নাজমুল হাসান।
আল্লাহ তায়ালা মানবজাতিকে পুরুষ ও নারী—এই দুই রূপে সৃষ্টি করেছেন। সন্তান দান করা সম্পূর্ণই তাঁর ইচ্ছাধীন বিষয়। তিনি কারো ঘরে কন্যাসন্তান দান করেন, কাউকে পুত্রসন্তান দেন, আবার কাউকে উভয়ই দান করেন। কেউ কেউ সন্তানবঞ্চিত থাকেন—সবকিছুই আল্লাহর জ্ঞান ও হিকমতের অন্তর্ভুক্ত।
দুঃখজনক হলেও সত্য, আমাদের সমাজে এখনো কন্যাসন্তানের জন্মকে অনেকেই খুশি মনে গ্রহণ করেন না। পুত্রসন্তান হলে যেমন আনন্দের বন্যা বয়ে যায়, মিষ্টি বিতরণ হয়, তেমনি কন্যাসন্তানের ক্ষেত্রে অনেক সময় নীরবতা, আফসোস, এমনকি লজ্জাও দেখা যায়। কিছু পরিবারে কন্যাসন্তানের জন্য স্ত্রীকে অপমানও করা হয়, যা একেবারেই অন্যায় ও ইসলামবিরোধী।
আল্লাহ তায়ালা বলেন,
“আসমান ও জমিনের রাজত্ব একমাত্র আল্লাহরই। তিনি যা চান সৃষ্টি করেন। যাকে ইচ্ছা কন্যাসন্তান দেন এবং যাকে ইচ্ছা পুত্রসন্তান দেন…”
— (সূরা শুরা, আয়াত ৪৯)
এ আয়াত স্পষ্ট করে দেয়—সন্তান হওয়া বা না হওয়া, ছেলে হবে না মেয়ে—এ সবই আল্লাহর কুদরত ও ইচ্ছায় নির্ধারিত। এতে কোনো মানুষের হস্তক্ষেপ বা অনুযোগের জায়গা নেই।
ইসলাম কন্যাসন্তানের মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করেছে
ইসলামের আগমনের আগে আরব সমাজে কন্যাসন্তান জন্ম এক লজ্জার ব্যাপার ছিল। অনেকেই কন্যাশিশুকে জীবন্ত পুঁতে ফেলত। ইসলাম সেই অমানবিক রীতির অবসান ঘটিয়েছে এবং কন্যাসন্তানকে সম্মানের আসনে বসিয়েছে।
আল্লাহ বলেন,
“তাদের কাউকে কন্যাসন্তানের সুসংবাদ দেওয়া হলে তার মুখ কালো হয়ে যায় এবং সে মনে মনে দুঃখিত হয়।”
— (সূরা নাহল, আয়াত ৫৮)
কন্যা—জান্নাতের পথ দেখায়
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন,
“যার তিনটি মেয়ে বা তিনটি বোন থাকে, অথবা দুটি মেয়ে বা দুটি বোন থাকে এবং সে যদি তাদের সঙ্গে উত্তম আচরণ করে, তাদের অধিকার আদায়ে আল্লাহকে ভয় করে, তবে তার জন্য রয়েছে জান্নাত।”
— (তিরমিজি: ১৯১৬; আবু দাউদ: ৫১৪৭)
অতএব, কন্যাসন্তান কোনোভাবেই বোঝা নয়, বরং জান্নাতের সোপান।
আমাদের করণীয়
-
কন্যাসন্তান জন্মালে আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা
-
সামাজিক কুসংস্কার দূর করে কন্যার প্রতি ভালোবাসা ও মর্যাদার দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তোলা
-
কন্যা সন্তানকে ইসলামি শিক্ষায় শিক্ষিত ও আত্মবিশ্বাসী করে তোলা
-
ছেলে-মেয়ে উভয়কেই সমানভাবে ভালোবাসা ও আদর করা
পরিশেষে বলা যায়, কন্যা মানেই আল্লাহর সেরা উপহার। কন্যা মানেই ভালোবাসা, বরকত আর জান্নাতের দাওয়াত। আসুন, কন্যাসন্তানদের যথাযোগ্য মর্যাদা দিয়ে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করি।
এনএইচ/