রবিবার, ০৪ মে ২০২৫ ।। ২১ বৈশাখ ১৪৩২ ।। ৬ জিলকদ ১৪৪৬

শিরোনাম :

হজে তাওয়াফ ও বিভিন্ন স্থানে যে দোয়া পড়বেন

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

হজ ও ওমরার সময় পবিত্র কাবাঘর তাওয়াফ করা হয়। হজ ছাড়াও নফল তাওয়াফের নিয়ম রয়েছে। পবিত্র কোরআনে একাধিক জায়গায় কাবাঘর তাওয়াফের কথা বলা হয়েছে। বর্ণিত হয়েছে, 

‘আর আমার ঘরকে পবিত্র রাখবে তাওয়াফকারী, নামাজ কায়েমকারী ও রুকু-সিজদাকারীদের জন্য।’ (সূরা হজ, আয়াত : ২৬)

অন্য আয়াতে মহান আল্লাহ বলেন, ‘আর আমি ইবরাহিম ও ইসমাঈলকে দায়িত্ব দিয়েছিলাম যে তোমারা আমার ঘরকে তাওয়াফকারী, ইতিকাফকারী ও রুকু-সিজদাকারীদের জন্য পবিত্র করো।’ (সূরা বাকারা, আয়াত : ১২৫)

তাওয়াফের ফজিলত সম্পর্কে ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, বাইতুল্লাহর চারদিকে তাওয়াফ করা নামাজ আদায়ের অনুরূপ। তবে তোমরা এতে (তাওয়াফকালে) কথা বলতে পারো। সুতরাং তাওয়াফকালে যে ব্যক্তি কথা বলে সে যেন ভালো কথা বলে। (তিরমিজি, হাদিস : ৯৬০)

তাওয়াফের সময় যার যেটা মনে চায় একান্তভাবে আল্লাহ তায়ালার সামনে পেশ করতে পারে। তবে হজরত আতা রহ. বলেন, আবু হুরায়রা রা. আমার নিকট হাদিস বর্ণনা করেন যে, তিনি রাসূলুল্লাহ সা.–কে বলতে শুনেছেন,...যে ব্যক্তি সাতবার বায়তুল্লাহ তাওয়াফ করে এবং কোন কথা না বলে নিম্নোক্ত দোয়া পড়ে 

سُبْحَانَ اللّٰهِ وَالْحَمْدُ لِلّٰهِ وَلَا إِلٰهَ إِلَّا اللّٰهُ وَاللّٰهُ أَكْبَرُ وَلَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللّٰه

উচ্চারণ : সুবহানাল্লাহি ওয়াল হামদু লি-ল্লাহি ওয়ালা ইলাহা- ইল্লাল্লাহু, ওয়াল্লাহু আকবার, লা-হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ

তার দশটি গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে। তাকে দশটি নেকী দান করা হবে এবং তার মর্যাদা দশগুণ বর্ধিত করা হবে। আর যে ব্যক্তি তাওয়াফ করে এবং এ অবস্থায় কথা বলে, (উপরোক্ত জিকির করে বা অন্য কোনো মাসনুন জিকির করে।) সে তার দুই পা রহমতের মধ্যে ডুবিয়ে রাখে; যেমন কারো পা পানিতে ডুবিয়ে রাখে। (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস : ২৯৫৭)

হাদিসে উত্তম কথা ছাড়া কোনো কথা না বলতে নির্দেশ করা হয়েছে। তাছাড়া যেহেতু বিধানগতভাবে তাওয়াফও আংশিক নামাজের অন্তর্ভুক্ত তাই তাতে উত্তম কথা ব্যতিত (জিকির, তিলাওয়াত এবং সৎকাজের আদেশ এবং অসৎ কাজের নিষেধ ছাড়া) অন্য কোনো কাজ ও কথা বলা উচিত নয়। তবে তাওয়াফ শুরু করার সময় হাজরে আসওয়াদে চুমু খেয়ে বা ইশারা করে এই দোয়াটা পড়তে হয়- اللّٰهُ أَكْبَرُ

তাওয়াফের সময় রাসুল সা. এই দোয়াটাও পড়তেন-

اَللَّهُمَّ اِنِّىْ اَسْئَلُكَ الرَّاحَةَ عِنْدَ الْمَوْتِ وَ الْعَفْوَ عِنْدَ الْحِسَابِ

উচ্চারণ: ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকার রাহাতা ইংদাল মাওতি ওয়াল আফওয়া ইংদাল হিসাবি।’

অর্থ: ‘হে আল্লাহ! আমাকে আরামদায়ক মৃত্যু দান করেন এবং মৃত্যু পরবর্তী হিসাব থেকে ক্ষমা করেন।’

কাবা শরিফের বিভিন্ন স্থানের জন্য নির্ধারিত দোয়া থাকলেও এ দোয়াগুলোও করা যায়-

اَللَّهُمَّ قَنِّعْنِىْ بِمَا رَزَقْتَنِىْ وَ بَارَكْ لِىْ فِىْهِ وَاخْلُفْ علَى كُلِّ غَائِبَةٍ لِّىْ بِخَيْرٍ لَا اِلَهَ اِلَّا اللهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيْكَ لَهُ لَهُ الْمُلْكُ وَ لَهُ الْحَمْدُ وَ هُوَ عَلَى كُلِّ شَيئٍ قَدِيْرُ

উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা কিন্নিনি বিমা রাযাক্বতানি ওয়া বারাকলি ফিহি ওয়াখলুফ আলা কুল্লি গায়িবাতিললি বিখাইরন লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারিকা লাহু লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু ওয়া হুয়া আলা কুল্লি শাইয়িন ক্বাদির।

 اَللَّهُمَّ رَبَّ هَذَا الْبَيْتِ الْعَتِيقِ اَعْتِقْ رِقَابَنَا مَنَ النَّارِ وَ اَعِذْنَا مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّاجِيْمِ وَ بَارِكْ لَنَا فِيْمَا اَعْطَيْتَنَا اَللَّهُمَّ اجْعَلْنَا مِنْ اَكْرَمِ وَفْدِكَ عَلَيْكَ اَللَّهُمَّ لَكَ الْحَمْدُ عَلَى نَعْمَائِكَ وَ اَفْضَلُ صَلَاتِكَ عَلَى سَيِّدِ اَنْبِيَائِكَ وَ جَمِيْعِ رُسُلِكَ وَاَصْفِيَائِكَ وَ عَلَى اَلِهِ وَ صَحْبِهِ وَ اَوْلِيَائِكَ

উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা রাব্বা হাজাল বাইতিল আতিক্বি ইতিক্ব রিক্বাবানা মিনান নারি ওয়া আয়িজনা মিনাশ শায়ত্বানির রাঝিমি ওয়া বারিক লানা ফিমা আত্বায়তানা, আল্লাহুম্মাঝআলনা মিন আকরামি ওয়াফদিকা আলাইকা, আল্লাহুম্মা লাকাল হামদু আলা নিমায়িকা ওয়া আফদালু সালাতিকা আলা সায়্যিদি আম্বিয়ায়িকা ওয়া ঝামিয়ি রুসুলিকা ওয়া আসফিয়ায়িকা ওয়া আলা আলিহি ওয়া সাহবিহি ওয়া আওলিয়ায়িকা।

কাবা শরিফের তাওয়াফকারীদের জন্য নির্ধারিত স্থানগুলোতে পড়ার কিছু দোয়া

মুলতাজেমে পড়ার দোয়া

হাজরে আসওয়াদ ও কাবা শরিফে দরজা মধ্যবর্তী স্থান মুলতাজেম। এ স্থান অতিক্রম করার সময় পড়া-

اَللَّهُمَّ اِيْمَنًا بِكَ و تَصْدِيقًا بِكِتَابِكَ وَوَفَاءً بِعَهْدِكَ وَ اِتِّبَعًا لِسُنَّةِ نَبِيِّكَ مُحَمَّدٍ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَ سَلَّم

উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা ইমানান বিকা ওয়া তাসদিকান বি-কিতাবিকা ওয়া ওয়াফাআন বি-আহদিকা ওয়া ইত্তিবাআন লিসুন্নাতি নাবিয়্যিকা মুহাম্মাদিন সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।’

মাকামে ইবরাহিমে পড়ার দোয়া

মাকামে ইবরাহিম অতিক্রম করার সময় এ দোয়া পড়া-

اَللهُمَّ اِنَّ هَذَا الْبَيْتَ بَيْتُكَ وَالْحَرَامَ حَرَمُكَ وَالْاَمْنَ اَمْنُكَ وَ هَذَا مَقَامُ الْعَائِذِبِكَ مِنَ النَّارِ فَأَجِرْنِىْ مِنَ النَّارِ

উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা ইন্না হাজাল বাইতা বাইতুকা ওয়াল হারাম হারামুকা ওয়াল আমনা আমনুকা ওয়া হাজা মাক্বামুল আয়িজিবিকা মিনান নারি ফা আজিরনি মিনান নার।’

হাজরে আসওয়াদ এবং মাকামে ইবরাহীমের মাঝে দোয়া

اللَّهُمَّ قَنِعْنِي بِمَا رَزَقْتَنِي وَبَارِكْ لِي فِيهِ وَاخْلُفْ عَلَى كُلَّ غَائِبَةٍ لِي بِخَيْرٍ

অর্থাৎ, হে প্রভু! তুমি যে রিযিক (জীবিকা) আমাকে দান করিয়াছ, তাহাতেই আমাকে তুষ্ট রাখ এবং উহাতে বরকত দান কর এবং আমার প্রতিটি অনুপস্থিত বিষয়ক তুমি মঙ্গলের সহিত রক্ষণাবেক্ষণ কর।"

(আল-আদাবুল মুফরাদ, হাদীস নং: ৬৮৬, মুসান্নাফ ইবনু আবী শাইবাহ (উর্দু), হাদীস নং: ৩০২৪৮)

মিজাবে রহমতে পড়ার দোয়া

মিজাবে রহমত তথা রোকনে ইরাকি থেকে হাতিমে কাবা অতিক্রম করার সময় এ দোয়া পড়া-

اَللهُمَّ اَظِلَّنِىْ تَحْتَ ظِلِّ عَرْشِكَ يَوْمَ لَا ظِلَّ اِلّا ظِلُّكُ وَ لَا بَاقِىَ اِلَّا وَجْهُكَ وَاسْقِنِىْ مِنْ حَوْضِ نَبِيْكَ مُحَمَّدٍ شَرْبَةً هَنِيْئَةً لًّا اَظْمَأُ بَعْدَهَا اَبَدَا

উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা আজিল্লিনি তাহতা জিল্লি আরশিকা ইয়াওমা লা জিল্লা ওয়া লা বাক্বিয়া ইল্লা ওয়াঝহাকা ওয়া আসক্বিনি মিন হাওদি নাবিয়্যিকা মুহাম্মাদিন সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা শারবাতান হানিয়াতাল লা আজমাউ বাআদাহা আবাদা।’

রোকনে শামিতে পড়ার দোয়া

রোকনে শামি থেকে রোকনে ইয়ামেনির দিকে যাওয়ার সময় এ দোয়া পড়া-

اَللهُمَّ اِنِّىْ اَعُوْذُبِكَ مِنَ الشَّكِّ وَ الشِّرْكِ وَ الشِّقَاقِ وَ النِّفَاقِ وَ سُوْءِ الْاَجْلَاقِ وَ سُوْءِ الْمُنْقَلَبِ فِى الْاَهْلِ وَالْمَالِ وَ الْوَلَدِ

উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিনাশ শাক্কি, ওয়াশশিরকি, ওয়াশশিক্বাকি, ওয়াননিফাক্বি, ওয়া সুয়িল আখলাক্বি ওয়া সুয়িল মুনক্বালাবি ফিল আহলি ওয়াল মালি ওয়াল ওয়ালাদি।’

এরপর রোকনে ইয়ামেনিতে পৌঁছেই এ দোয়া পড়া-

اَللهُمَّ اِنِّىْ اَعُوْذُبِكَ مِنَ الْكُفْرِ وَ الْفَاقَةِ وَ مَوَاقِفِ الْخِزْىِ فِىْ الدُّنْيَا وَالْاَخِرَةِ

উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিনাল কুফরি ওয়াল ফাক্বাতি ওয়া মাওয়াক্বিফিল খিযয়ি ফিদ্দুনইয়া ওয়াল আখিরাহ।’

এরপর রোকনে ইয়ামেনি থেকে হাজরে আসওয়াদের দিকে যেতে যেতে এ দোয়া পড়া-

رَبَّنَا اَتِنَا فِى الدُّنْيَا حَسَنَةً وَّ فِى الْاَخِرَةِ حَسَنَةً وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ – وَاَدْخِلْنَا الْجَنَّةَ مَعَ الْاَبْرَارِ – يَا عَزِيْزُ يَا غَفَّارُ – يَا رَبَّ الْعَالَمِيْنَ

উচ্চারণ : ‘রাব্বানা আতিনা ফিদ্দুনইয়া হাসানাতাও ওয়া ফিল আখিরাতি হাসানাতাও ওয়াক্বিনা আঝাবান নার। ওয়া আদখিলনাল জান্নাতা মাআল আবরার। ইয়া আযিযু ইয়া গাফফার, ইয়া রাব্বাল আলামিন।’

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে বেশি বেশি নফল তাওয়াফ করার তাওফিক দান করুন। তাওয়াফের সময় মনের সব আকুতি পেশ করার তাওফিক দান করুন। আল্লাহর বিশেষ রহমতে নিজেদের রাঙিয়ে তোলার তাওফিক দান করুন। আমিন।

এমএইচ/


সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ