সোমবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৫ ।। ১ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ ।। ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৭

শিরোনাম :
আগুন-ককটেল হামলাকারীকে গুলির নির্দেশ ডিএমপি কমিশনারের রূপসায় হাতপাখার গণসংযোগে ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠন করতে দেওয়া হবে না : নেতানিয়াহু বিশ্ব অপরিণত নবজাতক দিবস ২০২৫: জীবন রক্ষায় সচেতনতার নতুন অঙ্গীকার মাওলানা ফজলুর রহমানের সিলেট আগমন উপলক্ষে ইস্তেকবাল প্রস্তুতি চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বাস–ট্রাকের সংঘর্ষে নিহত ৪ সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য ইসিকে ইসলামী আন্দোলনের ১২টি প্রস্তাবনা অপরাধ কমাতে প্রয়োজন সঠিক ধর্মীয় শিক্ষা: ড. এম এ কাইয়ুম জমিয়তের সুধী সমাবেশ মঙ্গলবার, প্রধান অতিথি মাওলানা ফজলুর রহমান মারকাযু দিরাসাতিল ইকতিসাদিল ইসলামী পরিদর্শনে মুফতি তাকী উসমানীর সাহেবজাদা

ইজতেমা সারাদেশে দ্বীনি আবহাওয়া তৈরী করে: মাওলানা লিয়াকত আলী

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

গাজীপুরের টঙ্গী তুরাগ তীরে চলছে দাওয়াত ও তাবলিগ জামাত শূরায়ি নেজামের ৫৮তম বিশ্ব ইজতেমা। সারা বিশ্বের ৭২টি দেশ হতে এবার টঙ্গী ময়দানে মুসল্লিদের সমাগম হয়েছে। বয়ান, তালীম, মুজাকারা ও ইবাদতে কাটছে তাদের সময়। তাবলিগ ও বিশ্ব ইজতেমার নানা বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন রাজধানীর মাদরাসা দারুর রাশাদের শিক্ষা সচিব, সিনিয়র মুহাদ্দিস ও দৈনিক ‘নয়া দিগন্তের’ সিনিয়র সহ সম্পাদক মাওলানা লিয়াকত আলী। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মিযানুর রহমান জামীল


আওয়ার ইসলাম: আপনার জীবনে তাবলিগ সংক্রান্ত সর্ব প্রথম অনুভূতিটা কেমন ছিল?

মাওলানা লিয়াকত আলী: আমি প্রথম যখন তবলিগে গিয়েছি তখন তো স্কুলের ছাত্র ছিলাম। আমাদের বাড়ির পাশের মসজিদে ছিলেন কারী নূরুল ইসলাম সাহেব। ওনার বাড়ি ছিল চাঁদপুর হাজীগঞ্জ, ভাল এবং বিখ্যাত কারী ছিলেন। এছাড়াও উজানীর ছাত্র এবং আমলওয়ালা মানুষ ছিলেন। আরেকজন ছিলেন মাওলানা মুফিজুল ইসলাম তিনি চট্টগ্রামের এবং আমাদের পাশের আলিয়া মাদরাসার উস্তাদ ছিলেন। তাঁরা তাবলিগের প্রতি খুব আকৃষ্ট ছিলেন। আর আমাদেরকে নিয়ে যেতেন দাওয়াতের কাজে। তখন তো তাবলিগ বুঝার যোগ্যতা হয়নি। তাবলিগের সাথে জড়িত হওয়ার কারণে তারা আমাদেরকে আমল আখলাকের প্রতি উদ্বুদ্ধ করেছেন। কীভাবে সূরা-কেরাত ও নামাজ পড়তে হয় আমাদেরকে সে ট্রেনিংও দিয়েছেন। এর ফলে আমার মতো অনেকে নামাজ কালামে অভ্যস্ত হয়েছে। তারপর আমাদের আলিয়া মাদরাসার ছাত্র যারা, তারাও এদিকে মাশাআল্লাহ অনেক অগ্রসর হয়েছে।

আওয়ার ইসলাম: কত সালের কথা বলছেন?

মাওলানা লিয়াকত আলী: তখন তো আমরা ক্লাস সিক্সে পড়ি। ১৯৭৫ সালের দিকে হবে। 

আওয়ার ইসলাম: দাওয়াত দ্বারা মানুষের কোন অবস্থানে সর্বাধিক পরিবর্তন সাধিত হয়েছে ?

মাওলানা লিয়াকত আলী : দাওয়াতের আসল উদ্দেশ্য হচ্ছে মুসলমানদের মধ্যে আমলের আগ্রহ সৃষ্টি করা। যারা নামকা ওয়াস্তে মুসলমান কিন্তু আমল নেই, কিংবা ইসলামের মৌলিক বিষয় সম্পর্কে তাদের কোনো ধারণাই নেই; তাদের মধ্যে এই অনুভূতিটা জাগানো সব চাইতে বড় কাজ। মুসলমান হলে কিছু আমল করতে হয়, ঈমান সহিহ করতে হয়, ঈমান শিখতে হয়। এই অনুভূতিটা তাদের জাগানো হয়। এটাই সব চেয়ে বড় কাজ। তাবলিগে যে কথা বলা হয়ে থাকে ফাজায়েলে এলেম এবং তালিম, এখানে ফাজায়েলে ইলম দ্বারা উৎসাহ দেয়া হয় আর মাসায়েল শেখার জন্য আলেমদের কাছে যেতে বলা হয়। তখন মানুষের মধ্যে একটা চেতনা সৃষ্টি হয়। আমি যেহেতু মুসলমান আমার ঈমান-আমল কালিমা নামাজ সহিহ করতে হবে। এই হচ্ছে সব চেয়ে বড় পরিবর্তন।

আওয়ার ইসলাম: মারকাজে বয়ানকারীদের নাম উল্লেখ করা হয় না কেন?

মাওলানা লিয়াকত আলী: উল্লেখ না করার একটা বড় কারণ হচ্ছে ইখলাসের। বক্তা যেন নিজের নাম প্রচার করতে না চায়। আর শ্রোতারা যেন শুধু কে বয়ান করছেন সে দিকে খেয়াল না করে কী বলা হচ্ছে সে দিকে খেয়াল করে। মানুষ বক্তার প্রতি আগ্রহী হয় ঠিকই কিন্তু এ কথাও খেয়াল রাখা চাই, বক্তা নয় তার কথার দিকে খেয়াল করা চাই। এ কারণে এখানে বেশি জোর দেয়া হয়। এটা একটা ভাল দিক। এখানে যেহেতু কোনো প্রকার নাম যশের উৎস থাকে না সে জন্য নাম ঘোষণা করা হয় না।

আওয়ার ইসলাম: যারা তাবলিগের সাথে সম্পর্ক রাখে না তাদের ব্যাপারে আপনার মতামত জানতে চাই!

মাওলানা লিয়াকত আলী: সম্পর্ক রাখছে না যারা তারা প্রধাণত দুই প্রকার। এক ধরণের হলো সম্পর্ক নেই বিধায় ভাল বুঝতে পারছে না, তাদের ভুল বোঝাবুঝি আছে সেই কারণে, আরেক প্রকার হলো তারা, যারা দীনের অন্যান্য কাজে মশগুল আছেন। কেউ তালিমে কেউ তাসনীফে কেউ বয়ানে বা অন্যভাবে দীনের কাজ করে যাচ্ছেন সে জন্য তাবলীগে যুক্ত হচ্ছেন না। সহানুভুতি আছে কিন্তু সময় দিতে পারছেন না।

আওয়ার ইসলাম: আর যারা বিপক্ষে অবস্থান নিচ্ছে তাদের ব্যপারে জানতে চাই ?

মাওলানা লিয়াকত আলী: যারা বিপক্ষে অবস্থান নিচ্ছে তারাও প্রধাণত দু’টো শ্রেণি। যারা তাবলিগ সম্পর্কে ভুল ধারণার কারণে না বুঝে বিরোধ করছে। আরেকটা শ্রেণি হচ্ছে যারা স্বার্থপর, নিজেদের স্বার্থে হানি হয় বলে তারা তাবলিগের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে।

আওয়ার ইসলাম: তাবলিগের ব্যাপক জাগরণের পিছনে বিশ্বব্যাপী কোন ধরণের কোরবানিটা বেশি উল্লেখযোগ্য?

মাওলানা লিয়াকত আলী: ব্যাপক জাগরণের পিছনে সব চেয়ে বড় অবদান হচ্ছে এই, যারা তাবলিগের কাজ করেন তারা নিঃস্বার্থভাবে করেন। নতুন যারা যুক্ত হয় তাদের থেকে কোনো প্রকার ফি বা চাঁদা ইত্যাদি নেয়া হয় না; বরং তাদের কীভাবে আরও সহায়তা করা যায় সে চেষ্টা করেন। অন্যান্য যতো সংগঠন এবং সংস্থা আছে, সেখানে দেখা যায় কর্মী বা সদস্য থেকে ফায়দা নেয়ার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু তাবলিগে কোনো প্রকার অর্থ ব্যয় করতে হয় না। এ নিঃস্বার্থ খেদমতের কারণে মানুষ তাবলিগের প্রতি এতো আগ্রহী এতো আকৃষ্ট।

আওয়ার ইসলাম: জনসাধারণের মসজিদমুখী হওয়ার ক্ষেত্রে তাবলিগের ভূমিকাকে কোন পর্যায়ে বিবেচনা করবেন?

মাওলানা লিয়াকত আলী: জনসাধারণের মসজিদমুখী হওয়ার ব্যাপারে তাবলিগের ভূমিকা অনেক বেশি! অনেক বেশি!! তাবলিগের কয়েকটা গাস্তের মধ্যে একটা গাস্ত হয় উমুমি গাস্ত, তা হচ্ছে নির্ধারিত দিনে জামাতবদ্ধ হয়ে এক একজন মানুষের কাছে গিয়ে দাওয়াত দেয়া। আরেকটা হচ্ছে ইনফেরাদি গাস্ত। একজন নির্দিষ্ট মানুষকে টার্গেট করা হয় যে অমুক মানুষটা মসজিদে কোনো দিন আসে না। তার পিছনে মেহনত করে করে তাকে তাশকিল করে আনা হয়। এভাবে একজন তাবলিগী ভাই তার পাশের ভাইকে মসজিদের সাথে জুড়িয়ে দেয়। তারা এলাকায় একটা জরিপ চালায়, এখানে কতটা ঘর আছে, কতগুলো মানুষ আছে, কোন কোন বাড়ি থেকে মানুষ মসজিদে আসে না। তাবলিগিরা তাদের ধারে ধারে গিয়ে তাশকিল করেন। মসজিদে আনার ক্ষেত্রে তাদেরকে উৎসাহ দেন।  

আওয়ার ইসলাম: যারা চাকুরিজীবি তারা তো স্থায়ী না, তাবলিগে সময় লাগানোর ক্ষেত্রে তাদেরকে কীভাবে দাওয়াত দেয়া হয় একটু বলবেন কী ?

মাওলানা লিয়াকত আলী: দেশে যত ধরণের মানুষ রয়েছে, মুবাল্লিগদের কাছে তার একটা চক তৈরি করা আছে, যেমন কিছু দিন আগে শুনলাম তাদের জরীপ অনুযায়ী বাংলাদেশে ৭৩ ধরণের মানুষ আছে। প্রত্যেক শ্রেণির উপর তারা আলাদা আলাদা করে মেহনত চালায়। চাকুরির আবার বিভিন্ন প্রকার আছে, কেউ সরকারী চাকুরি কেউ ব্যাংকে চাকুরি কেউ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে চাকুরি। এভাবে শ্রেণিভুক্ত করে চাকুরিজীবিদের জন্যও তাদের আলাদাভাবে জামাত ভাগ করা আছে। এভাবেই তারা ভাগ ভাগ করে চাকুরিজীবিদের মাঝে দীনের মেহনত করে যাচ্ছেন।

আওয়ার ইসলাম: মাওলানা ইলিয়াস রহ. এর আগে যেসমস্ত আকাবির মনীষীরা ছিলেন তারাও তো এ কাজের সূচনা করতে পারতেন, সেটা না হওয়ার কী কোনো কারণ হতে পারে?

মাওলানা লিয়াকত আলী: যে যুগে যে পদ্ধতিতে কার্যকর হবে এটা আল্লাহ তায়ালার বিশেষ মেহেরবানি যে সে কাজে একজনকে আল্লাহ তায়ালা তৈরি করেন। আগে যারা ছিলেন তারা তাদের যুগে যে পদ্ধতিতে কাজ হওয়া দরকার ছিল সে পদ্ধতিতে কাজ করেছেন। আর সে যুগে আল্লাহ তায়ালা ইলিয়াস রহ. এর মতো একজন মানুষকে সারাবিশ্বের জন্য দাঁড় করিয়ে দিয়েছেন। মোট কথা মৌলিক বিষয়ে তো সবার সমর্থন আছে।

আওয়ার ইসলাম: ইজতেমা বিরোধী তথাকথিত সুন্নীদের তাবলিগ বিরোধী ওরস বা সুন্নী এস্তেমা ইত্যাদির ব্যাপারে মুরব্বিদের কোনো পদ্বক্ষেপ আছে কী না?

মাওলানা লিয়াকত আলী: তাবলিগের কাজ হচ্ছে ইতিবাচক কাজ। নেতিবাচক কোনো পদক্ষেপ তারা নেন না। শুধু সুন্নী কেন আরও যত ধরণের বেদাাতী ও ইসলাম বিরোধী কাজকর্ম আছে কোনো ব্যাপারেই তাবলিগের মুরব্বিরা কোনো প্রকার পদক্ষেপ নেন না। কারণ তারা নসীহত করেন, দাওয়াত দেন। এর বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়াটা তাদের নীতির বিরুদ্ধে। এ জন্য তাবলিগে ইতিবাচকের পাশাপাশি নেতিবাচক পদক্ষেপ নিতে গেলে তো শক্তি লাগে। এখানে শক্তি প্রয়োগের কোনো সুযোগ নেই। শুধু নসীহতের মধ্যে তারা সীমাবদ্ধ।

আওয়ার ইসলাম: বিশ্ব ইজতেমার প্রভাব দেশে কতোটুকু কল্যাণ বয়ে আনে বলে মনে করেন?

মাওলানা লিয়াকত আলী: ইজতেমার প্রভাব তো দেশের মধ্যে অবশ্যই পড়ে। একটা হচ্ছে ইজতেমা যখন হয়, তখন সারাদেশে দ্বীনি আবহাওয়া তৈরী করে। মানুষের মধ্যে একটা আলাদা অনুভূতি জেগে ওঠে। তাছাড়া প্রধান মন্ত্রী বাণী দেন, বিরোধী দলীয় নেত্রী বাণী দেন, রাষ্ট্রপতি বাণী দেন, সর্বদলের লোকেরা যুক্ত থাকেন। এভাবে পুরো দেশের উপরে আলাদা প্রভাব পড়ে। আরেকটা হচ্ছে, যারা ইসলামের অনুসরণ করতে চায় বা ইসলামকে বিশ্বাস করে তাদের মধ্যে একটা আলাদা অনুভূতি জাগে। আরেকটা হচ্ছে ইজতেমার কারণে অনেক বিদেশী মেহমান এখানে আসে। আর বিদেশী মেহমান আসার কারণে দেশের অর্থনীতিতে অনেক প্রভাব পড়ে। অর্থনীতিতে অনেক সুফল বয়ে আনে। বিদেশীরা তো বিদেশী মুদ্রা নিয়ে আসেন, এতে যে কোনো দেশে পর্যটক বেশি হওয়া মানে দেশের অর্থনীতিতে সুফল আসা। সে জন্য বাংলাদেশে ইজতেমা উপলক্ষে বহুত পর্যটক আসে। এটা দেশের জন্য অনেক বড় ফায়দার কারণ।

আওয়ার ইসলাম: ছাত্রদের উদ্দেশ্যে তাবলিগ সংক্রান্ত কিছু নসীহত করলে ভাল হতো?

মাওলানা লিয়াকত আলী: ছাত্র তো কয়েক প্রকার, এক হল স্কুল কলেজের ছাত্র। তাদের জন্য তাবলিগ নেহায়েত জরুরি। তাদের তারবিয়ত এবং আমল আখলাক ঠিক করার জন্য তাবলিগ হচ্ছে অত্যন্ত কার্যকর একটা উপায়। তাবলিগের কারণে এখন অনেক স্কুল-কলেজের ছাত্র তারা এখন নামাজ-কালাম পড়ে আমল করে। এ জন্য তাদের যুক্ত থাকা বেশি প্রয়োজন। আর মাদরাসার ছাত্রদেরও তাবলিগে যুক্ত হওয়া এই কারণে প্রয়োজন যে, মাদরাসার মধ্যে একঘেয়েমি পরিবেশ থাকার কারণে এখান থেকে বাইরে গিয়ে আওয়ামের সঙ্গে মিশেও যে আমল সহিহ রাখতে হয় এটা তাদের একটা বড় শিক্ষা। বিশেষ করে আমাদের দারুর রাশাদ মাদরাসার ছাত্রদের আবার অন্য ব্যাপার। এই মাদরাসার ছাত্ররা আসে তাবলিগ থেকে। তারা তাবলিগে আগে থেকে জড়িত। এখানে আসার পর তারা চায় তাবলিগের পরিবেশ বিরাজ রাখতে। সে জন্য আমাদের মাদরাসার পক্ষ থেকে তাবলিগের প্রতি খুব গুরুত্ব দেয়া হয়। আর যারা আগে থেকে তাবলিগে যুক্ত তাদের সাথে যেন কোনো সম্পর্ক ছিন্ন না হয় সে চেষ্টাও করা হয়। আর যারা (ছাত্ররা) তাবলিগ থেকে আসেনি তাদেরও তাবলিগে যুক্ত করে দেয়া হয়। যাতে করে তাদের মধ্যে সাধারণ মানুষকে ইসলাহ করার যজবা পয়দা হয়। তবে হ্যাঁ, এদিকে খেয়াল করা উচিত, মুরব্বিরা সব সময় বলেন যে পড়া শুনায় যেন ব্যাঘাত না ঘটে। আর এভাবে তাবলিগে যুক্ত হওয়া দরকার। পরীক্ষার সময় যেন পড়াশোনার প্রতি তার বেশি মনোযোগ থাকে। এই দিকে খেয়াল করা দরকার।

আওয়ার ইসলাম: এখানে ‘রাশাদ একাডেমি’ নামে ষোল বছরের স্কুল-মাদরাসার সিলেবাসে যেসব ছাত্র অধ্যায়নরত তাদেরকে কি তাবলিগে পাঠানো হয়? 

মাওলানা লিয়াকত আলী: হ্যাঁ, তাদের নিয়মিত পাঠানো হয়। বড় যারা তাদের এ কাজের সাথে যুক্ত রাখা হয়। ইজতেমায় এ বিভাগে অধ্যয়নরত ছোট ছাত্রদের নেয়া হয় না।   

আওয়ার ইসলাম: ইলিয়াস রহ. বলেছেন, আমার ভয় হয়, না জানি এ কাজ আলেম থেকে জনসাধারণের আয়ত্বে চলে যায়, আর জাতির মধ্যে গোমরাহী ছড়িয়ে পড়ে, আপনি এটাকে কীভাবে দেখছেন ?

মাওলানা লিয়াকত আলী: এ জন্যই তো এ দাওয়াতের দায়িত্ব ওলামায়ে কেরামের উপর। ওলামায়ে কেরাম যদি যুক্ত হন তাহলে আওয়ামের হাতে যাবে না। আর যদি যুক্ত না হোন তখন যারা যুক্ত হন সাধারণ মানুষ তাদের হাতে চলে যাবে! এ জন্য তাবলিগের তো কোনো দোষ নেই। তারা তো সব সময় আলেমদের চান। আলেমরা এসে কাজ করবে। আর যে কোনো কাজ যারা সময় দেয় তাদের উপরে নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। আলেমরা সময় দিলে আলেমদের উপর নির্ভর থাকবে। 

আওয়ার ইসলাম: তারপরেও তো অনেক হক্কানী আলেম তাবলিগের বিভিন্ন দিক নিয়ে প্রশ্ন তোলেন, এটাকে কোন দৃষ্টিকোণ থেকে নেবেন ?

মাওলানা লিয়াকত আলী: হ্যা, প্রশ্ন করেন তা তো ঠিক কিন্তু হক্কানী আলেমরা যদি কাজে যুক্ত হন তখন এ খারাপগুলো থাকবে না। ওলামায়ে কেরাম যুক্ত যখন কম হন তখন তো (সাধারণ) তারা তাদের বুঝ অনুযায়ী কাজ করবে। এখন শুধু সমালোচনা করে তো কোনো সমাধান হবে না।

আওয়ার ইসলাম: বিশ্ব মানবতার হেদায়েতের জন্য ইজতেমা কতটুকু ভূমিকা রাখছে বলে মনে করেন?

মাওলানা লিয়াকত আলী: ইজতেমা তো একটা বাৎসরিক পোগ্রাম। এখানে আসল উদ্দেশ্য ছিল যারা তাবলিগের সঙ্গে আগে থেকে যুক্ত হয়েছে তাদের কিছু নির্দেশনা দেওয়া। এটা ছিল আসল উদ্দেশ্য। এখন হয়ে গেছে ব্যাপক। প্রথমে এভাবে ছিল। ইজতেমা উপলক্ষে অনেকে আসে, বয়ান হয়, তালিম হয়, সেগুলো অনুযায়ী আমল করে। এর দ্বারা মানুষের মধ্যে একটা চেতনা ফিরে আসে। অনেকে আছে এরকম, যারা আমল-আখলাকে খুব বেশি অভ্যস্থ বা আগ্রহী ছিল না, ইজতেমায় আসার পর তাদের মধ্যে একটা বড় ধরণের পরিবর্তন আসে। এত মানুষ যখন একত্রিত হয়ে নামাজ পড়েন, আমল করেন তখন সাধারণ মানুষের মধ্যে একটা প্রভাব পড়ে এ হিসেবে ইজতেমা দ্বারা হেদায়েতের ব্যাপক জাগরণ সৃষ্টি হয়। 

হাআমা/


সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ