শনিবার, ১২ অক্টোবর ২০২৪ ।। ২৭ আশ্বিন ১৪৩১ ।। ৯ রবিউস সানি ১৪৪৬


প্রকৃতির মাঝে আল্লাহর পরিচয়

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

|| নাজমুল হুদা মজনু ||

আল্লাহর হাবিব মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন– যে লোক প্রত্যেক ফরজ সালাতের পর কুরআনুল কারিমের শ্রেষ্ঠ আয়াত আয়াতুল-কুরসি নিয়মিত পাঠ করে, তার জন্য জান্নাতে প্রবেশের পথে একমাত্র মৃত্যু ছাড়া অন্য কোনো অন্তরায় থাকে না। (নাসাঈ) অর্থাৎ মৃত্যুর সাথে সাথেই সে জান্নাতের নিয়ামত এবং আরাম আয়েশ উপভোগ করতে শুরু করবে। কিন্তু কেউ যদি প্রশ্ন করে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন কে? আল্লাহ তায়ালা নিজেই এর উত্তরে আয়াতুল কুরসিতে বলেন,

আল্লাহ! তিনি ব্যতীত কোনো উপাস্য নেই। তিনি চিরঞ্জীব ও অনাদি এক সত্তা। তন্দ্রা ও নিদ্রা তাঁকে স্পর্শ করে না। নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডলে যা কিছু রয়েছে সবই তাঁর। কে আছে এমন, যে তাঁর অনুমতি ব্যতীত তাঁর কাছে  সুপারিশ করতে পারে? সম্মুখের অথবা পশ্চাতের সবই তিনি অবগত আছেন। একমাত্র তিনি যতটুকু ইচ্ছা করেন তা ব্যতীত, তাঁর জ্ঞানের কিছুই তারা আয়ত্ত করতে পারে না। তাঁর আসন আসমান ও জমিনব্যাপী হয়ে আছে এবং এতদুভয়ের সংরক্ষণে তাঁকে ওর বিব্রত হতে হয় না। তিনিই সর্বোচ্চ, মহীয়ান। (সূরা বাকারাহ-২৫৫)

তবে কাউকে মানতে হলে, জানতে হলে তাকে চিনতে হয়।  বিশেষত মহীয়ান গরিয়ান দয়ালু দাতা একান্ত ক্ষমাশীল আল্লাহ রাব্বুল আলামিনকে চিনতে হলে কুরআনুল কারিমের পাশাপাশি তাঁর সৃজনশীল সৃষ্টি নৈপুণ্যের দিকে দৃষ্টিপাত করতে হবে।

আল্লাহ রাব্বুল আলামিন কুরআনুল কারিমে বলেন,

(কত) মহান সেই পুণ্যময় সত্তা, যাঁর হাতে (রয়েছে আসমান জমিনের যাবতীয়) সার্বভৌমত্ব, (এ সৃষ্টি জগতের) সবকিছুর ওপর তিনি একক ক্ষমতাবান, যিনি জন্ম ও মৃত্যু সৃষ্টি করেছেন, যাতে করে এর দ্বারা তিনি তোমাদের যাচাই করে নিতে পারেন, কর্মক্ষেত্রে কে (এখানে) তোমাদের মধ্যে বেশি ভালো। তিনি সর্বশক্তিমান, তিনি অসীম ক্ষমাশীল, তিনিই সাত (মজবুত) আসমান বানিয়েছেন, পর্যায়ক্রমে একটার ওপর আরেকটা (স্থাপন করেছেন); অসীম দয়ালু আল্লাহর তায়ালার এ (নিপুণ) সৃষ্টির কোথাও কোনো খুঁত তুমি দেখতে পাবে না; আবার (তাকিয়ে) দেখোতো, কোথাও কি তুমি কোননো রকম ফাটল দেখতে পাও?

অতঃপর (তোমার) দৃষ্টি ফেরাও (নভোমণ্ডলের প্রতি), দেখো, আরেকবারও তোমার দৃষ্টি ফেরাও (দেখবে, তােমার) দৃষ্টি ব্যর্থ ও ক্লান্ত হয়ে তোমার দিকেই ফিরে আসবে। (সূরা মুলক : ২-৪)

প্রকৃতির মাঝে আল্লাহর পরিচয় মূর্ত হয়ে আছে। তাই উপরিল্লিখিত সূরার ১৯ নম্বর আয়াতে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আরো বলেন, 'এসব লোক কি তাদের মাথার উপর (দিয়ে উড়ে যাওয়া) পাখিগুলোকে দেখে না? (কিভাবে এরা) নিজেদের পাখা মেলে রাখে, (আবার) একসময় (তা) গুটিয়েও নেয়। (তখন) পরম দয়ালু আল্লাহ তায়ালাই এদের (মহাশূন্যে) স্থির করে রাখেন (হ্যাঁ একমাত্র আল্লাহ তায়ালাই); তিনি (তাঁর সৃষ্টির ছাটো বড়) সবকিছুই দেখেন।'

মানুষ যদি চিন্তাভাবনা করে  তার নিজের সত্তাকে দেখে তাহলে উপলব্ধি করতে পারে তারা স্রষ্টার মহত্ত্ব, গুরুত্ব ও মহানুভবতা কত মহান।

আল্লাহ রাব্বুল আলামিন কুরআন মাজিদে বলেন, তারা কি অনুধাবন করে না, আমি রাত সৃষ্টি করেছি তাদের বিশ্রামের জন্য এবং দিনকে করেছি আলোকিত। এতে মুমিন সম্প্রদায়ের জন্য অবশ্যই নিদর্শন রয়েছে।’ (সূরা নামল : ৮৬)

আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আরো বলেন, নিঃসন্দেহে আসমানসমূহ ও জমিনের নিখুঁত সৃষ্টি এবং দিবারাত্রির আবর্তনের জ্ঞানবান লোকদের জন্য অনেক নিদর্শন রয়েছে।

এই জ্ঞানবান লোক হচ্ছে তারা যারা দাঁড়িয়ে বসে এবং শুয়ে সর্ববস্থায় আল্লাহ তায়ালার স্মরণ করে এবং আসমান সমূহ ও জমিনের এই সৃষ্ট নৈপুণ্য সম্পর্কে চিন্তা-গবেষণা করে এবং স্বতঃস্ফূর্তভাবে তারা বলে ওঠে, হে আমাদের মালিক সৃষ্টি জগতের কোনো কিছুই তুমি অযথা বানিয়ে রাখোনি। তোমার সত্তা অনেক পবিত্র এবং তুমি আমাদের জাহান্নামের কঠিন আজাব থেকে নিষ্কৃতি দাও। (সূরা আলে ইমরান : ১৯০-১৯১)

পৃথিবী নামের এই বিশাল শস্যক্ষেত্র সম্পর্কে মানুষের বুঝবিবেচনা নিতান্তই অপ্রতুল। আল্লাহ জাল্লা শানুহু কুরআন মাজিদে বান্দাকে প্রশ্ন করেছেন–

হে (মানুষ,) তুমি কি (এ বিষয়টি কখনো) চিন্তা করো না, আল্লাহ তায়ালা (কিভাবে) আসমান থেকে পানি বর্ষণ করেন, অতঃপর এ (পানি) দ্বারা আমি জমিনের বুকে) রঙ-বেরঙের ফলমূল উদ্গত করি, (এখানে) পাহাড়সমূহও রয়েছে নানা রঙের, কোনোটা) সাদা (আবার কোনোটা) লাল, এর রঙও (আবার) বিচিত্র রকমের, কোনোটা (সাদাও নয়, লালও নয়; বরং) নিকষ কালো।

একইভাবে মানুষ, (জমিনের ওপর) বিচরণশীল জীবজন্তু এবং প্রণীগুলোও রয়েছে নানা রঙের; আল্লাহ তায়ালাকে তার বান্দাদের মধ্যে সেসব লোকই বেশি ভয় করে যারা (এ সৃষ্টি নৈপুণ্য সম্পর্কে ভালো করে) জানে, আল্লাহ তায়ালা মহাপরাক্রমশালী, ক্ষমাশীল।

যারা আল্লাহ তায়ালার কিতাব পাঠ করে, নামাজ প্রতিষ্ঠা করে, আমি তাদের যে রিজিক দিয়েছি তা থেকে যারা (আমারই উদ্দেশ্যে) গোপনে কিংবা প্রকাশ্যে দান করে, (মূলত) তারা এমন এক ব্যবসায় (নিয়োজিত) আছে যা কোনোদিন (তাদের জন্য) লোকসান বয়ে আনবে না;

কেননা, আল্লাহ তায়ালা তাদের কাজের পুরোপুরি বিনিময় দান করবেন, নিজ অনুগ্রহে তিনি তাদের (পাওনা) আরো বাড়িয়ে দেবেন; অবশ্যই তিনি ক্ষমাশীল, গুণগ্রাহী।(ফাতির : ২৭-৩০)

লেখক : সাংবাদিক ও সাহিত্যিক

এনএ/


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ