সোমবার, ০৬ অক্টোবর ২০২৫ ।। ২১ আশ্বিন ১৪৩২ ।। ১৪ রবিউস সানি ১৪৪৭


বারবার ধর্ম অবমাননা, ধর্ম মন্ত্রণালয়ের দায় কতটুকু?

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

||আবু সাঈদ||

দেশে সবচেয়ে অবহেলিত ও প্রভাবহীন মন্ত্রণালয় হলো ধর্ম মন্ত্রণালয়। কিন্তু দুঃখজনক হলো, আমাদের চাওয়া সবচেয়ে বেশি এই মন্ত্রণালয়ের প্রতিই। এখন মন্ত্রণালয় যদি তার সীমাবদ্ধতার কারণে কিছু করতে না পারে, তাহলে আমরা মন্ত্রণালয় প্রধানকে জানাজা পড়িয়ে ফেলি। আর বলি, কাজ করতে না পারলে দায়িত্ব ছেড়ে দিলেই তো হয়।

এখন প্রশ্ন হলো, মন্ত্রণালয় প্রধান দায়িত্ব ছেড়ে দিলে তো আরেকজনকে দায়িত্ব নিতে হবে। তিনি কে হবেন? আর তিনি এসেই বা এসব ক্ষেত্রে সরব ভূমিকা কি রাখতে পারবেন? পারবেন না। কারণ, রাষ্ট্রের মেকানিজমটাই ধর্ম মন্ত্রণালয়কে টুটি চেপে ধরে রেখেছে। সুতরাং নতুন যিনি আসবেন, তাকেও বর্তমান প্রধানের মতো দায়িত্ব ছাড়তে হবে।

এভাবে যদি দায়িত্ব ছাড়তে থাকে, তাহলে পুরো অন্তর্বর্তী মেয়াদ কালে লাগাতার দায়িত্ব ছাড়ার মধ্যেই থাকতে হবে।

দুই.

এখন যিনি ধর্ম মন্ত্রণালয়, তার নানা ত্রুটি-বিচ্যুতি আছে। সেটি অবশ্যই সমালোচনা করতে হবে। কিন্তু তার কাছে বেশি আশা করে জানাজা পড়ার তো দরকার আছে বলে মনে করি না। তিনি টুকটাক কিছু কাজ করছেন। তাকে কাজ করতে দেন। আরও কী কী কাজ করার তিনি উদ্যোগ নিতে পারবেন, ওসব নিয়ে দিক-নির্দেশনা দিন। তার সাথে সাক্ষাতে কথা বলুন। এভাবে ভেতরের মেকানিজমে কিছু সুযোগ অন্তত তিনি তৈরি করুক। এটা কম ফায়দা কিসের।

তিনি দায়িত্বে আছেন। কুরআন অবমাননা বা ধর্ম অবমাননার মতো ইস্যুগুলো এলো। তিনি চুপ থাকলেন। কিছু বলতে পারলেন না। এতে তো তার ঈমান চলে যায়নি। সর্বোচ্চ তিনি দুর্বল ঈমানের পরিচয় দিয়েছেন।

তো ভাই, এসব ইস্যুতে গণমানুষের দাবি আদায়ের উপায় তো কেবল ধর্ম মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগ নয়। আমি-আপনি রাজপথে নামি। নিজেদের দাবি আদায়ে তৎপর হই। ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতা নিই। তখন যদি তিনি আমাদের সহযোগিতা না করেন, তাহলে না হয়, কঠোর সমালোচনা করা গেল। কিংবা তার পদত্যাগের দাবি জানানো গেল। এখন আমি যদি এভাবে গঠনমূলক কিছু না করে কেবল ধর্ম উপদেষ্টার চৌদ্দগুষ্ঠি উদ্ধার করতে লেগে যাই, তাহলে তো ফোকাস মূল জায়গা থেকে সরে যাবে।

তিন.

এই ধরনের ইস্যুগুলো দেশীয় আইনের মাধ্যমেও সমাধান হওয়ার নয়। কারণ, আইন হলে যখন কেউ এই অপরাধ করবে, তার ঘরানার সুশীল বুদ্ধিজীবীরা নানা বয়ান নিয়ে হাজির হবেন -যেমনটি এখনকার কুরআন অবমাননার ইস্যুতে হয়েছে- তখন আইন কার্যকর হবে না। এরচেয়ে ভালো এই ধরনের ইস্যুতে ধর্মপ্রাণ, কুরআন প্রেমিক ও আশিকে রাসূলের কেউ ‘মানসিক ভারসাম্যহীন’ হয়ে যাওয়া এবং তিনিই উচিত শিক্ষা দিয়ে দেওয়া। এরপর যারা বুদ্ধিজীবী আছেন, তারাও নানা বয়ানের মধ্য দিয়ে ওই ‘মানসিক ভারসাম্যহীনকে’ সেইফ অ্যাক্সিট দেওয়া। বিভিন্ন দেশে যে অবমাননার ইস্যু কমেছে, ইতিহাস ঘাটলে এটিই পাবেন সমাধান।

এর অর্থ হচ্ছে, মূল যে সমাধান, সেদিকে আমরা কেউ ফোকাস করছি না। উল্টো কম উচিত বিষয়গুলো নিয়ে আমরা উঠেপড়ে লাগি। দিনশেষে, নিজ ঘরানারই এক ভাই আরেক ভাইকে শত্রু ভাবাপন্ন করে ফেলি। তাই আসুন, ধর্ম উপদেষ্টার জানাজা না পড়ে নিজেদের কর্মকুশল ঠিক করি। 

আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমাদেরকে সহিহ বুঝ দান করেন। আমিন।

লেখক: সহ-সম্পাদক, দৈনিক নয়া দিগন্ত; শিক্ষক, মাদরাসাতুত তাকওয়া, ঢাকা

এনএইচ/


সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ