মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করুন’ শ্লোগানে কুমিল্লা জেলাধীন মুরাদনগর উপজেলার পাহাড়পুর ইউনিয়ন ওলামা পরিষদের উদ্যোগে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) বেলা ৪ টায় পাহাড়পুর ইউনিয়ন পান্তি বাজারে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ কর্মসূচির আয়োজন করে পাহাড়পুর ইউনিয়ন ওলামা পরিষদ।
মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তারা বলেন, মাদক একটি ভয়ঙ্কর সামাজিক ব্যাধি। এটি তরুণ সমাজকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। আর এখনই যদি কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়া হয় তবে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম অন্ধকারে নিমজ্জিত হবে। আর তাই, পারিবারিক ও সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি করে নতুন প্রজন্মকে মাদকের ভয়াবহ ছোবল থেকে রক্ষা করার লক্ষ্যেই এই মানববন্ধন কর্মসূচির আয়োজন করা হয় বলে জানান বক্তারা। এ সময় সরকারকে মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করে মাদক ব্যবসায়ীদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করার জোর দাবি জানানো হয় মানববন্ধন থেকে।
বক্তারা আরও বলেন মাদক সেবনে মানুষের শারীরিক ক্ষতি হলো মাদকের ক্ষতিকর দিক শুধু মস্তিষ্কের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে না, বরং শরীরের প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে বিরূপ প্রতিক্রিয়া ফেলে। ধোঁয়া ও ক্ষতিকর রাসায়নিকের সংস্পর্শের কারণে আমাদের ফুসফুস ক্ষতিগ্রস্ত হয়। হৃৎপিণ্ডের উপর চাপ বৃদ্ধি পায়, বাড়ে উচ্চরক্তচাপ ও হৃদরোগের ঝুঁকি।এমন কি মাদকের বিষাক্ত প্রভাবের কারণে লিভার ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কিডনিও বাদ যায় না এই ধ্বংসলীলার হাত থেকে।
দীর্ঘমেয়াদী মাদকাসক্তির ফলে দেখা দেয় ক্যান্সার, এইডস, যক্ষ্মার মতো ভয়াবহ রোগ।শুধু শারীরিক ক্ষতিই নয়, মাদক মানসিক বিকারও ডেকে আনে। বিষণ্ণতা, উদ্বেগ, স্মৃতিশক্তি হ্রাস, মনোযোগের অভাব – এসব সমস্যা দেখা দেয় মাদকাসক্তদের মধ্যে। নষ্ট হয় পারিবারিক ও সামাজিক জীবন।
মাদক সেবনে মানসিক ক্ষতি হলো, মস্তিষ্ককে বিকৃত করা এবং অসংখ্য মানসিক সমস্যা সৃষ্টি করা। বিষণ্ণতা, উদ্বেগ, ভয়, হতাশা – এই নেতিবাচক আবেগের জালে আবদ্ধ হয়ে পড়ে মাদকাসক্তরা। স্মৃতিশক্তি লুণ্ঠিত হয়, মনোযোগ ধরে রাখা হয় দুষ্কর। ঘুমের ব্যাঘাত, বিভ্রম, এমনকি মনোবিকারও দেখা দিতে পারে। মাদকাসক্তদের মনে আত্মহত্যার চিন্তা বারবার ঘুরে বেড়ায়। ক্রমবর্ধমান হতাশা, অসহায়ত্ববোধ এবং ভবিষ্যতের প্রতি অনিশ্চয়তা তাদেরকে ঠেলে দেয় এই অন্ধকার পথের দিকে। মনে রাখবেন, মাদকাসক্তি কেবল ব্যক্তির ক্ষতি করে না, ভেঙে পড়ে তার পরিবার, বন্ধুবান্ধব, সমস্ত সম্পর্ক।
মাদক সেবনে সামাজিক ক্ষতি হলো মাদকাসক্ত ব্যক্তির পরিবারে নেমে আসে অশান্তির ঝড়। নেশার টানে ব্যক্তি হয়ে ওঠে চঞ্চল, উত্তেজিত, এমনকি সহিংস। পরিবারের সদস্যদের সাথে বাদানুবাদ, ঝগড়া-বিবাদ তাদের নিয়মিত ঘটনা হয়ে দাঁড়ায়। তাদের মধ্যে আর্থিক সংকট দেখা দেয়, কারণ নেশার জন্য অর্থ সংগ্রহ করতে অনেকে বেছে নেয় অসৎ পথ। পরিবারের সদস্যদের মানসিক শান্তি নষ্ট হয়, সৃষ্টি হয় অবিশ্বাস ও ঘৃণার পরিবেশ।মাদকাসক্ত ব্যক্তি সমাজের কাছে হয়ে ওঠে অবাঞ্ছিত। তারা হারিয়ে ফেলে কর্মক্ষমতা, সৃষ্টি করে অসামাজিক পরিবেশের। সমাজের উন্নয়নে তাদের অবদান থাকে না। বরং, বেড়ে যায় অপরাধপ্রবণতা, নষ্ট হয় সমাজের সুশৃঙ্খলা। মাদকাসক্তদের কারণে ছোটরাও বিপদে চলে যায়, নষ্ট হয় তাদের ভবিষ্যৎ।
ঘন্টা ব্যাপী মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন পাহাড়পুর ইউনিয়ন ওলামা পরিষদের সভাপতি মুফতি কামরুজ্জামান পাহাড়পুরী, সিনিয়র সহ-সভাপতি হাফেজ ক্বারী মনিরুজ্জামান পাহাড়পুরী, সহ-সভাপতি মাওলানা ইকবাল হোসাইন পাহাড়পুরী,মাওলানা ফয়জুল্লাহ ,মাওলানা ফয়জুল্লাহ ফাইয়াজ ,সেক্রেটারি মুফতি শামসুল হক, যুগ্মসাধারণ সম্পাদক মুফতি আহমদ ফায়েজ, সহ-সাধারণ সম্পাদক মুফতি কামরুল হাসান, সাংগঠনিক সম্পাদক মুফতি আব্দুল কাদের ,অর্থ সম্পাদক মাওলানা সালিমুল্লাহ, সহ- অর্থ সম্পাদক মাওলানা নাজমুল হাসান,প্রচার সম্পাদক মাওলানা নিজামুদ্দিন পাহাড়পুরী ও সহ-প্রচার সম্পাদক মাওলানা রাসেল আহমেদ প্রমুখ।
এমএম/