নাজমুল হাসান।
কোরবানি মুসলমানদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত—যার মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা হয়। সামর্থ্যবান প্রতিটি ঈমানদারের ওপর এটি ওয়াজিব। তবে অনেক সময় পশু নির্বাচনের ক্ষেত্রে অজান্তে এমন পশু কোরবানি করা হয়, যার দেহে শরিয়তে বর্ণিত দোষ বা ত্রুটি বিদ্যমান। ফলে সে কোরবানি শুদ্ধ হয় না বা মাকরূহ হয়ে পড়ে। তাই কোরবানির পশু নির্বাচন করার সময় কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক লক্ষ রাখা জরুরি।
কোরবানিযোগ্য পশু
শরিয়তের দৃষ্টিতে নিম্নোক্ত ছয় প্রকার পশু দ্বারা কোরবানি বৈধ:
-
উট
-
গরু
-
মহিষ
-
ছাগল
-
ভেড়া
-
দুম্বা
তবে এগুলো অবশ্যই ত্রুটিমুক্ত ও সুস্থ-সবল হতে হবে।
যেসব পশুর কোরবানি সহিহ হবে না (নিষিদ্ধ চারটি ত্রুটি)
রাসুলুল্লাহ (সা.) হাদিসে চার প্রকার দৃষ্টিগোচর ত্রুটিযুক্ত পশুকে কোরবানির জন্য নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছেন। হজরত বারা (রা.)-এর বর্ণনায় এসেছে:
“চার প্রকার পশু দিয়ে কোরবানি বৈধ নয়—
১. এমন পশু যার চোখে সুস্পষ্ট অন্ধত্ব আছে
২. এমন পশু যে গুরুতর অসুস্থ
৩. স্পষ্ট খোঁড়া বা ল্যাংড়া পশু
৪. অতিমাত্রায় দুর্বল পশু যার শরীরে হাড়-মজ্জা নেই”
(সূত্র: নাসাঈ)
কোরবানিযোগ্য হলেও অপছন্দনীয় (মাকরূহ) পশুর ধরন
কিছু পশু রয়েছে, যেগুলোর ত্রুটি খুব গুরুতর না হলেও শরিয়তে তা অপছন্দনীয় বা মাকরূহ বিবেচিত হয়েছে। যেমন:
-
ভাঙা শিং
-
কাটা কান
-
কাটা লেজ
-
কাটা লিঙ্গ বা ওলান
এসব পশু দিয়ে কোরবানি করলে তা সহিহ হলেও সাওয়াব কমে যায় এবং তা পরিত্যাগ করাই উত্তম।
কোরবানির জন্য একেবারেই নিষিদ্ধ পশুর দৃষ্টান্ত
হাদিসে আরও কিছু নির্দিষ্ট দোষ-ত্রুটি উল্লেখ করা হয়েছে, যেগুলোর কারণে কোরবানি একেবারেই বৈধ নয়। যেমন:
ত্রুটির নাম | অর্থ |
---|---|
মুকাবালা | কানের একদিক সম্পূর্ণ কাটা |
মুদাবারা | কানের গোড়া থেকে কাটা |
খারকা | কানে ছিদ্র |
শারকা | কান ফাটা |
আযবা | শিং ভাঙা (অর্ধেক বা তার বেশি) |
নবিজী (সা.) এসব পশু দিয়ে কোরবানি করতে নিষেধ করেছেন। (সূত্র: নাসাঈ)
বনজ বা জংলি প্রাণীর কোরবানি
-
জংলি বা বন-জঙ্গলের হিংস্র পশু দিয়ে কোরবানি বৈধ নয়
-
হরিণ দিয়ে কোরবানি হবে না, যদিও তার মাংস হালাল
কোরবানির পশু নির্বাচনে নবিজীর নির্দেশনা
হজরত আলি (রা.) বলেন:
নবিজী (সা.) আমাদের আদেশ করেছেন, কোরবানির পশুর চোখ ও কান ভালোভাবে পরীক্ষা করে নেওয়ার জন্য। যাতে এসব অঙ্গে কোনো ত্রুটি না থাকে। (সূত্র: নাসাঈ)
কোরবানি শুধুই একটি পশু জবাই নয়; বরং এটি আল্লাহর দরবারে ইবাদতের অন্যতম শ্রেষ্ঠ রূপ। তাই কোরবানির পশু নির্বাচনের ক্ষেত্রে হাদিসের নির্দেশনা অনুযায়ী সচেতন থাকা অপরিহার্য।
এনইচ/