সোমবার, ০৪ আগস্ট ২০২৫ ।। ২০ শ্রাবণ ১৪৩২ ।। ১০ সফর ১৪৪৭


 বায়তুল মোকাররম নিয়ে কয়েকটি নিবেদন

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

শায়খ মহিউদ্দীন ফারুকী

দীর্ঘ দেড় দশক পর সেদিন হজরত আবদুল মালেক সাহেবের পেছনে জুমার নামাজ আদায় করলাম। এর মাঝে বায়তুল মোকাররমে যাওয়া হয়েছে, তবে জুমাহ আদায় করা হয়নি। জুমা আদায়ের সময় সার্বিক পর্যবেক্ষণে আমার কাছে মনে হয়েছে যে, সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলদের সুযোগ ও ক্ষমতা থাকতে থাকতে কয়েকটি বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন-

এক. আলোচনা শোনার সুবিধার্তে মাইকের উন্নত ব্যবস্থা গ্রহণ করা অবশ্য কর্তব্য। বাহিরের মাইকগুলো ভালো মানের দিতে চেষ্টা করা।

দুই. জাতীয় মসজিদ হিসেবে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতায় জুমার দিনে আরেকটু বেশি গুরুত্ব দেওয়া। অন্তত হাম্মাম ও অজুখানাকে আরেকটু পরিচ্ছন্ন ও উন্নত করতে চেষ্টা করা। প্রয়োজনে জুমার দিনের জন্য চুক্তিভিত্তিক পরিচ্ছন্নতাকর্মী নিয়োগ প্রদান করা।

একটি জাতীয় মসজিদের টয়লেটগুলোর দরজা ভাঙা, নিচ দিয়ে খোলা, ময়লায় ভরপুর। বিষয়টি ভাবতেই গা শিউরে উঠে। এটি দেশ ও দেশের দায়িত্বশীলদের জন্য বিরাট লজ্জার।

তিন. যথাযথভাবে কাতার ঠিক করা, যেখানে সেখানে যেন মুসল্লিরা বসে না যায় সে জন্য চুক্তির ভিত্তিতে শুধু জুমার দিনের জন্য প্রশিক্ষিত ভলান্টিয়ার নিয়োগ দেওয়া। তাদের দায়িত্ব থাকবে নির্দিষ্ট স্থান পূরণ হয়ে গেলে কিছু স্থান ফাঁকা থাকতেই মুসল্লিদের দ্বিতীয়, তৃতীয় তলায় যেতে বাধ্য করা। কাতারগুলো ঠিক করা। গেট থেকে ভেতরে ঢোকর পথগুলো চলাচলে জন্য খালি রাখা। কেউ বসে গেলে তাকে উঠিয়ে দেওয়া। এক্ষেত্রে মসজিদে নববির কাতার ব্যবস্থাপনা সিস্টেম ফলো করা যেতে পারে।

চার. নামাজ শেষ হলে ভেতর থেকে বের হওয়ার গেইটগুলো পুরোপুরি খুলে দেওয়া। বের হওয়ার রাস্তায় কেউ যেন সুন্নতের নিয়ত না করতে পারে সেদিকে লক্ষ্য রাখা।

পাঁচ. নামাজ পরিপূর্ণ শেষ হওয়ার পূর্বেই উত্তর গেইটে স্লোগান ও উচ্চ আওয়াজ বিরত রাখার ব্যবস্থা গ্রহণ করা। অন্তত মোনাজাত ও চার রাকাত সুন্নতের সময় বিষয়টি তদারকি করা। এক্ষেত্রে মুসল্লিদেরও একটু খেয়াল রাখতে হবে।

ছয়. খাদেম, মুয়াজ্জিনদের নিয়োগের ক্ষেত্রে আলিয়া ও কওমিকে সমানভাবে সুযোগ দিয়ে লেবাস, সুরতের বিষয়টিকে গুরুত্ব দেওয়া। অন্তত দেখতে যেন শালীন ও আলেম আলেম মনে হয়।

সাত. খতিব সাহেবকে যারা প্রটোকল দিচ্ছেন তাদেরও লেবাস সুরত ও দাড়ির বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দেওয়া। অন্তত দেখতে আলেমসুলভ হওয়া।

আট. মোনাজাত শেষ হওয়ার সাথে সাথে মুসল্লিরা খতিব সাহেবের সাথে সাক্ষাতের জন্য হুড়মুড়িয়ে গায়ের উপর পড়ছেন। এক্ষেত্রে হারামের মতো বিশেষ লোক রাখার ব্যবস্থা করা।

নয়. যে কেউ সাংবাদিক হিসেবে মেহরাবের কাছে চলে যাচ্ছে এবং ছবি তুলছে ও ভিডিও করছে। বিষয়টি বিভিন্ন দিক থেকেই সমস্যা সৃষ্টি করছে। মুসল্লিরাও বিরক্ত হচ্ছেন। তাই সাংবাদিক যদি যেতেই হয় তাহলে নির্দিষ্ট পোশাকে এবং আইডি কার্ডসহ ভেতরে প্রবেশ করবে। এবং তা সংখ্যায় অবশ্যই এক দুজন। কিন্তু কোনোভাবেই কন্টেন্ট ক্রিয়েটররা যেন মেহরাব পর্যন্ত যেতে না পারে সে ব্যাপারে গার্ড ও খাদেমদের কঠোর হতে হবে।

দশ. বায়তুল মোকাররমকে জাতীয় মসজিদ হিসেবে আরও সুন্দর ও আধুনিকায়নের ক্ষেত্রে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে কাজ শুরু করা। আর্থিক অনটন থাকলে দান বাক্সের ব্যবস্থা করে হলেও উদ্যোগ গ্রহণ করা। আশা করি সাধার মুসল্লিরা এক্ষেত্রে দায়িত্বশীলদের থেকেও বেশি আন্তরিকতার পরিচয় দিয়ে এগিয়ে আসবে।

লেখক: আরবি ভাষাবিদ, গবেষক ও চিন্তক আলেম

এনএইচ/


সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ