|| শাব্বির আহমাদ খান ||
দেশজুড়ে চলছে তাপপ্রবাহ। এতে জনজীবন চরমভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। কোথাও কোথাও রাস্তাঘাটের পিচ পর্যন্ত গলে যাচ্ছে প্রচণ্ড গরমে। এই অবস্থায় মানবিক বিবেচনায় ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নগরীর মসজিদগুলো খোলা রাখার নির্দেশ দিয়েছে।
এই উদ্যোগকে কেউ কেউ স্বাগত জানিয়েছেন। বিশেষ করে কয়েকজন আলেম এই সিদ্ধান্তকে সময়োপযোগী ও শরিয়তসম্মত আখ্যা দিয়েছেন। তবে এ নিয়ে রয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়াও। কেউ কেউ মনে করেন, মসজিদের আদব ও পবিত্রতা রক্ষায় বাড়তি সতর্কতা জরুরি।
চলমান তীব্র তাপপ্রবাহে মসজিদ খোলা রাখার উদ্যোগকে শরিয়তের দৃষ্টিকোণ থেকে যুক্তিসঙ্গত বলে মন্তব্য করেছেন দেশের শীর্ষস্থানীয় আলেমগণ।
বসুন্ধরার মারকাযুল ফিকরির ইসলামির মুফতি ও মুহাদ্দিস মুফতি ইনয়ামুল হক কাসেমী বলেন, ‘তীব্র গরমের কারণে যদি মসজিদ খোলা রাখা হয়, তাহলে শরিয়তের দিক থেকে এতে কোনো সমস্যা নেই। পরিস্থিতি যদি এমন পর্যায়ে পৌঁছে যে মানুষের জানমালের নিরাপত্তার স্বার্থেই মসজিদ খোলা রাখা প্রয়োজন হয়, তবুও তা শরিয়তবিরোধী নয়।’
অন্যদিকে শানে সাহাবার আমির বিখ্যাত মুফাস্সিরে কোরআন মাওলানা খুরশিদ আলম কাসেমী মনে করেন, ‘মসজিদ ইবাদতের জন্য, বিশ্রামের জন্য নয়। বিশ্রামের সুযোগ দিলে কেউ কেউ মসজিদে বসে দুনিয়াবি আলোচনা করতে পারে, এতে মসজিদের আদব ক্ষুণ্ন হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাপদাহ থেকে রক্ষা পেতে আমাদের আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করতে হবে, ইস্তিসকার নামাজ আদায় করতে হবে এবং গুনাহ থেকে বিরত থাকতে হবে।’
গ্লোবাল এডুকেশন ইনিস্টিউটের প্রতিষ্ঠাতা প্রিন্সিপাল মাওলানা মানফুজুর রহমান বলেন, ‘বাংলাদেশ একটি মুসলিম রাষ্ট্র, যেখানে ৯৮ শতাংশ মানুষ মুসলমান এবং অধিকাংশই নামাজি। ফলে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের সময় মসজিদ খোলাই থাকে। এর বাইরেও মানবিক দিক বিবেচনায় এবং গরমে জনসাধারণের কষ্ট লাঘবে মসজিদ খোলা রাখলে তা সওয়াবের কাজ হবে। তবে সতর্ক থাকতে হবে, যেন কিছু অসচেতন লোক মসজিদের পবিত্রতা নষ্ট না করে। এ উদ্যোগ নেওয়ায় আমি ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনকে সাধুবাদ জানাই।’
তীব্র তাপপ্রবাহে মসজিদ খোলা রাখার সিদ্ধান্ত সমাজে যেমন মানবিক মূল্যবোধের পরিচায়ক হিসেবে দেখা দিয়েছে, তেমনি এটি ধর্মীয় দিক থেকেও গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে অনেক আলেমের কাছে। তবে মসজিদের পবিত্রতা ও আদব রক্ষায় সচেতনতার বিষয়টিও গুরুত্ব পাচ্ছে—যা এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে ভারসাম্য রক্ষার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে।
এমএইচ/