছে, কাজ হারাচ্ছে, আয় কমছে— তা থেকে উত্তরণ ঘটানোর মতো পরিকল্পনা উপদেষ্টা দেননি। ফলে নতুন বাজেট সব অর্থেই 'স্মল', তবে 'বিউটিফুল' কি না, সেই প্রশ্ন করাই যায় উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নতুন বাজেট বক্তৃতা ছোট, বাজেটের আকার কম, প্রতিশ্রুতি স্বল্প, আকাঙ্ক্ষা সীমিত। আবার অর্থ উপদেষ্টা সম্ভবত ধরেই নিয়েছেন, বিদ্যমান পরিস্থিতিতে তার তেমন কিছু করার নেই, বেসরকারি বিনিয়োগের বাধা দূর করার মতো শক্তি আয়ত্তে নেই, কর্মসংস্থানের সংকট কাটবে না, যাবে না রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা। এ কারণে নতুন যে বাজেট তিনি দিয়েছেন, তা দিয়ে হয়তো আপাতত টিকে থাকা যাবে, সামনে খুব বেশি আগানো যাবে না। যদিও অর্থ উপদেষ্টা বাজেট বক্তৃতার শুরুতেই নতুন বাজেটকে কিছুটা ব্যতিক্রমধর্মী বলে উল্লেখ করেছেন। কেননা দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো বিগত বাজেটের চেয়ে ছোট আকারের বাজেট প্রস্তাব করা হয়েছে এতে। প্রবৃদ্ধিকেন্দ্রিক ধারণার পরিবর্তে এতে সামগ্রিক উন্নয়নের ধারণায় জোর দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ, প্রথাগত ভৌত অবকাঠামো তৈরি নয়, মানুষ প্রাধান্য পেয়েছে বাজেটে। নয়া দিগন্ত পত্রিকার প্রধান শিরোনাম— টাকা পাচারকারীদের জন্য দুঃসংবাদ। এতে বলা হয়েছে, প্রস্তাবিত বাজেটে টাকা পাচারকারিদের জন্য রয়েছে দুঃসংবাদ। কারণ বাজেট প্রস্তাবনায় অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, জন্মসূত্রে বাংলাদেশী ছিলেন অথচ পরবর্তীতে বাংলাদেশী নাগরিকত্ব পরিত্যাগ করেছেন, এমন ব্যক্তি কর্তৃক বাংলাদেশে অর্জিত আয়ের ওপর যথাযথভাবে কর পরিশোধ না করে নানা উপায়ে বিদেশে পাচারকৃত অর্থ সম্পদের ওপর কর ও জরিমানা আরোপের বিধান করা হয়েছে। উল্লেখ্য, ব্যাংকিং খাতে আধিপত্য প্রতিষ্ঠার পর সপরিবারে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব ত্যাগ করেছিলেন বহুল আলোচিত এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল আলম। ২০২২ সালের ১০ই অক্টোবর বাংলাদেশি পাসপোর্ট প্রত্যাহার করেন এস আলম, তার স্ত্রী ফারজানা পারভীন এবং তাদের তিন ছেলে। একই দিন বিদেশী নাগরিক হিসেবে বাংলাদেশে স্থায়ী বসবাসের (পারমানেন্ট রেসিডেন্সিয়াল) অনুমোদন পায় পরিবারটি। এ দিকে সামিট গ্রুপের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ আজিজ খান দীর্ঘ দিন ধরেই স্থায়ী নিবাসী (পারমানেন্ট রেসিডেন্ট) হিসেবে সিঙ্গাপুরে বসবাস করে আসছেন। তবে তার নাগরিকত্ব ছিল বাংলাদেশের। সম্প্রতি তিনি সিঙ্গাপুরের নাগরিকত্ব গ্রহণ করেছেন। দেশটির আইনে দ্বৈত নাগরিকত্বের সুযোগ নেই বলে তাকে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব ত্যাগ করতে হয়েছে। কঠিন হবে ব্যবসা-বিনিয়োগ— কালের কণ্ঠের প্রধান শিরোনাম। এতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে চলমান রাজনৈতিক বাস্তবতায় আস্থাহীনতার কারণে বিনিয়োগ তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। উচ্চ সুদের কারণে কাঙ্ক্ষিত ঋণ পাচ্ছেন না উদ্যোক্তারা। ডলারের উচ্চ দরে আমদানিতে বাড়তি খরচ। এর মধ্যে করের বোঝা চাপানোর কারণে বেসরকারি খাতের জন্য স্বস্তির বার্তা নেই প্রস্তাবিত বাজেটে। উল্টো আমদানি পণ্যের বাজার বানানো আর স্থানীয় শিল্পের সুরক্ষার বদলে বহু পণ্যের শুল্ককর কমিয়ে অসম প্রতিযোগিতা তৈরির ব্যবস্থা করা হয়েছে। এতে ডলার সংকট আরো জটিল হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে। কারখানা বন্ধ হচ্ছে একে একে। কিন্তু এসব কারখানা চালু ও কর্মসংস্থান বাড়ানোর কর্মপরিকল্পনা নেই। ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তারা বলেছেন, প্রস্তাবিত বাজেটে প্রকৃত স্থানীয় শিল্পের উন্নয়নে নীতি সহায়তা দেওয়ার উল্লেখযোগ্য কোনও দিকনির্দেশনা নেই। অন্যদিকে সরকারের পরিচালনা ব্যয় বাড়ানো হয়েছে। পুঁজিবাজারে আস্থা ফেরাতে নেই কোনও কাঙ্ক্ষিত নীতি সহায়তা ও প্রণোদনা। এই খাতের বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, সাধারণ মানুষ এমন বাজেট চায়, যা ব্যবসা-বাণিজ্যে এবং বিনিয়োগ বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। কারণ দেশে বিনিয়োগ প্রবৃদ্ধি দিন দিন কমে যাচ্ছে। প্রস্তাবিত বাজেটেও এসব বিষয়ে কাঙ্ক্ষিত কোনও দিকনির্দেশনা নেই। নির্বাচন বিবেচনায় ইসির বরাদ্দ তিন গুণ বাড়ল— দৈনিক আজকের পত্রিকা'র দ্বিতীয় প্রধান শিরোনাম। এতে বলা হয়েছে, আগামী জাতীয় সংসদ ও স্থানীয় সরকার নির্বাচন বিবেচনায় রেখে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেটে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) জন্য বরাদ্দ প্রায় তিন গুণ বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। এর পরিমাণ দুই হাজার ৯৫৬ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে (২০২৪-২৫) ইসির জন্য সংশোধিত বরাদ্দ ছিল এক হাজার ১৪১ কোটি ৮৫ লাখ ৮৮ হাজার টাকা । আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরে ইসির জন্য প্রস্তাবিত বরাদ্দের মধ্যে দুই হাজার ৭২৬ কোটি ৯৫ লাখ পরিচালন ব্যয় এবং ২২৯ কোটি পাঁচ লাখ টাকা উন্নয়ন ব্যয় ধরা হয়েছে। বিলুপ্ত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বছরে ইসির জন্য সংশোধিত বাজেট ছিল চার হাজার ৭৬৯ কোটি পাঁচ লাখ ৭৬ হাজার টাকা । এর আগের অর্থবছরে (২০২২-২৩) সাংবিধানিক এ প্রতিষ্ঠানটির জন্য সংশোধিত বরাদ্দ ছিল এক হাজার ৪২৩ কোটি ১৩ লাখ ৫২ হাজার টাকা। বাজেট বক্তৃতায় অর্থ উপদেষ্টা বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের অন্যতম লক্ষ্য হলো একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা করা এবং গণতান্ত্রিক সরকারের হাতে ক্ষমতা নির্বাচন বিবেচনায় হস্তান্তর। গত দেড় দশকে দেশের নির্বাচন ব্যবস্থা পুরোপুরি ভেঙে ফেলা হয়েছে। তাই, নির্বাচনী ব্যবস্থার সংস্কারের ওপর সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন আইন, নীতিমালা ও আদেশ সংশোধন কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছে/ Most parties want polls road map বা সব দলই নির্বাচনের রোডম্যাপ চায়— নিউ এজ পত্রিকার প্রধান শিরোনাম। এতে বলা হয়েছে, প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে গতকাল সোমবার অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল অবিলম্বে জাতীয় নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণার দাবি জানিয়েছে। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) সাফ জানিয়ে দিয়েছে, ডিসেম্বরের পরে নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়ার কোনও যৌক্তিকতা নেই। এদিকে, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর সংলাপের দ্বিতীয় ধাপের প্রথম দিনে জুলাই গণঅভ্যুত্থেনে নেতৃত্ব দানকারী তরুণদের নবগঠিত রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি নির্বাচন কমিশনের পুনর্গঠন ও রাষ্ট্র সংস্কারের ওপর গুরুত্বারোপ করে। তাদের মতে, এসব প্রক্রিয়া শেষ না করে নির্বাচনের দিনক্ষণ ঠিক করা উচিত হবে না। এছাড়া, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামি সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে, বর্ষাকালের কথা মাথায় রেখে যেন আগামী জুনের মধ্যেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। অন্যদিকে, প্রধান উপদেষ্টা ও কমিশনের প্রধান মুহাম্মদ ইউনূস জানিয়েছেন, প্রয়োজনীয় সংস্কার সম্পন্ন করে একটি গণতান্ত্রিক রূপান্তরের লক্ষ্যে ডিসেম্বর ২০২৫ থেকে জুন ২০২৬, এই সময়ের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন আয়োজন সম্ভব বলে সরকারের পরিকল্পনা রয়েছে। জানা গেছে, রাষ্ট্র সংস্কার ও জুলাই চার্টার চূড়ান্ত করার লক্ষ্যে আয়োজিত এই বৈঠকে ৩০টি রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা অংশ নিয়েছেন।