বৃহস্পতিবার, ০৫ জুন ২০২৫ ।। ২২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ ।। ৯ জিলহজ ১৪৪৬


‘ড. ইউনূসের নেতৃত্বে জুলাইয়ের প্রত্যাশা পূরণ করতে হবে’

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব ও দলের মুখপাত্র মাওলানা গাজী আতাউর রহমান গতকাল ২ জুন জাতীয় প্রধান উপদেষ্টার সভাপতিত্বে ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকে অংশগ্রহণ করেন। রাজনৈতিক দলগুলোর বক্তব্যের পর্বে তিনি বলেন, আজকের সময়টা বাংলাদেশের ইতিহাসে এক অনন্য মুহূর্ত। মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মাদ ইউনূস যখনই রাজনৈতিক দলগুলোকে আলোচনার জন্য ডাকছেন, কেউ বিলম্ব না করে সাড়া দিচ্ছেন, বারবার আসছেন। অতীতে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এমন আন্তরিক ও ধারাবাহিক সম্মিলিত অংশগ্রহণ খুব কমই দেখা গেছে। দেশ গড়ায় এই সুযোগটিকে আমাদের কাজে লাগাতে হবে।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব বলেন, একটি আগ্রাসী আন্তর্জাতিক শক্তি বাংলাদেশকে তাদের প্রভাবাধীন করার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে। কিন্তু ড. ইউনূস এখন তাদের সামনে বড় প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়িয়েছেন—তাদের জন্য তিনি যেন গলার কাঁটা। তারা চাইছে, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তিনি বিদায় নেন, যাতে তারা স্বস্তি পায়। কিন্তু আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত—বাংলাদেশে যে প্রত্যাশা নিয়ে ‘জুলাই বিপ্লব’ সংগঠিত হয়েছে, তার নেতৃত্বে সেই প্রত্যাশার পূরণ করা এবং একটি গ্রহণযোগ্য জাতীয় নির্বাচনের আয়োজন করা।

গত ৫৪ বছরে বাংলাদেশ যেভাবে পরিচালিত হয়েছে, আমরা চাই না সেই পুরনো ব্যবস্থা ফিরে আসুক। এজন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে প্রয়োজনীয় সংস্কারের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। কিছু অগ্রগতি আমরা দেখছিও। কিন্তু এমন একটি প্রচারণা রয়েছে যে—এই দশ মাসে অন্তর্বর্তী সরকার কিছুই করতে পারেনি, তাই তাদের দ্রুত বিদায় নেওয়া উচিত।

মাওলানা গাজী আতাউর রহমান বৈঠকের শুরুতে আইন ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা ডক্টর আসিফ নজরুল কর্তৃক উত্থাপিত ইতোমধ্যেই সম্পন্ন হওয়া সংস্কার কার্যক্রমের বিবরণের সূত্রধরে বলেন, আইন উপদেষ্টা তার দপ্তরের সংস্কারের সাফল্য তুলে ধরেছেন। এভাবে প্রত্যেকটা ক্ষেত্রে কী কী সংস্কার হয়েছে তা পরিষ্কারভাবে জনসমক্ষে তুলে ধরা জরুরি। এই সময়কালে কী কী উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, কী অগ্রগতি হয়েছে তা আরো জোড়ালোভাবে জনসন্মুখ্যে উপস্থাপিত হওয়া দরকার। পাশাপাশি, নির্বাচন নিয়ে অনেকের মনে সংশয় ও উদ্বেগ রয়েছে। এই সংশয় দূর করতে হবে। একটি স্বচ্ছ ও নির্ভরযোগ্য নির্বাচনের আয়োজন নিয়ে একটি পরিষ্কার ও শক্ত বার্তা দেওয়া উচিত।

তিনি বলেন, অনেকে টাইমফ্রেম বলছেন বা আলটিমেটাম দিচ্ছেন, রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচন চাইবে, এটাই স্বাভাবিক। এখন অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব হচ্ছে—রাজনৈতিক দলগুলোর উদ্বেগ দূর করা, এবং জনগণের মধ্যে আস্থা ও স্বস্তির পরিবেশ তৈরি করা।

উপদেষ্টা পরিষদ নিয়ে নানা আলোচনা চলছে, দুর্নীতির প্রসঙ্গও উঠছে। এসব নিয়ে জনমনে বিভ্রান্তি আছে, যেগুলো পরিষ্কারভাবে ব্যাখ্যা করা উচিত।

মাওলানা গাজী আতাউর রহমান দেশের পরিস্থিতি তুলে ধরে বলেন, এই দশ মাসে মৌলিকভাবে দেশের অবস্থার বড় পরিবর্তন ঘটেনি। ঘুষ-দুর্নীতি অফিস-আদালতে এখনও আছে, চাঁদাবাজি-দখলবাজিও চলমান। নির্বাচনের জন্য যে ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ দরকার, তা এখনও অনুপস্থিত। একটি নির্বাচন ঘোষণার আগে নিশ্চিত করতে হবে—নির্বাচন যেন নিরপেক্ষ হয়, সকল রাজনৈতিক দল যেন সমান সুযোগ পায় এবং জনগণ যেন নির্ভয়ে, স্বাধীনভাবে ভোট দিতে পারে। অতীতে এই পরিবেশ ছিল না; আমরা চাই, এখন অন্তত তা গড়ে উঠুক।

বর্তমানে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সন্তোষজনক নয়। নির্বাচনের আগে অবশ্যই মানুষের মধ্যে আস্থা তৈরি করতে হবে, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যেও বিশ্বাস ফিরিয়ে আনতে হবে। এবং নিশ্চিত করতে হবে কোনো কর্তৃত্ববাদী আচরণ বা এক/দুটি দলের অফিস-আদালতে একচ্ছত্র প্রভাব যেন না থাকে। যতদিন এসব থাকবে, ততদিন লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড হবে না।

এমএইচ/


সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ