শনিবার, ২৪ মে ২০২৫ ।। ১০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ ।। ২৬ জিলকদ ১৪৪৬


‘একটি মশা আনো’- শব্দের পেছনে গা শিউরে ওঠার মতো বর্বরতা


নিউজ ডেস্ক

নিউজ ডেস্ক
শেয়ার
ছবি: সংগৃহীত

‘একটি মশা আনো’ ইসরায়েলি সেনার ব্যবহৃত এই নিরীহ বাক্যটির পেছনে লুকিয়ে রয়েছে গা শিউরে ওঠা এক ভয়াবহতার গল্প।

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় চলমান যুদ্ধের সময় এটি একটি কোডনেম হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে, যার মাধ্যমে ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিকদের মানবঢাল হিসেবে ব্যবহারের নির্দেশ দেওয়া হয়।

বার্তাসংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (এপি) জানায়, ইসরায়েলি সেনাদের দুই সদস্য এবং একাধিক প্রত্যক্ষদর্শীর বরাত দিয়ে জানা গেছে, ‘একটি মশা আনো’ কথাটির মাধ্যমে কোনো ফিলিস্তিনিকে ধরে আনার নির্দেশ দেওয়া হতো, যাকে পরে অভিযানে মানববর্ম হিসেবে ব্যবহার করা হতো।

সেনারা সেই ফিলিস্তিনিকে সামনে পাঠিয়ে নিজেরা পেছনে থেকে ভবন, সুড়ঙ্গ বা ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় অভিযান চালাত। হামাসের হামলা বা পুঁতে রাখা বিস্ফোরক থাকলে, তা প্রথমে ওই বন্দির ওপরই আঘাত হানত।

আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন অনুযায়ী, বেসামরিক নাগরিকদের কোনো সামরিক কর্মকাণ্ডে ব্যবহার করা সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ। কিন্তু ইসরায়েলি বাহিনী বহুদিন ধরেই গাজা ও পশ্চিমতীরে এই কৌশল অবলম্বন করছে বলে অভিযোগ রয়েছে। তবে ২০২৩ সালের অক্টোবরের পর এই পদ্ধতির ব্যবহার বহুগুণে বেড়ে যায়।

ইসরায়েলি মানবাধিকার সংস্থা ‘ব্রেকিং দ্য সাইলেন্স’-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এক সেনা সদস্য জানান, গাজায় ৯ মাস দায়িত্ব পালনের সময় তিনি নিজে এই মানবঢাল কৌশল বহুবার ব্যবহার হতে দেখেছেন। এমনকি সেনাবাহিনীর রেডিও বার্তায় ‘একটি মশা আনো’ বলা হলে সেনারা বুঝে যেত কী করতে হবে- রাস্তা থেকে একজন ফিলিস্তিনিকে ধরে এনে সামরিক কাজে ব্যবহার।

এপি-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে আরও এক সেনা বলেন, একবার একটি ইউনিট এক ফিলিস্তিনিকে ধরে এনে একটি বাড়িতে প্রবেশ করায়, যেখানে আরেকটি ইসরায়েলি ইউনিট অবস্থান করছিল। ভুলবশত তারা তাকে হামাসের যোদ্ধা মনে করে গুলি করে হত্যা করে।

পরে একজন সেনা কর্মকর্তা পরামর্শ দেন, ভবিষ্যতে যাদের মানবঢাল হিসেবে ব্যবহার করা হবে, তাদের ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর পোশাক পরিয়ে দেওয়া উচিত।

সাক্ষাৎকারদাতারা দাবি করেন, উচ্চপর্যায়ের সেনা কর্মকর্তারাও এই কৌশলের ব্যাপারে অবহিত ছিলেন। ২০২৪ সালের এক বৈঠকে একজন ব্রিগেড কমান্ডার স্পষ্টভাবে বলেন, ফিলিস্তিনিদের রাস্তা থেকে ধরে এনে অভিযানে ব্যবহার করা হবে।

এপির প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) এই অভিযোগ সম্পর্কে জানার কথা স্বীকার করেছে এবং বলেছে, বেসামরিকদের জোরপূর্বক সামরিক অভিযানে যুক্ত করার বিষয়টি আইনি বাধার মধ্যে পড়ে। তারা জানায়, এসব অভিযোগ তদন্ত করা হচ্ছে, তবে তদন্তের বিস্তারিত প্রকাশ করা হবে না।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ইসরায়েলি সেনারা ফিলিস্তিনিদের ‘মশা’, ‘ভিমরুল’ ইত্যাদি অপমানজনক নামে ডাকে, যা তাদের প্রতি বিদ্বেষ ও অবমাননার বহিঃপ্রকাশ।

উল্লেখ্য, ‘একটি মশা আনো’-এই বাক্যটি কেবল একটি নির্দেশ নয়, বরং তা ফিলিস্তিনিদের মানবাধিকার হরণের এক প্রতীক হয়ে উঠেছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে এ ঘটনাগুলো আরও একবার স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে, গাজার যুদ্ধ শুধু রাজনৈতিক বা সামরিক নয়, এটি এক ভয়ংকর মানবিক সংকটও।

এসএকে/


সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ