বিশেষ প্রতিনিধি
আওয়ামী লীগের শাসনামলের পুরো ১৫ বছর কোণঠাসা অবস্থায় ছিল জামায়াতে ইসলামী। মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার, নেতাদের ফাঁসি, জেল-জুলুমের মুখে দলটি অনেকটা অস্তিত্ব সংকটে পড়ে যায়। তবে শত প্রতিকূলতা সত্ত্বেও জামায়াতে ইসলামী সাংগঠনিক ভিত্তি ধরে রাখে। গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর যেন নতুন জীবন পেয়েছে জামায়াতে ইসলামী। গত ১১ মাস ধরে সারাদেশ চষে বেড়াচ্ছেন দলটির নেতারা। সাংগঠনিকভাবে ১৫ বছরের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছেন তারা। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে জামায়াত রাজনীতির ময়দানে নতুন শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হওয়ার চেষ্টা করছে। আওয়ামী লীগের অনুপস্থিতিতে বিএনপির বিপরীতে স্বতন্ত্র বলয় গড়ে তুলতে চাচ্ছে।
জামায়াত এবার নিজেদের শক্তির জানান দিতে যাচ্ছে। আগামীকাল শনিবার (১৯ জুলাই) রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জাতীয় সমাবেশের ডাক দিয়েছে দলটি। সাত দফা দাবিতে আয়োজিত এই সমাবেশে জামায়াত চায় তাদের পুরো শক্তির জানান দিতে। আগামী নির্বাচনে জামায়াত একটি ফ্যাক্টর- সমাবেশ থেকে এই বার্তা দিতে চায় দলটি। এছাড়া বিএনপির বাইরে ইসলামি ও ডানপন্থী বেশ কয়েকটি দল নিয়ে এক বৃহৎ ঐক্যের ডাকও দেওয়া হতে পারে এই সমাবেশ থেকে।
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অন্য দলগুলো বিভিন্ন সময় বড় বড় সমাবেশ করলেও জামায়াতে ইসলামী প্রথমবারের মতো সমাবেশ করতে যাচ্ছে। কারণ দলটি গত ১৫ বছর রাজধানীতে বড় কোনো সমাবেশ করতে পারেনি। এর আগে দলটি যখন রাজনীতির মাঠে সক্রিয় ছিল তখন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ হতো না। এজন্য ঐতিহাসিক এই উদ্যানের সমাবেশে রেকর্ড গড়তে চায় জামায়াতে ইসলামী। দলটি আশা করছে, ১০ লাখের বেশি জনসমাগম হবে তাদের এই সমাবেশে।
সেভাবেই প্রস্তুতি নিয়েছে দলটি। সারাদেশ থেকে নেতাকর্মী ও সমর্থকদের জড়ো করার প্রস্তুতিও সেরেছে জামায়াত।
আগামীকাল শনিবার (১৯ জুলাই) দুপুর ২টায় সাত দফা দাবিতে ডাক দেওয়া হয়েছে এই জাতীয় সমাবেশের। ইতোমধ্যে জোরেশোরে চালানো হচ্ছে প্রচার। রাজধানীসহ সারাদেশের মহানগর, জেলা-উপজেলা, এমনকি পাড়া-মহল্লাতেও চলছে প্রচার-প্রচারণা। হচ্ছে প্রচার মিছিল ও সমাবেশ। এই সমাবেশে কমপক্ষে ১০ লাখ লোক সমাগমের আশা করছে দলটি। আবহাওয়া ভালো থাকলে এই সমাগম আরও বাড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। জনসমাগম সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ছাড়িয়ে আশপাশের এলাকায় ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এজন্য বিভিন্ন এলাকায় ডিজিটাল ডিসপ্লে বসানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
জামায়াতের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সাত দফা দাবিতে ডাক দেওয়া হয়েছে জাতীয় সমাবেশের। দাবিগুলো হলো- ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ও অন্যান্য সময় সংঘটিত সকল গণহত্যার বিচার করতে হবে, রাষ্ট্রের সব স্তরে প্রয়োজনীয় মৌলিক সংস্কার করতে হবে, ঐতিহাসিক জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্রের পূর্ণ বাস্তবায়ন করতে হবে, জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদ ও আহতদের পরিবারের পুনর্বাসন করতে হবে, জনগণের প্রকৃত মতামতের প্রতিফলন ঘটাতে পিআর (প্রোপোরশনাল রিপ্রেজেন্টেশন) পদ্ধতিতে জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করতে হবে, প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করার জন্য সুনির্দিষ্ট ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে এবং রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীদের জন্য সমান সুযোগ ও ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ নিশ্চিত করতে হবে।
জানা গেছে, সমাবেশ থেকে ইসলামি, ডানপন্থী ও সমমনা দলগুলো মিলে একটি বৃহৎ ঐক্যের ঘোষণা আসতে পারে। ইতোমধ্যে এসব দলকে দাওয়াত দেওয়া হয়েছে। জামায়াত আশা করছে, বৃহৎ জোটে অংশ নেওয়া দলগুলোর নেতারা তাদের সমাবেশে অংশ নেবেন।
জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল অ্যাডভোকেট এহসান মাহবুব জুবায়ের বলেন, সমাবেশকে ঘিরে আমাদের প্রস্তুতি পুরোদমে চলছে। সারাদেশেই আলোড়ন তৈরি হয়েছে। সেদিন লাখ লাখ লোকের সমাগম হবে। আমরা তো আশা করছি ইতিহাসের সর্বোচ্চ উপস্থিতি থাকবে জাতীয় সমাবেশে। এখন পর্যন্ত বিপুল সাড়া পাচ্ছি। শুধু ১০ হাজারের মতো বাস আসবে। এছাড়া, ট্রেন, লঞ্চ তো আছেই। আশা করছি ১০ লাখের বেশি জনসমাগম হবে।
এদিকে সমাবেশ উপলক্ষে সারাদেশে প্রায় ১০ হাজার বাস রিজার্ভ করা হয়েছে। চট্টগ্রাম, রাজশাহী, সিরাজগঞ্জ ও ময়মনসিংহ থেকে ভাড়া করা হয়েছে স্পেশাল ট্রেন। লঞ্চ বুকিং দেওয়া হয়েয়ে নৌ রুটেও। এছাড়াও যাদের আত্মীয়-স্বজন ঢাকায় রয়েছে তারা দু-একদিন আগেই ঢাকায় আসবেন বলে জানা গেছে। এতে সমাবেশকে ঘিরে এক ধরনের উৎসব আমেজ লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ছাত্র-জনতার বহু ত্যাগ-তিতিক্ষার বিনিময়ে অর্জিত ২০২৪ এর গণঅভ্যুত্থান জাতীয় জীবনে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। জুলাই-আগস্টের জনআকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়ন এবং জীবন উৎসর্গকারী ছাত্র-জনতার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে দেশে সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক ধারা ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী এই সমাবেশের আয়োজন করেছে। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার অভিযাত্রায় অনুপ্রাণিত হয়ে দেশপ্রেমিক জনগণকে ব্যাপকভাবে জামায়াতে ইসলামীর জাতীয় সমাবেশে অংশগ্রহণ করার জন্য আমরা সংগঠনের সর্বস্তরের জনশক্তি ও দেশবাসীর প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি।
এসএকে/