রবিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৫ ।। ১ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ ।। ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৭

শিরোনাম :
আগুন-ককটেল হামলাকারীকে গুলির নির্দেশ ডিএমপি কমিশনারের রূপসায় হাতপাখার গণসংযোগে ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠন করতে দেওয়া হবে না : নেতানিয়াহু বিশ্ব অপরিণত নবজাতক দিবস ২০২৫: জীবন রক্ষায় সচেতনতার নতুন অঙ্গীকার মাওলানা ফজলুর রহমানের সিলেট আগমন উপলক্ষে ইস্তেকবাল প্রস্তুতি চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বাস–ট্রাকের সংঘর্ষে নিহত ৪ সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য ইসিকে ইসলামী আন্দোলনের ১২টি প্রস্তাবনা অপরাধ কমাতে প্রয়োজন সঠিক ধর্মীয় শিক্ষা: ড. এম এ কাইয়ুম জমিয়তের সুধী সমাবেশ মঙ্গলবার, প্রধান অতিথি মাওলানা ফজলুর রহমান মারকাযু দিরাসাতিল ইকতিসাদিল ইসলামী পরিদর্শনে মুফতি তাকী উসমানীর সাহেবজাদা

‘ফাতাওয়ায়ে দারুল উলুম দেওবন্দ’ কীভাবে সংকলিত হয়, কেন গুরুত্বপূর্ণ

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

বিশেষ প্রতিনিধি

ইসলামিক ফাউন্ডেশন থেকে ফাতাওয়ায়ে দারুল উলুম দেওবন্দ অনুবাদ করার ঘোষণা দেওয়ার পর থেকে ব্যাপক আলোচনায় এসেছে ফাতাওয়াগ্রন্থটি। ইফা’র এই উদ্যোগটিকে স্বাগত জানিয়েছে সব মহল। সন্তোষ প্রকাশ করেছেন আলেম-উলামারা ও দীনদার মানুষেরা। তারা বলছেন, এমন একটি বিশুদ্ধ ফতোয়া সিরিজ অনূদিত হলে বাংলা ভাষার পাঠকেরা ব্যাপক উপকৃত হবে।

বিশ্ববিখ্যাত দীনি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দারুল উলুম দেওবন্দ থেকে প্রকাশিত ফতোয়াগ্রন্থটিতে প্রতিষ্ঠানটির সাবেক প্রধান মুফতি আজিজুর রহমান উসমানী রহ. প্রদত্ত ফতোয়াগুলো সংকলন করা হয়েছে। ২০০৫ সাল পর্যন্ত গ্রন্থটির মোট ১৮ খণ্ড প্রকাশিত হয়েছে। ইসলামিক ফাউন্ডেশন থেকে মোট ২৭ খণ্ডে এটি বঙ্গানুবাদ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

আজিজুর রহমান উসমানি রহ.-এর ফতোয়াগুলো বিভিন্ন পর্যায়ে সংকলিত হয়েছে। প্রথম পর্যায়ে, তাঁর ফতোয়াগুলো মুফতি শফি উসমানি রহ. দ্বারা সংকলিত হয়। যা ১৯৩৮ সালে ৮ খণ্ডে 'আজিজুল ফাতাওয়া' শিরোনামে প্রকাশিত হয়। পরে ৭৫৪ পৃষ্ঠার এক খণ্ডে ১৪৯১টি ফতোয়া সংকলিত হয়, যা ১৯১১ থেকে ১৯১৬ পর্যন্ত প্রদান করা হয়েছিল।

দ্বিতীয় পর্যায়ে, ১৯৭০-এর দশকে তার ফতোয়া সংকলনের দায়িত্ব দেওয়া হয় জাফিরুদ্দিন মিফতাহি রহ.কে। মিফতাহি ফিকহি ক্রমে মোট ১২টি খণ্ডে তার ফতোয়া সংকলন করেন। যার প্রথম খণ্ড প্রকাশিত হয় ১৩৮২ হিজরিতে। তিনি এই সংকলনের নাম দেন ‘ফাতাওয়ায়ে দারুল উলুম দেওবন্দ’।

এটি আধুনিক ভারতের অন্যতম অগ্রগামী এবং সবচেয়ে জনপ্রিয় ফতোয়া সংগ্রহ। এই সংগ্রহের মধ্যে রয়েছে ঈমানের অধ্যায়, তাহারাত (পরিচ্ছন্নতা), সালাহ (নামাজ), সাওম (রোজা), জাকাত (ফরজ দান), হজ (মক্কা তীর্থযাত্রা), নিকাহ (বিবাহ), তালাক ইত্যাদি।

তৃতীয় পর্বে ২০০৫ সালে এই সংকলনে আরও ছয়টি খণ্ড যুক্ত করেন মুহাম্মদ আমিন পালনপুরি। এইভাবে সমস্ত খণ্ড ১৮ পর্যন্ত পৌঁছেছে। এই সম্পূর্ণ সংগ্রহটি 'ফাতাওয়ায়ে দারুল উলুম দেওবন্দ' নামে পরিচিত এবং এটি শুধু আজিজুর রহমান উসমানি রহ. কর্তৃক জারি করা নির্বাচিত ফতোয়ার সংগ্রহ।

‘ফাতাওয়ায়ে দারুল উলুম দেওবন্দ’ গ্রন্থ বাংলায় অনুবাদের সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। এটি মোট ২৭ খণ্ডে অনূদিত হবে বলে জানিয়েছেন ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন।

গত ২৮ এপ্রিল রাজধানীর আগারগাঁওয়ে ইসলামিক ফাউন্ডেশন মিলনায়তনে আয়োজিত এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

ফতোয়াগ্রন্থটির গুরুত্ব তুলে ধরে ধর্ম উপদেষ্টা বলেন, ‘অনুবাদ কাজটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও সংবেদনশীল। এক্ষেত্রে আক্ষরিক অনুবাদের পরিবর্তে যথার্থতা ও সময়োপযোগিতা নিশ্চিত করতে হবে। বাংলা ভাষায় ফাতাওয়া দারুল উলুম দেওবন্দের প্রাঞ্জল অনুবাদ দেশের ধর্মপ্রাণ মুসলিমদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা হিসেবে কাজ করবে।

ড. খালিদ বলেন, ইসলামিক ফাউন্ডেশন সবসময় গবেষণা ও প্রকাশনার মানোন্নয়নে সচেষ্ট। এই প্রকল্পের মাধ্যমে বাংলাদেশের ইসলামিক জ্ঞানভাণ্ডার সমৃদ্ধ হবে এবং বিশ্ব দরবারে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হবে।

অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, ফাতাওয়া দারুল উলুম দেওবন্দ শুধু ফিকহি জ্ঞানের সংকলন নয়; এটি মুসলিম সমাজের জীবনব্যবস্থা ও সংস্কৃতির গুরুত্বপূর্ণ দলিল। তাই অনুবাদের ক্ষেত্রে ভাষাগত উৎকর্ষ ও বিষয়বস্তুর মৌলিকতা রক্ষার ওপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া উচিত।

সেমিনারে সিদ্ধান্ত হয় যে, অনুবাদকদের নির্বাচন প্রক্রিয়ায় বিশেষ যোগ্যতার বিবেচনা করা হবে। অনুবাদকদের ইসলামি জ্ঞানে সুদৃঢ় পটভূমি ও ভাষাগত দক্ষতা থাকতে হবে। একই সঙ্গে নিরীক্ষক দলের মাধ্যমে প্রতিটি খণ্ডের অনুবাদ যাচাই ও সম্পাদনা করা হবে যাতে সঠিক ব্যাখ্যা এবং প্রাসঙ্গিকতা বজায় থাকে।

অনুষ্ঠানে অনুবাদের সময়কাল, বাজেট ও কার্যপরিকল্পনা সম্পর্কেও প্রাথমিক আলোচনা হয়। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক জানান, প্রকল্পটি তিন বছরের মধ্যে সম্পন্ন করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। অনুবাদের পাশাপাশি প্রতিটি খণ্ডে ব্যাখ্যামূলক টিকা সংযোজনেরও প্রস্তাব করা হয়।

সেমিনার শেষে দেশ বরেণ্য আলেম, গবেষক ও অনুবাদকদের মতামতের ভিত্তিতে একটি কর্মপরিকল্পনা চূড়ান্ত করা হয়। সবাই আশা প্রকাশ করেন যে, এই অনুবাদ কর্মসূচি ইসলামি শিক্ষা ও গবেষণায় নতুন মাত্রা যোগ করবে এবং সাধারণ মানুষের কাছে ইসলামের গভীর জ্ঞান সহজবোধ্য ভাষায় পৌঁছে দেবে।


সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ