অফগানিস্তান ও পাকিস্তানের মধ্যে চলমান উত্তেজনা যেন কোনোভাবেই কমছে না। প্রতিবেশী এই দুই দেশের সম্পর্ক বর্তমানে একেবারে তলানিতে এসে ঠেকেছে। আর এই অস্থিরতার অন্যতম প্রধান কারণ পাকিস্তানের নিষিদ্ধ সশস্ত্র গোষ্ঠী তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান (টিটিপি)। বহু বছর আগে সন্ত্রাসী কার্যক্রমের জন্য সংগঠনটিকে নিষিদ্ধ করা হলেও তাদের তৎপরতা কমেনি; বরং আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠেছে। গোষ্ঠীটির লক্ষ্য—খাইবার পাখতুনখোয়াকে পাকিস্তানের সীমান্ত থেকে বিচ্ছিন্ন করে আফগানিস্তানের বর্তমান আদলে একটি কট্টর ইসলামপন্থি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা।
এ অবস্থায় দুই দেশের সীমান্ত সংঘাত বাণিজ্যিক সম্পর্ককে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। বারবার বাণিজ্যিক রুট বন্ধ করে দেওয়ার ফলে পাকিস্তানের ওপর নির্ভরতা কমাতে এবার কঠোর অবস্থান নিয়েছে আফগানিস্তান। দেশটি আনুষ্ঠানিকভাবে পাকিস্তানের সঙ্গে বাণিজ্য কমানোর সিদ্ধান্ত জানিয়েছে।
সীমান্তে বিকল্প বাণিজ্য রুট তৈরির কাজ এগিয়ে চলছে। আফগানিস্তানের অর্থনৈতিক বিষয়ক উপ-প্রধানমন্ত্রী মোল্লা আব্দুল গনি বারাদার সম্প্রতি ব্যবসায়ীদের নির্দেশ দিয়েছেন—পাকিস্তানের সঙ্গে বাণিজ্য সীমিত করতে হবে এবং পণ্য পরিবহনে বিকল্প রুট ব্যবহার করতে হবে। এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানান, পাকিস্তান বারবার বাণিজ্য পথ অবরোধ করায় দেশের মর্যাদা রক্ষার্থেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি এটি আফগান বাণিজ্য, শিল্প এবং জনগণের অধিকার সুরক্ষার জন্য অপরিহার্য বলে মন্তব্য করেন তিনি।
ব্যবসায়ীদের জানানো হয়েছে, পাকিস্তান থেকে বর্তমানে যেসব পণ্য আমদানি করা হচ্ছে, তা এখন থেকে অন্যান্য দেশ ও বিকল্প বাজার থেকে সংগ্রহ করতে হবে। বিশেষভাবে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে—সব ধরনের ওষুধপত্র বিকল্প সরবরাহকারী দেশ থেকে আমদানির ব্যবস্থা করতে হবে। এ ছাড়া নতুন বাণিজ্য রুট স্থাপনের জন্য তিন মাসের সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে। সময়সীমা শেষে অর্থ মন্ত্রণালয় পাকিস্তান থেকে আমদানি করা ওষুধের ওপর কোনো কর আরোপ করবে না এবং সেগুলো আমদানির অনুমতিও দেবে না।
১১ অক্টোবর থেকে সীমান্তে সংঘর্ষের কারণে একাধিক পয়েন্ট বন্ধ রয়েছে। উভয় পক্ষের হতাহতের ঘটনাও ঘটেছে। এই অবস্থায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন পাকিস্তানের ব্যবসায়ীরা। অল পাকিস্তান মার্কেটস ফেডারেশনের সভাপতি মালিক সোহনী এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, সীমান্ত বন্ধ থাকায় হাজার হাজার শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছেন এবং ব্যবসায়ী ও রাষ্ট্রীয় কোষাগার ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছে। তিনি বলেন, ফল, সবজি ও অন্যান্য কৃষিপণ্যবাহী শত শত ট্রাক সীমান্তে আটকা পড়েছে, যার একটি বড় অংশ ইতোমধ্যে নষ্ট হয়ে গেছে। ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, “বিশ্বের অনেক জায়গায়—এমনকি শত্রু দেশগুলোও—জনস্বার্থে বাণিজ্য পথ খোলা রাখে।”
প্রতিবেশী পাকিস্তানের সঙ্গে আফগানিস্তানের বাৎসরিক বাণিজ্য ১.৭ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি। আফগানিস্তান পাকিস্তান থেকে কৃষিজপণ্য, জ্বালানি, ওষুধসহ নানা নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য আমদানি করে, আর পাকিস্তান আমদানি করে আফগানিস্তানের ফল, সবজি, গমসহ বিভিন্ন খাদ্যপণ্য। বিশ্লেষকদের মতে, আফগানিস্তানের সাম্প্রতিক কঠোর অবস্থান ভবিষ্যতে দুই দেশের অর্থনীতি ও বাণিজ্য সম্পর্কে সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলতে পারে।
এনএইচ/