ভারতে ধর্মীয় পোশাকে বৈষম্যের শিকার হওয়া নিয়ে নতুন বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। দেশটির রাজধানী দিল্লির গুরু তেগ বাহাদুর (জিটিবি) হাসপাতালে বোরকা পরার কারণে এক মুসলিম নারীকে প্রবেশে বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
আর এটিকে কেন্দ্র করেই ভারতে ধর্মীয় বৈষম্য ও সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিয়ে আবারও শুরু হয়েছে বিতর্ক। গত সোমবার (১০ নভেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম মুসলিম মিরর।
সংবাদমাধ্যমটি বলছে, বোরকা পরে আসায় হাসপাতালে ঢুকতে না দেওয়ার এই ঘটনাটি ঘটেছে গত ৭ নভেম্বর। তাবাসসুম নামে ওই নারী বৈধ গেটপাস নিয়েই সদ্য সন্তান জন্ম দেওয়া তার ভাবিকে দেখতে হাসপাতালে গিয়েছিলেন। কিন্তু প্রবেশদ্বারে দায়িত্বে থাকা নারী নিরাপত্তারক্ষীরা তার বোরকা নিয়ে আপত্তি তোলেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া এক ভিডিওতে দেখা যায়, তাবাসসুম বলছেন— নিরাপত্তারক্ষীরা তাকে বলেন, “এই পোশাক পরে ভেতরে যাওয়া যাবে না”। তিনি নিয়ম দেখাতে বললে তারা কোনো ব্যাখ্যা না দিয়েই তার গেটপাস উপেক্ষা করেন এবং অন্যদের সহজেই প্রবেশ করতে দেন।
এই ঘটনায় তাবাসসুমের পরিবারের সদস্যরাও ক্ষোভ জানিয়েছেন। তার এক আত্মীয় বলেন, “এটা লজ্জাজনক। মুসলমানরা কি এখন অসুস্থ আত্মীয়কে দেখতে এলেও অপমানিত হবে?” তারা প্রশ্ন তোলেন, ধর্মীয় পোশাক পরার সাংবিধানিক অধিকারের প্রতি এমন অবজ্ঞা কেন?
জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়ার সমাজবিজ্ঞানী অধ্যাপক ইরফান আহমেদ ঘটনাটিকে “ক্রমবর্ধমান অসহিষ্ণুতার প্রতিচ্ছবি” বলে আখ্যা দিয়েছেন। তিনি বলেন, “প্রথমে স্কুল-কলেজ, এখন হাসপাতাল? সংখ্যালঘুরা এভাবেই নিত্যপ্রয়োজনীয় জায়গাগুলোতে অনিরাপদ বোধ করছে। এটা একেবারেই অগ্রহণযোগ্য।”
যদিও কিছু প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অতীতে চুরি বা নিরাপত্তাজনিত কারণে মাঝে মাঝে মুখ দেখানোর নিয়ম থাকতে পারে, তবে জিটিবি হাসপাতালে বোরকা পরা নিষিদ্ধ নয়। অনেকের মতে, এটি ছিল স্পষ্ট ইসলামবিদ্বেষ, কোনো নিরাপত্তা প্রোটোকল নয়।
এদিকে এই ঘটনার বিষয়ে দিল্লির গুরু তেগ বাহাদুর (জিটিবি) হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এখনও কোনো বিবৃতি দেয়নি। তবে মানবাধিকারকর্মীরা ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত ও সরকারি হাসপাতালগুলোতে বৈষম্য রোধে কঠোর নীতিমালা তৈরির দাবি করেছেন।
এলএইস/