তিন দেশের চারটি সংগঠনকে সন্ত্রাসী তালিকাভুক্ত করতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর সংগঠনগুলোর নাম ঘোষণা করেছে, যা প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের বামপন্থি সহিংসতার আন্তর্জাতিক ঢেউ মোকাবিলার নতুন উদ্যোগের অংশ বলে জানা গেছে।
শুক্রবার (১৪ নভেম্বর) দ্য গার্ডিয়ান-এর এক প্রতিবেদনে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার প্রকাশিত বিবৃতিতে জানানো হয়—জার্মানির ইন্তেফা ওস্ট, ইতালিভিত্তিক ইন্টারন্যাশনাল রেভল্যুশনারি ফ্রন্ট, এবং গ্রিসের দুটি সংগঠন আর্মড প্রোলেটারিয়ান জাস্টিস ও রেভল্যুশনারি ক্লাস সেলফ-ডিফেন্স যুক্তরাষ্ট্রের নজরদারিতে রয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়, এসব গোষ্ঠী “পশ্চিমা সভ্যতার ভিত্তি দুর্বল করার লক্ষ্যে নৃশংস হামলা পরিচালনা করছে।”
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, সংগঠনগুলো সন্ত্রাসী তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হলে মার্কিন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আরও কঠোর নজরদারি, আর্থিক লেনদেন পর্যবেক্ষণ এবং বিশেষ আইনগত ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারবে। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের ভেতর যারা এসব গোষ্ঠীর সমর্থক বা সহানুভূতিশীল বলে বিবেচিত হবেন, তারাও একই ধরনের নজরদারির আওতায় পড়তে পারেন।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেন, এসব গোষ্ঠী বিপ্লবী অরাজকতাবাদী বা মার্কসবাদী মতাদর্শ অনুসরণ করে, যার মধ্যে রয়েছে অ্যান্টি-আমেরিকানিজম, অ্যান্টি-ক্যাপিটালিজম এবং অ্যান্টি-খ্রিস্টানিটি। তার দাবি, এই মতাদর্শ দেশ-বিদেশে সহিংস আক্রমণ উসকে দিতে ব্যবহৃত হয়। সন্ত্রাসী ঘোষণা চূড়ান্ত হলে মার্কিন নাগরিকদের জন্য এসব সংগঠন বা তাদের সদস্যদের সঙ্গে যে কোনো আর্থিক লেনদেন বেআইনি হবে।
তবে নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা এই সিদ্ধান্তের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তাদের মতে, ‘ইন্তেফা’ কোনো পূর্ণাঙ্গ সংগঠন নয়—এর কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব, সদস্যপদ বা কাঠামো নেই। গ্রিসের পিরেয়াস বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক নিরাপত্তাবিষয়ক ইমেরিটাস অধ্যাপক মেরি বোসিস বলেন, অ্যান্টিফাসিস্ট কর্মীদের সঙ্গে সশস্ত্র উগ্রপন্থি গোষ্ঠীগুলোর মিল খুঁজে পাওয়া “সম্পূর্ণ ভুল”।
তিনি দ্য গার্ডিয়ান-কে বলেন, গ্রিসে ইন্তেফা আন্দোলন কখনো সন্ত্রাসী কৌশল ব্যবহার করেনি; তারা নির্বাচনে অংশ নেয় এবং তাদের কার্যক্রমে সহিংসতার কোনো প্রমাণ নেই। ইউরোপের ইন্তেফা কর্মীদের অনলাইন বার্তাগুলোতেও সেই ধরনের ভাষা দেখা যায় না, যা ডানপন্থি উগ্র গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে প্রায়ই লক্ষ্য করা যায়।
তার মতে, মার্কিন রাজনীতিতে অতিরিক্ত রক্ষণশীলতার এই ঢেউ “অত্যন্ত দুঃখজনক”। তিনি বলেন, বিশ্বের জনগণকে ‘ভালো ডানপন্থি’ ও ‘খারাপ বামপন্থি’—এই দুটি ভাগে বিভক্ত করার প্রচেষ্টা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এটি তখনই অর্থবহ হয়, যখন কেউ মাঝারি-বাম বা প্রগতিশীলদের নাম কালিমালিপ্ত করতে চায়, যদিও তারা কখনো সহিংসতার পক্ষে নয়।
এনএইচ/