শনিবার, ১০ মে ২০২৫ ।। ২৭ বৈশাখ ১৪৩২ ।। ১২ জিলকদ ১৪৪৬

শিরোনাম :

জান্নাতি হুর কেমন হবে

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার
ছবি: সংগৃহীত

জান্নাত হলো মুমিনের চিরসুখের ঠিকানা। সেখানে সুখশান্তির অন্ত থাকবে না। পরকালের হিসাবে যাদের পুণ্যের পাল্লা ভারী হবে এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করবে তাদের জন্য আল্লাহ তৈরি করে রেখেছেন জান্নাত। জান্নাত আরবি শব্দ। অর্থ বাগান বা উদ্যান।

জান্নাতের বর্ণনা দিতে গিয়ে রাসুল (স.) বলেন, ‘মহান আল্লাহ বলেছেন, আমি আমার নেককার বান্দাদের জন্য এমন জিনিস তৈরি করে রেখেছি, যা কোনো চক্ষু দেখেনি, কোনো কান শোনেনি এবং যার সম্পর্কে কোনো মানুষের মনে ধারণাও জন্মেনি। তোমরা চাইলে এ আয়াতটি পাঠ করতে পারো, ‘কেউ জানে না, তাদের জন্য তাদের চোখ শীতলকারী কী জিনিস লুকানো আছে।’ (বুখারি: ৩২৪৪)


হুর জান্নাতের একটি বিশেষ নেয়ামত। জান্নাতি রমণীদের কোরআনের ভাষায় বলা হয় ‘হুর’। আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে হুরদের দৈহিক অবয়বের বিবরণ দিয়েছেন। যেমন ‘তাদের করেছি কুমারি, সোহাগিনী, সমবয়স্কা’ (সূরা ওয়াকেয়া: ৩৬-৩৭)। ‘মুত্তাকিদের জন্য রয়েছে সাফল্য, উদ্যান, আঙ্গুর এবং স্ফীত স্তনবিশিষ্টা সমবয়সী বালিকা।’ (সুরা নাবা: ৩১-৩৩)। ‘যারা আবরণে রক্ষিত মোতির মতো।’ (সুরা ওয়াকেয়া:২৩)

আরও ইরশাদ হয়েছে, ‘..সেখানে তাদের সোনার কাঁকনে সজ্জিত করা হবে, সেখানে তারা সূক্ষ্ম ও পুরু রেশম ও কিংখাবের সবুজ বস্ত্র পরিধান করবে এবং উপবেশন করবে উঁচু আসনে বালিশে হেলান দিয়ে, চমৎকার পুরস্কার এবং সর্বোত্তম আবাস!’ (সুরা কাহাফ: ৩১)। ‘তাদেরকে এর পূর্বে কোনো ইনসান বা  জ্বিন স্পর্শ করেনি।’ (সুরা রহমান: ৫৬)

আল্লাহ তাআলা জান্নাতি পুরুষদের সঙ্গে তাদের বিয়ে দেবেন। পবিত্র কোরআনে এ সম্পর্কে ইরশাদ হয়েছে, ‘..আর আমরা তাদেরকে বিয়ে দিয়ে দেব ডাগর নয়না হুরদের সাথে’ (সুরা দুখান: ৫৩-৫৪)। ‘..এবং তারা সেখানে থাকবে চিরকাল।’ (সুরা বাকারা: ২৫)


প্রিয়নবী (স.) ইরশাদ করেছেন, ‘জান্নাতি রমণীদের পরিহিত পোশাক ভেদ করে তাদের পায়ের গোছার শুভ্রতা এবং অস্থি-মজ্জা দেখা যাবে। কারণ, তাদের সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেন, যেন তারা পদ্মরাগ ও প্রবাল। আর পদ্মরাগ এমন স্বচ্ছ পাথর যার ভেতর কোনো সুতা প্রবেশ করালে তা বাইরে থেকে দেখা যায়।’ (তিরমিজি: ২৫৩২)। ‘জান্নাতে মুমিনদের জন্য মোতির গাঁথুনি করা একটি তাঁবু আছে। এর উচ্চতা ৩০ মাইল। এর প্রত্যেক কোণে মুমিনদের জন্য এমন নারীরা থাকবে যাদের কেউ দেখেনি। (সহিহ বুখারি: ২৯৯৩)

হাদিসে মহানবী (স.) জান্নাতি হুরদের রঙ সম্পর্কে জানিয়েছেন, জান্নাতি রমণীদের চার রঙে সৃষ্টি করা হয়েছে। যেমন—সাদা, হলদে, সবুজ ও লাল। তাদের দেহ জাফরান, মৃগনাভি, আম্বর ও কাফুর দ্বারা সৃষ্টি। তাদের চুল লবঙ্গ দ্বারা সৃষ্টি। পা থেকে হাঁটু পর্যন্ত সুগন্ধি জাফরানের দ্বারা সৃষ্টি। হাঁটু থেকে নাভি পর্যন্ত মৃগনাভির দ্বারা তৈরি, নাভি থেকে ঘাড় পর্যন্ত আম্বরের তৈরি, ঘাড় থেকে মাথা পর্যন্ত কাফুরের তৈরি। যদি একজন রমণী পৃথিবীতে সামান্য থুতু নিক্ষেপ করত, তাহলে সমগ্র পৃথিবী সুঘ্রাণে মুখরিত হয়ে যেত, তাদের বক্ষের মধ্যে আল্লাহর নাম ও স্বামীর নাম লেখা থাকবে। প্রত্যেকের হাতে ১০টি করে স্বর্ণের কাঁকন থাকবে। প্রত্যেক আঙুলে থাকবে মুক্তার আংটি এবং উভয় চরণে থাকবে জহরতের নূপুর। হাদিসে এসেছে, ‘..জান্নাতি কোনো মহিলা যদি দুনিয়াবাসীদের প্রতি উঁকি দেয় তাহলে আসমান ও জমিনের মাঝের সব কিছু আলোকিত এবং সুরভিত হয়ে যাবে। আর তার মাথার ওড়না দুনিয়া ও তার সবকিছু চেয়ে উত্তম।’ (সহিহ বুখারি: ২৭৯৬)

তাদের মন-প্রাণ এবং দৃষ্টি তাদের স্বামীদের কাছে আবদ্ধ থাকবে, ফলে নিজ স্বামীদের ছাড়া অন্য কাউকে তারা কামনা করবে না। প্রতিনিয়ত তাদের রূপ-লাবণ্য বৃদ্ধি পেতে থাকবে। প্রিয়নবী (স.) ইরশাদ করেন, ‘জান্নাতে একটি বাজার রয়েছে, যেখানে তারা প্রতি শুক্রবারে পরস্পর সাক্ষাৎ করবে। তখন উত্তরের বাতাস প্রবাহিত হবে, যা তাদের মুখমণ্ডল ও কাপড়ে আলোড়িত করবে। এতে তাদের সৌন্দর্য ও রূপ-লাবণ্য আরো বেড়ে যাবে । তারা রূপ-লাবণ্যে সমৃদ্ধাবস্থায় স্ত্রীদের কাছে ফিরবে। তখন তাদের স্ত্রীরা বলবে, আল্লাহর কসম, আমাদের থেকে পৃথক হওয়ার পর তোমাদের সৌন্দর্যও বৃদ্ধি পেয়েছে। উত্তরে তারা বলবে, আল্লাহর শপথ, আমাদের প্রস্থানের পর তোমাদের সৌন্দর্যও বহুগুণে বেড়ে গেছে।’ (সহিহ মুসলিম: ৭০৩৮)

জান্নাতে হুরদের অনুষ্ঠান হবে। এতে তারা এমন সুমধুর কণ্ঠে গান গাইবে, যা কোনো সৃষ্টিজীব কখনো শোনেনি। রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেছেন, ‘জান্নাতে আয়তলোচনা হুরদের সমবেত হওয়ার একটি জায়গা রয়েছে। তারা সেখানে এমন সুরেলা আওয়াজে গান গাইবে, যে আওয়াজ কোনো মাখলুক ইতঃপূর্বে কখনও শুনেনি। তারা এই বলে গান গাইবে— আমরা তো চিরসঙ্গিনী, আমাদের ধ্বংস নেই। আমরা তো আনন্দ-উল্লাসের জন্যই, দুঃখ-কষ্ট নেই আমাদের। আমরা চির সন্তুষ্ট, আমরা কখনও অসন্তুষ্ট হব না। তারা কতই না সৌভাগ্যবান যাদের জন্য আমরা এবং আমাদের জন্য যারা।’ (তিরমিজি: ২৫৬৪)

সৃষ্টির পর থেকে যুগ যুগ ধরে এসব হুর তাদের নিজ নিজ স্বামীর জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে। যদিও তারা শুধু জান্নাতেই তাদের প্রতীক্ষিত স্বামীর সাক্ষাৎ পাবে। তবে এখন থেকেই তারা হৃদয়ে পৃথিবীবাসী স্বামীর জন্য অভাবনীয় ভালোবাসা লালন করছে। প্রিয়নবী (স.) ইরশাদ করেন, ‘পৃথিবীর কোনো নারী যখন তার স্বামীকে কষ্ট দেয়, তখন তার জন্য নির্ধারিত হুর বলে, (হে হতভাগিনী!) তুমি তাকে কষ্ট দিও না। আল্লাহ তোমাকে ধ্বংস করুন। তিনি তো তোমার কাছে কয়েক দিনের মেহমান। অচিরেই তিনি তোমাকে ছেড়ে আমাদের কাছে চলে আসবেন।’ (তিরমিজি: ১১৭৪)

হুরদের থুথুর বর্ণনা দিতে গিয়ে ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘বেহেশতে এক প্রকার হুর আছে-তাদের বলা হয় ‘লোয়াব’। তারা যদি দুনিয়ার সাগরে মুখের থুথু বা লোয়াব নিক্ষেপ করত তাহলে সাগরের সব জলরাশি মিষ্টি হয়ে যেত। তাদের বুকে লেখা থাকবে- ‘যারা আমার মতো হুর পেতে পছন্দ করে তারা যেন আমার প্রভুর আনুগত্যের আমল করেন।’ (আত তাজকিরাহ, পৃ: ৫১৮-৫১৯)

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে কোরআন-সুন্নাহ অনুযায়ী আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

এনএইচ/


সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ